[author ]নরসিংদী থেকে খন্দকার শাহিন ::[/author]

নরসিংদী:: নরসিংদীতে ঐতিহ্যবাহী বাবুরহাটে মাথার টুপি থেকে পকেটের রোমাল,সবই পাওয়া যায়। এটি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় হাট কাপড়ের খ্যাত। এই খ্যাতি এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশের বাজারে। বিদেশের সাথে পাল্লা দিকে এ অঞ্চলের কাপড়ের কদর বাড়ছে আড়ং অঞ্জন্স সহ বিভিন্ন ব্যন্ডিং কোম্পানী সহ  দেশের বৃহৎ ফ্যাশন হাউজ গুলোর কাছে। তাই আসছে ঈদ উপলক্ষে এখন ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছে নরসিংদীর বস্ত্রনগরীর কারীগররা। প্রতিমাসে এখানকার বিভিন্ন শিল্প কারখানায় উৎপাদিত হরেক রকমের প্রায় ৫০ হাজার গজ কাপড় আড়ং অঞ্জন্স সহ বিভিন্ন ব্যান্ডিং কোম্পানীর চাহিদা মিটাচ্ছে। রুচিশীল ও মান সম্পর্ন্ন কাপড় Narsingdi news (2)উৎপাদিত হওয়ায় এসব কোম্পানী গুলোতে দিন দিন বাড়চ্ছে এ অঞ্চলের কাপড়ের চাহিদা। আর ঈদ,পূজা সহ বিভিন্ন উৎসব গুলো ঘিরে এই চাহিদা  দিগুন হয়ে যায় ।

বাবুরহাটকে কেন্দ্র করে নরসিংদী জুড়ে গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক টেক্সটাইল, ড্রাইং, এমব্রয়টারীসহ সহায়ক শিল্প-কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৫ লাখ মানুষ। বছরের বেশিরভাগ সময় ব্যতিব্যসত্ম এসব শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা। একই সাথে ব্যসত্ম হাটের পাইকারী দোকানীরা। হাটের দিনগুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারী ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত থাকে হাটের অলিগলি। হাটের প্রায় ৫ হাজার দোকানে রয়েছে শাড়ি, লুঙ্গী, পাঞ্জাবী,ফতুয়া থ্রিপিছ, থান কাপড়, পর্দা ও সোফার কাপড়ের বিশাল সমাহার।

বাবুরহাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৫০০ বছর আগে ব্রহ্মপুত্র নদের পাশ ঘেঁষে গড়ে ওঠা বাবুরহাট এখন দেশের কাপড়ের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের হাট। সাধারণত সপ্তাহে শুক্র, শনি ও রোববার বসে হাট। থান কাপড়ের পাশাপাশি উৎপাদিত নাইট কুইন, দেশি জর্জেট, লেজার জর্জেট, পভলিন, ভয়েল, সুতি, জাপানি সিল্কসহ বিভিন্ন ধরনের থ্রি-পিসের সম্ভারে বাবুরহাট এখন বৈচিত্র্যময়। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক ভর্তি হয়ে এসব কাপড় চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, খুলনা, বগুড়া, হবিগঞ্জ, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এই হাট কে ঘিরে নরসিংদী জেলাসহ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে গড়ে উঠেছে কয়েক লাখ তাঁতকল। একইভাবে গড়ে উঠেছে কয়েকশত সহায়ক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। দশের নামীদামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাবুরহাটের ব্যবসায়ীরাও কাপড়ে এনেছেন আধুনিকতার আঙ্গিক। তাই শহর থেকে শুরু করে প্রতন্ত্য গ্রামেও দিন দিন বাড়ছে এই অঞ্চলে তৈরী কাপড়ের চাহিদা। একই সাথে অঞ্চলের শিল্প কারখানায় উৎপাদিত কাপড় এখন বিভিন্ন ব্যান্ডিং কোম্পানীর চাহিদা মিটাচ্ছে।

