মালিক উজ জামান, যশোর প্রতিনিধি ::

‘খালি পায়ে কাজে পল্লীর মা
আজ সন্তানের পায়ে জুতা জামা
সমাজের ধাঁচে ওর চোখে চশমা
ঘরে ফিরে দেখে গোয়াল নিয়ে মা
রান্নার পর স্নানের আগে গরু আখড়া
ঐ দুধ আর গাছের পাকা আছে রাখা
সুখের দিনে গাঁয়ের মাকে যায় না দেখা
প্রেমিক বধূর দাবির মুখে ‘ওরা দুরাত্মা’
বাংলার সমাজে পড়েছে এবার জোর নাড়া
পণ যত্নহীন মায়ের অধিকার হবে প্রতিষ্ঠা।

আটপৌরে জীবনযাত্রা মায়ের। জীবনভর শুধু দিয়েই যান, বিনিময়ে নেন না কিছুুই। সেই মায়ের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে নেওয়া হয় চারদিনের নানা আয়োজন।

এই আয়োজনে ছিল মাকে চিঠি লেখা, মায়ের ছবি আঁকা, মাকে নিয়ে গান গাওয়া, মাকে নিয়ে কথায় কথায় অনুভূতি প্রকাশ করা, যাতে হাজারো কথামালা। মাকে উপজীব্য করে নাটক মঞ্চায়ন। সেই মঞ্চায়নে ছিল বৃদ্ধাশ্রমে কী নিদারুন কষ্ট নিয়ে মায়ের জীবনযাপনের করুণ গল্পকথা।

এসব দেখে দর্শক সারিতে বসে থাকা মানুষের চোখের কোন ভিজিয়ে তোলে। বালিশ ও ঝুড়িতে বল খেলায় অংশ নিয়ে মায়েরা মন প্রাণ ভরে উপভোগ করেন তাদের জন্য এ আয়োজন। নানা আয়োজনে মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ, মাকে খুশি করতে গ্রহণ করা হয় চারদিনের বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শত শত মা উপভোগ করেন এই অনুষ্ঠান।

অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন পাঁচজন মা। শেষ দিনে আয়োজন করা হয় মায়েদের সম্মাননা প্রদানের। ১৪ বছর ধরে মায়েদের জন্য এমন সব আয়োজন করে আসছে যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠন শেকড়।

বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে শেকড় যশোরের উদ্যোগে রোববার শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মায়েদের সমাবেশ ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অ্যাঞ্জেলা গোমেজ।

প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য। স্বাগত বক্তৃতা করেন শেকড়’র সাধারণ সম্পাদক ও মা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের সদস্য সচিব রওশন আরা রাসু। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক হাবিবা শেফা ও যুগ্ম আহ্বায়ক অর্চনা বিশ্বাস।

ফুল দিয়ে ও উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা ক্রেস্ট দিয়ে মায়েদের বরণ করে নেওয়া হয়। অনুভূতি প্রকাশ করেন পাঁচজন মা। এ বছর সম্মাননা পাওয়া মায়েরা হচ্ছেন, রেবা রাণী সোম, জীবন নেছা, তৌহিদা পারভীন, তৈয়বা কামরুন নাহার এবং সুফিয়া খানম। অনুষ্ঠানে মাকে নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করেন কলামিস্ট আমিরুল ইসলাম রন্টু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হারুন অর রশিদ, কাসেদুজ্জামান সেলিম, অধ্যাপক ডক্টর শাহনাজ পারভীন, কলামিস্ট মাহমুদা রিনি, শিক্ষক শ্রাবনী সুর প্রমুখ।

মাকে চিঠি লেখা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ২৬ জন বিজয়ী শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেয়া হয়। মায়েদের বালিশ খেলা ও বল ঝুড়িতে ফেলা প্রতিযোগিতায় ছয়জন বিজয়ী মা এবং শিশুদের বেলুন ফোটানো প্রতিযোগিতায় তিনজন বিজয়ী হন। জয়তী সোসাইটির ষাটোর্ধ্ব মায়েদের পক্ষে তিনজন মা খেলায় অংশ নেন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি, গান ও নাচ পরিবেশন করেন জাহিদুল জাদু, কামরুল হাসান রিপন, শারমীন সাথী, শাহরিন সুলতানা নিশি, শহিদুল ইসলাম মনা, শরিফুল ইসলাম, সাথী ইসলাম, আদিবা কামাল, কানিজ ফাতেমা, শামসুন্নাহার প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংস্কৃতিক কর্মী অনুসূয়া ঘোষ।

এদিকে বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর যশোরের আয়োজনে রোববার আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিছুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইউসুফ মিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাঁচতে শেখার অ্যাঞ্জেলা গোমেজ, জয়তী সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের সুপার নাসরিন আক্তার ও ধারার নির্বাহী পরিচালক লিপিকা দাশ গুপ্তা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here