ছাবেদ সাথী

ছাবেদ সাথী :: মৃত্যুর ভয়ে পৃথিবীর মানুষ আজ দিশেহারা। বর্তমানে গোটা বিশ্বে মৃত্যুর যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তার নাম করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। এখন পর্যন্ত এ রোগে ৪৮ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আর এতে আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম পৃথিবীর অসংখ্য দেশের মানুষের মধ্যে মৃত্যুভয় জাগিয়ে তুলেছে কোভিড-১৯ রোগ। বাংলাদেশসহ ২০৫টি দেশে এ প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের  থাবা পড়েছে। আক্রান্তের চেয়ে বেশি মানুষের মনে জন্মেছে আতঙ্ক। মনের এই আতঙ্ক রোগকে ঠেকানোই এখন অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পৃথিবীর সব মানুষের ভেতর একধরনের চাপা আতঙ্ক কাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, খবরের কাগজে, অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো করোনাভাইরাসের খবরে একাকার। যে ধরনের মিডিয়া বা খবরের মাধ্যম আপনার উদ্বেগ, ভয় ও দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয়, সেগুলো এড়িয়ে চলুন। এ ক্ষেত্রে ফেসবুক সবচেয়ে বিপজ্জনক। তাই এ সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার সীমিত করুন। হরেক রকম অনির্ভরযোগ্য তথ্য আপনাকে আতঙ্কিত করে তুলতে পারে। আপনি আতঙ্কিত হলে চারপাশের মানুষ আপনার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে আতঙ্কিত হয়ে যাবে।

বিভিন্ন দেশের সরকার, প্রতিষ্ঠান ও জনগণ যখন করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য একযোগে কাজ করছে, তখন বাংলাদেশে করোনাভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্যসমৃদ্ধ গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এটি সামাজিকভাবে ভয়ংকর। বর্তমানে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের চেয়ে গুজব প্রতিরোধ করা মুখ্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, কোভিড-১৯ যেহেতু সংক্রামক, সেহেতু গুজবের কারণে ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। তাতে মানুষ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ভয়, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ যদি একই সঙ্গে আপনার মনকে গ্রাস করে এবং আপনার মন এই তিনটি নেতিবাচক অনুভূতির বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রতিরোধ–দেয়াল তুলতে না পারে, তবে আপনি যেকোনো সময় আতঙ্কিত হয়ে যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনার বিবেক, বুদ্ধি, বোধ, যুক্তি—কিছুই ঠিকঠাক কাজ করবে না। আর এসব বিষয় সঠিকভাবে কাজ না করলে আপনি সহজেই গুজবের শিকার হতে পারেন। যেকোনো বিষয়ে আপনি যদি আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকেন, স্থির থাকেন এবং সামগ্রিক বিষয়টা বোঝার জন্য নিজেকে সময় দেন, তবে গুজবে ও আতঙ্কে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

বিশ্বের বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ‘গুজব হলো একটি নির্দিষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে কমিউনিটির মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া একটি গল্প, যা সত্য-মিথ্যার মাপকাঠিতে যাচাইকৃত না।’ কোনো বিষয় নিয়ে একবার গুজব উঠলে তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত কোনো প্রচেষ্টার দরকার হয় না। কারণ, মানুষের মুখে মুখে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে গুজব করোনাভাইরাসের চেয়েও দ্রুত ছড়াতে সক্ষম। কোনো বিষয় নিয়ে মানুষ যখন আতঙ্কিত, ভীত ও দুশ্চিন্তায় থাকে, তখনই যেকোনো গুজব দ্রুত ছড়াতে সক্ষম হয়। কারণ, এই সময় মানুষের মন বাছবিচার না করে যেকোনো কিছু সহজেই বিশ্বাস করার জন্য উদ্‌গ্রীব থাকে। গুজব তৈরি ও ছড়ানোর জন্য দুটি উপাদান অবশ্যই একসঙ্গে থাকতে হয়। প্রথমত, যে ঘটনা বা বিষয়কে কেন্দ্র করে গুজব তৈরি হবে, সেই ঘটনা জনসাধারণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে। দ্বিতীয়ত, ওই ঘটনা সম্পর্কে জনসাধারণের কাছে পরিষ্কার কোনো ধারণা ও যথাযথ কোনো তথ্য থাকবে না।

আপনি যদি মনে করেন করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য পর্যাপ্ত সক্ষমতা আপনার হাতে নেই, তবে আপনি এই সময় অতিরিক্ত মানসিক চাপে ভুগতে পারেন। এ ধরনের মানসিক চাপ মোকাবিলা করার জন্য আপনি আপনার পরিবারকে এমনভাবে সময় দেবেন, যেন তাদের মধ্যে থাকা আতঙ্ক কমে আসে। পাশাপাশি আশপাশের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল যোগাযোগ বাড়াতে পারেন। এতে একটা গভীর মানবিক বন্ধন অনুভব করতে পারেন। এভাবে আপনার হাতে যতটুকু সক্ষমতা রয়েছে, ততটুকুর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন।

পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজন মোতাবেক শুকনো খাবার ও সাধারণ ওষুধের ব্যবস্থা করতে পারেন। এই সময় বেশি লোকের সমাগম এড়িয়ে বাড়ির ভেতর নিয়মিত নামাজ, প্রার্থনা ও ধ্যান করতে পারেন। এতে মন চাঙা থাকতে পারে।

অধিক জনসংখ্যার প্রভাব এবং অপ্রতুল চিকিৎসাব্যবস্থার কারণে করোনাভাইরাস নিয়ে আপনার মনে উদ্বেগ তৈরি হতে পারে। মূলত, ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা থেকেই মানুষের মনে উদ্বেগ তৈরি হয়। এই উদ্বেগ খুবই স্বাভাবিক। আপনার মনের ভেতর এ ধরনের উদ্বেগ কাজ করলে প্রথমেই সেই অনুভূতিকে স্বীকার করে নিন। দীর্ঘ একটি নিশ্বাস নিন। পাশাপাশি আপনার এই অনুভূতির প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান। কারণ, উদ্বেগের প্রতি আপনি যদি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান, তবে সেটি আপনার শরীরের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলবে।

যেমন: অতিরিক্ত ঘাম হবে, বুক ধড়ফড় করবে, অস্থিরতা ভর করবে ইত্যাদি। উদ্বেগ মোকাবিলা করার জন্য আপনি ঠিক যে পরিবেশে আছেন, সেই পরিবেশের ইতিবাচক কোনো বস্তু বা বিষয়ের প্রতি মনকে প্রবাহিত করুন। সময় কাটতে দিন। বর্তমান উদ্বেগ আপনার মন থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই চলে যাবে, যদি আপনি ওই সময়টুকু নিজের উদ্বেগের প্রতি নিরপেক্ষ থাকতে পারেন এবং নিজের অনুভূতির প্রতি নিজেই মমতাবোধ দেখাতে পারেন।

গুজব সংক্রান্ত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ যত বেশি উগ্র মতামত প্রদান করে, সেই পোস্ট বা ছবি বা ভিডিও তত বেশি ভাইরাল হয়। গবেষণাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তন, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়ে টুইটের উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এর মাঝে যে সকল টুইটে ‘moral-emotional’ শব্দ, (যেমনঃ Hate) ছিল, সে সকল টুইটের রিটুইট হবার সম্ভাবনা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ১৯% এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ২৯% বেড়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গঠনমূলক আলোচনার সুযোগ কমে যাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যার মতামত যত বেশি উগ্র, তার কথার দাম তত বেশি।

এর ফলে উগ্র মতবাদ, ভুয়া খবর, গুজব ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ওয়েবসাইটগুলো এ ধরণের কন্টেন্টের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, এ ধরণের কন্টেন্টের দায়ভার মাধ্যমগুলির ওপর বর্তায়ও না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিটি ডিসেন্সি এক্টের ধারা ২৩০ অনুযায়ী কোন ওয়েবসাইট সেই ওয়েবসাইটের ব্যবহারকারীর প্রদত্ত কোন পোস্টের জন্য দায়বদ্ধ নয়। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটগুলো শুধুই প্ল্যাটফর্ম, পাবলিশার নয়। এই আইনটি করা হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে, তখনও ইন্টারনেটের ব্যাপ্তি এত বিশাল ছিল না।

কিন্তু পিউ রিসার্চ ইন্সটিটিউটের গবেষণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ৬৮% মানুষের জন্য খবরের অন্যতম মূল উৎস হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যদিও এর মাঝে ৫৭% মানুষ মনে করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খবর অমূলক। কিন্তু বাকি ৪২% এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খবরকে সঠিক মনে করাও একটি বিশাল সমস্যা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপ্তি বহুগুণে বেড়ে গেছে। এই ওয়েবসাইটগুলো এখন খবরের অন্যতম উৎস। তাই, তাদের ওয়েবসাইটে কী ধরণের কন্টেন্ট যাচ্ছে, সে ব্যাপারে তাদের অবশ্যই ওয়াকিবহাল হতে হবে।

অবশ্য কমিউনিটি ডিসেন্সি এক্টে বলা আছে ওয়েবসাইটগুলো যদি কোন কন্টেন্টকে আপত্তিজনক মনে করে, তবে তারা সেগুলো সরিয়ে ফেলতে পারে। সেই কাজটি বেশ কঠিন। কারণ, কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে স্বভাবতই মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার বিষয়টি উঠে আসবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকারের একটি।

