ডেস্ক রিপোর্ট::  রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামবাগ এলাকায় ঈদের ছুটিতে গত ১২ এপ্রিল একটি চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় চকবাজার থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চোর চক্রের দুই নারীসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

গ্রেপ্তার চোরদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্র চুরি, অবৈধ অস্ত্রের হাতবদল ও বিক্রির মতো চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। পরবর্তী সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচটি অস্ত্র ও এ ঘটনায় জড়িত আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, রাজীব হোসেন রানা (২৮), মো. শাহীন (৪০), আবুল হাসান সুজন (২৫), পারভেজ নুর (৩৮) ও মানিক চন্দ্র দাস (৩৬)। এ ঘটনায় জড়িত দুজন পলাতক রয়েছে।

রোববার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ।

তিনি বলেন, রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার থানার পূর্ব ইসলামবাগ এলাকার একটি বাড়িতে গত ১২ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে চুরির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে নেমে অভিযান চালিয়ে চুরির সঙ্গে দুই নারীসহ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই চক্রের মূলহোতা ২২ মামলার আসামি মামুন। মামুনের অন্যতম সহযোগী তার মা হাসিনা। তারা স্থানীয়ভাবে চোর হিসেবে পরিচিত।

চুরির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গিয়ে চক্র গড়ে তোলে মামুন। কারাগারে গড়ে তোলা ১০ থেকে ১২ জনের চক্রটি স্থানীয়ভাবে মামুন বাহিনী হিসেবে পরিচিত। তারা নানা কৌশলে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে চুরি করে আসছিল।

চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধারে আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে নেমে অস্ত্রের কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পায় তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মামুনের চক্রের একটি অংশের সদস্য রাজীব হোসেন রানাসহ চক্রের তিন সদস্য প্রায় এক বছর আগে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকার একটি বাসায় চুরি করে। কিন্তু রহস্যজনক হলেও সত্য যে, ওই ঘটনায় থানা পুলিশ কোনো অভিযোগ পায়নি। এর কারণ এই বাসা থেকেই টাকা পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কারের সঙ্গে চুরি হয়েছিল সংগ্রহে রাখা অবৈধ অস্ত্রও। ফলে এই অবৈধ অস্ত্রের মালিক শাহিন কোনো অভিযোগ করেননি।

পরে অস্ত্রের মালিক শাহিনকে গ্রেপ্তার করার পর গত ২২ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৫ দিন ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে পাঁচটি অস্ত্র ও ৩৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এই অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় শাহিনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, সুজনের কাছ থেকে দুটি, রানার কাছ থেকে একটি, মানিকের কাছ থেকে একটি এবং পারভেজের কাছ থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

অস্ত্র উদ্ধারের মামলায় গ্রেপ্তার রানার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা, সুজনের বিরুদ্ধে একটি, মানিকের বিরুদ্ধে চারটি ও পারভেজের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। বর্তমানে তারা পুলিশের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে রয়েছেন। এই ঘটনায় দুজন পলাতক রয়েছে।

গত এক বছরে চুরি করে পাওয়া অস্ত্রগুলো নানা কৌশলে হাত বদল হয় উল্লেখ করে অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ বলেন, মামুনের চক্রটি মূলত চুরির সঙ্গে জড়িত। সাধারণত: কোনো চক্র গড়ে ওঠে তখন তারা নানা সরঞ্জাম সংগ্রহ করে তখন তারা বড় ধরনের কাজ করে থাকে। তেমনি এই অস্ত্রগুলোর তেমন অপব্যবহারের সুযোগ ছিল। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তা হলো অস্ত্রগুলো একাধিকবার হাত বদল হয়েছে। কেনা-বেচা হয়েছে। তবে অস্ত্রগুলো কোনো ধরনের ব্যবহারের তথ্য পাইনি। অবৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের আগেই উদ্ধার করা হয়েছে।

অস্ত্রের প্রকৃত মালিক বৈধ নাকি অবৈধ জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, যার বাসা থেকে অস্ত্রগুলো চুরি হয়েছে, তিনি কোনো অভিযোগ করেননি। এমন কি আমাদের তদন্তে যখন গ্রেপ্তার হয়েছে তখন তিনি অস্ত্রের বৈধতার কোনো তথ্য দিতে পারেনি। অস্ত্রগুলো চুরি হওয়ার পরে তিন হাত বদল হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র তিনি কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন সেই বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here