আমি বাগেরহাটের মেয়ে, বাগেরহাটের বউ। বাবা মা দুজনেই শিক্ষক । মায়ের চাকরির সুবাদে জন্ম ও বেড়ে ওঠা পিরোজপুরে। হিসাববিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করার পরে কষ্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্ট্যান্ট পড়েছি।
ক্যারিয়ারের শুরুটা গ্রামীন বাংকের সাথে, জুনিয়র অফিসার হিসাবে। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে উদ্যোক্তা হিসাবে আমার পথচলা শুরু। আমার উদ্যোগের নাম জলরঙ্ । সম্পূর্ণ দেশীয় ঐতিহ্যবাহী ফ্রেব্রিক টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ী ও মসলিন শাড়ীর উপরে হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে আমি কাজ করা শুরু করি।
দেশীয় পন্য এবং হ্যান্ডপেইন্ট দুইটাই আমার ভালো লাগার ও ভালবাসার ক্ষেত্র। যখন উদ্যোগটা শুরু করি তখন আমি একটি ইন্টারন্যাশনাল এনজিও তে ম্যানেজার, এডমিন ও ফাইনান্স হিসাবে কাজ করতাম।
শুরুর দিকে চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা চালিয়ে এসেছি। প্রথম দুই বছর আমি ব্যবসা থেকে কোন লাভ গ্রহন করতাম না। লাভ টা আবার পুনরায় ব্যবসায় বিনিয়োগ করতাম। মাত্র এক লাখ টাকা নিয়ে আমি আমার যাত্রা শুরু করি।
শুরুতে রাজশাহী সিল্ক ও মসলিন শাড়ীতে হ্যান্ড পেইন্ট করার পরিকল্পনা করি। পরে কাষ্টমারদের চাহিদা অনুযায়ী টাঙ্গাইল হাফ সিল্ক, সুতী ও কোটা শাড়িতেও কাজ করা শুরু করি। ধীরে ধীরে আর্টিষ্ট এর সংখ্যা বাড়ে।
শাড়ী ছেড়ে কামিজ ওড়নাতেও হ্যান্ডপেইন্ট করা শুরু করি। ২০১৯ সালের শুরুর দিক থেকেই চাকরির পাশাপাশি জলরঙ কে চালানো এবং এর কলেবর বৃদ্ধি করা আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
দিনে ২/৩ ঘন্টা ঘুমিয়ে সব দিক সামাল দিতে পারছিলাম না। অনেক চিন্তা ভাবনার পরে ১৪ বছরর চাকরিটা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কারন আমার সাথে জলরঙ এ যারা কাজ করতো তাদের রুটিরুজির দায়িত্বটা আমার উপরে বর্তায়, তাই আমি ব্যবসাটা ছেড়ে দিলে তারা বেকার হয়ে পড়ত।
আর ব্যবসাটা যত ছোট হোক সেটা আমার নিজের। এপ্রিল ২০১৯ থেকে শুরু হলো নতুন জীবন। আমার পরিবারে কেউ ব্যবসায়ী না হলেও সবাই আমাকে সাহস যুগিয়েছেন।
আমার স্বামী সবসময়ে আমার ক্যারিয়ার এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সবসেময়ে সহয়োগিতা করেছেন, পাশে থেকেছেন, এখনও পাশে আছেন।
চাকরি ছাড়ার পরে ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা বাড়িয়েছি, ফ্যাশন ডিজাইনের উপর পড়াশুনা করেছি, ই-কমার্স এর উপর নিজের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছি, জলরঙ এর ওয়েভ সাইট নিয়ে কাজ করছি। হ্যান্ড পেইন্ট প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে চাই, নতুন ফিউশন আনতে চাই, প্রোডাক্ট রেন্জ ও ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে চাই, যেতে চাই বহুদূর।
নারী উদ্যোক্তার খোঁজে গ্রুপটি ভালো লাগে। এখানে উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছেন উর্মি রহমান। উর্মি রহমান এবং নারী উদ্যোক্তার খোঁজে গ্রুপের জন্য শুভ কামনা রইল।
স্বপ্ন দেখি একদিন মানসম্মত দেশী পোষাক আর জলরঙ সমার্থক শব্দ হবে।