ডেস্ক রিপোর্ট:: ভারতের বিভিন্ন কারাগারে আটক থাকা সব ট্রলার ও মৎস্যজীবীদের ফিরিয়ে আনা এবং তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী জেলেদের ৬৫ দিনের খাদ্য সহায়তা ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপকরণ সঠিকভাবে বিতরণসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে জেলে ও ট্রলার শ্রমিকদের সংগঠন।

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘ভারতে আটক ট্রলার শ্রমিক জেলেদের মুক্তি ও জেলেদের সহায়তা প্রকল্পে লুটপাট বন্ধের দাবি’তে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে সংগঠন দুইটির পক্ষ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ উপকূলীয় মৎস্য ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলা সমিতি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলা সমিতির সভাপতি ইসরাইল পণ্ডিত বলেন, গত বছরের ১৯ আগস্ট ও ২১ নভেম্বর দুইটি প্রলয়ঙ্করী জলোচ্ছ্বাস ও বন্যায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বহু জেলেকে উদ্ধার করে বিভিন্ন কারাগারে রাখে। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সরকারের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১০-১৫ বার আবেদন করেছি। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে ১২০ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু এখনো ১৮ জন উড়িষ্যার কারাগারে আটক রয়েছেন। তাদের মুক্তির জন্য স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিসেম্বর ২০২২-এ পত্র দিয়েছি। কিন্তু দিল্লীর বাংলাদেশ হাইকমিশনের অবহেলার কারণে দীর্ঘ ৪ মাস ধরে ১৮ জন জেলে এখনো মুক্তি পায়নি।

তিনি আরও বলেন, প্রলয়ঙ্করী বন্যায় যে সমস্ত জেলে মারা গেছেন তাদের পরিবার পরিজনকে যেন সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতা করা হয় এমন দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলা সমিতির সভাপতি ইসরাইল পণ্ডিতের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উপকূলীয় মৎস্য ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সিকদার, বাংলাদেশ উপকূলীয় মৎস্য ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান, রংপুর জেলা কমিটির নজরুল হক প্রমুখ।

উক্ত দুই সংগঠনের ৮ দফা দাবিগুলো হলো-

১. বিগত দিন থেকে যেসব মৎস্যজীবী জেলে তাদের ট্রলারসহ ভারতে আটক রয়েছেন তাদের দেশে ফিরেয়ে আনতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

২. মৎস্য বিভাগের সব পর্যায়ের প্রকল্পে মৎস্যজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি এবং জেলেদের ভিজিএফ বিতরণে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

৩. সব নদীর মোহনায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হবে, মৎস্যজীবী জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান ও চাকরির ব্যবস্থা করে সংখ্যা পর্যায়ক্রমে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে ও মৎস্যজীবী জেলেদের এফআইডি কার্ড সংশোধনে মৎস্যজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৪. মৎস্যজীবীদের জন্য মৎস্য ব্যাংক দিতে হবে- সাগর, নদী, হাওড়, মাছ চাষ, বিক্রি মৎস্যজীবীদের শ্রেণিবিভাজন করতে হবে ও মৎস্যজীবী জেলেদের নামে খাস ভূমি বরাদ্দ দিতে হবে। জলমহালের আয়তন ঠিক রেখে প্রকৃত মৎস্যজীবী জেলে সংগঠনের নামে বরাদ্দ দিতে হবে।

৫. মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে এফআইডি কার্ডধারী জেলেদের সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া আহরণে ব্যবস্থা করতে হবে। সাগরে ইলিশ মাছ ধরা বন্ধের সময় জেলেদের তালিকা নবায়ন করে সহায়তা দিতে হবে।

৬. সাগর, নদীতে মৎস্য আহরণে জলদস্যু ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে নিহত জেলে পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা, এফআইডি কার্ডধারী সব জেলেদের নামে জীবন বিমা চালু করতে হবে।

৭. ট্রলার শ্রমিক ও জেলেদের জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দকৃত মালামাল বণ্টনের নামে লুটপাট বন্ধের উদ্দেশে ট্রলার শ্রমিক প্রতিনিধি, নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড, নৌপুলিশ, মৎস্য বিভাগ ও শ্রম দপ্তরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।

৮. গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী ট্রলার শ্রমিক ও জেলেদের ৬৫ দিনের খাদ্য সহায়তা ও বিভিন্ন উপকরণ জেলেদের মাঝে সঠিকভাবে বিতরণ করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here