কারখানা মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়,আড়ং,অঞ্জন্স,শৈল্পিক ফ্যাসন,এম টেক্স,কিংশুক প্রথমা’র মতো বড় বড়  ব্যান্ডিং কোম্পানী গুলোর শাড়ী,পাঞ্জাবী,ফতুয়া,থ্রি-পিস বেডসিট,পর্দার কাপর সহ বিভিন্ন প্রোডাক্টের বেশির ভাগ কাপড় নরসিংদীর সেকারচর বাবুরহাট ও মাদবদীর আশাপাশ শিল্প কারখানা থেকে সরবরহ করা হয়। এসব কারখানায় গুনগত মান ঠিক রেখে কাপড় উৎপাদন করা প্রতিনিয়ত ফ্যাশন হাউজ ও ব্যান্ডিং কোম্পানীর কাছে এ অঞ্চলের কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে।

আড়ং ও অঞ্জন্স ফ্যাশন হাউজে গ্রে কাপর সরবরাহকারী আলামিন ফ্রেবিক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আল-আমিন রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আড়ং,অঞ্জন্স এ গ্রে কাপর সরবরাহ করে আসছি। তাদের চাহিদা অনুযায়ী উন্নত মানের গ্রে কাপড় সরবরাহ করা হয়। তারপর তাদের নিজস্ব ডিজাইন অনুযায়ী পোশাক তৈরী করে থাকেন। তিনি আরো জানায় এখানকার তৈরী কাপড় দিয়ে ব্যান্ডিং কোম্পানী গুলো মূলত পাঞ্জাবী,ফতুয়া,থ্রি-পিস বেডসিট,পর্দার কাপর সহ বিভিন্ন প্রোডাক্টের তৈরী করে থাকেন।

শুধু আলামিন ফ্রেবিক্সই নয়, মাদবদী শেকেরচরের শুভ উইভিং, ইসলাম উইভিং,মোসলেম উইভিং,ইসলাম উইভিং,হিরন উইভিংও ফ্যাশন হাউজ গুলোতে কাপড় সরবরাহ করে থাকেন। এদের মধ্যে আড়ং,অঞ্জন্স ,শৈল্পিক ফ্যাশন,এম টেক্স,কিংশুক প্রথমা’র অণ্যতম।

ব্যান্ডিং শোপ গুলোর চাহিদা মিটাতে বিদ্যুৎ চালিত কারখানার পাশাপাশি ব্যাসত্ম নরসিংদীর ডাঙ্গা ইউনিয়নের বরদিয়া গ্রামের তাঁত পলস্নী। দিনভর তাঁতের খট খট শব্দ। এইশব্দ হস্ত চালিত তাতের। নানা রং সুতার সংমিশ্রনে তৈরী করা হচ্ছে বাহারী রং এর পাঞ্জাবী,থ্রি পিস,সেলুয়ার কামিজ,শাড়ি, বেড সিট ,পর্দার কাপর সহ হরেক রকমের পোশাক।

তাঁত কল মালিক মো: আহসান মিয়া বলেন,ব্যান্ডিং কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী হাতের তৈরী (হ্যান্ডিক্রাফ্‌ট) চাঁদর,বিছানার কবার সহ সকল ধরনের বস্ত্র তৈরী করা হয়। যা আড়ং ও অঞ্জন্স এর মতো ব্যান্ডিং সোপ গুলোতে সরবরাহ করা হয়।

জজ ভূইয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফায়জুর রহমান ভূইয়া জুয়েল বলেন, শেকেরচর বাবুর হাটে এক সময় শুধু গ্রে কাপর বিক্রি হতো। এখন ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী সকল ধরনের কাপড় উৎপাদন করা হয়। আর এই শিল্পকে আধুনিকায়ন করতে মাদবদী সেকেরচর ও বাবুর হাটে গড়ে উছেছে সহস্রাধিক টেক্সটাইল, ড্রাইং, এমব্রয়টারীসহ সহায়ক শিল্প-কারখানা।

নরসিংদী চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা আল মামুন বলেন,সুতি কাপড়ের জন্য বাবুরহাটের খ্যাতি দেশ জুড়ে। তাই দেশের বড় বড় ফ্যাশন হাউজ গুলো নরসিংদীর তাঁত কল থেকে কাপর সংগ্রহ করে থাকেন। এতে একদিকে যেমন অর্থনিতিক প্রবৃদি বাড়ছে অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে পাড়ছে বস্ত্র শিল্প কারখানা। ফলে কমছে জেলার বেকার সমস্যা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here