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে ইতোমধ্যেই উগ্র জাতীয়তাবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, দাঙ্গা, এমনকি জাতিগত নিধনও সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশে রামুতে বৌদ্ধ বিহারে হামলার আগে ফেসবুক থেকেই গুজব ছড়ানো হয়েছিল। শ্রীলঙ্কাতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ করতে সরকার কিছুদিনের জন্য ফেসবুক বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল। জাতিসংঘের মায়ানমার বিষয়ক তদন্তকারী ইয়াংঘি লি বলেছিলেন যে ফেসবুক ব্যবহার করে মায়ানমারের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়েছিল ও আক্রমণ করেছিল উগ্রপন্থী বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা।

জনসাধারণের অতি উৎসাহ, ফ্যান্টাসি, যৌন অবদমন ও হতাশা, প্রতিশোধপরায়ণ অনুভূতির প্রতিফলন, ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ, সুপ্ত ইচ্ছা ও প্রত্যাশার প্রতিফলন, সমসাময়িক ভয় ও উদ্বেগকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের গুজব তৈরি হয় এবং ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া মানুষ যে সমাজে বাস করে, সেই সমাজের সামাজিক অবকাঠামো বা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (থানা, আইন, আদালত ইত্যাদি) ওপর মানুষের আস্থা না থাকলে, মানুষের সঙ্গে মানুষের মানবিক সম্পর্ক না থাকলে, সেই সমাজের মানুষের যেকোনো গুজবে সহজেই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

গুজব বাংলাদেশের একটি পরিচিত বিষয়। কারণে-অকারণে এখানে গুজব তৈরি হয়। স্বপ্নে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির ফর্মুলা পাওয়া, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে থানকুনিপাতার ব্যবহার ইত্যাদি গুজবের জ্বলন্ত উদাহরণ, যেগুলোর সত্যতা না থাকা সত্ত্বেও মানুষ বিশ্বাস করেছে এবং হয়তো ভবিষ্যতেও করবে।

এ ধরনের গুজব ও আতঙ্ক থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য যে বিষয় এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি, তা হলো এসবের বিপরীতে ‘মেন্টাল ইমিউন সিস্টেম’ বা মানসিকভাবে প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলা। নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি আলাদাভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এই সময় আপনার মানসিক স্বাস্থ্য যত বেশি ভালো থাকবে, আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তত বেশি ভালো কাজ করবে। তখন আপনার মন সঠিকভাবে সব ধরনের খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। চিকিৎসাবিজ্ঞান তা–ই বলে।

করোনাভাইরাস নিয়ে ভয়, উদ্বেগ, মানসিক চাপ, আতঙ্ক মানুষের মনে বাড়তে থাকলে এবং করোনাভাইরাস–সম্পর্কিত সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্য মানুষের কাছে না পৌঁছালে বিভিন্ন ধরনের গুজব বাজারে আসবে এবং মানুষ গণহারে তাতে আক্রান্ত হবে। তাই আমাদের একদিকে ভয়, উদ্বেগ, মানসিক চাপ ও আতঙ্ককে মানসিকভাবে সামাল দিতে হবে। অন্যদিকে অনলাইন ও অফলাইনে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার তথ্য থেকে নির্ভরযোগ্য তথ্যগুলো বাছাই করতে হবে। সব ধরনের তথ্যে প্রভাবিত হওয়া যাবে না।

করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে আপনার মনে ভয়, মানসিক চাপ, উদ্বেগ কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। যৌক্তিক পর্যায়ের ভয়, চাপ, উদ্বেগ আপনার মস্তিষ্ক/মনকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করবে। অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত নেতিবাচক আবেগ (বেশি ভয়), নেতিবাচক অনুভূতি (বেশি দ্বিধা-দ্বন্দ্ব), নেতিবাচক চিন্তায় (আমাদের কিছুই করার নেই ধরনের) আপনি যত বেশি আক্রান্ত হবেন, তত বেশি গুজব ও আতঙ্কে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

চলমান অথবা আসন্ন বিপদকে কেন্দ্র করে মানুষের মনে দুই ধরনের ভয় উৎপন্ন হয়। একটি হলো যৌক্তিক ভয়, অন্যটি হলো অযৌক্তিক ভয়। যৌক্তিক ভয় আমাদের মন ও শরীরকে করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত করবে। অন্যদিকে অযৌক্তিক ভয় আমাদের ভেতর নেতিবাচক আবেগ ও আচরণ তৈরি করবে। মন ও শরীরকে দুর্বল করে ফেলবে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য না পেলে মানুষের মনে অযৌক্তিক ভয় বেশি কাজ করবে। অযৌক্তিক ভয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গুজব ছড়াবে। গুজব যেকোনো পরিস্থিতিকে খুব সহজেই ভয়াবহতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। চারপাশে বিভিন্ন গুজব এর মধ্যেই তৈরি হয়েছে। সুতরাং অযৌক্তিক ভয় ও গুজব প্রতিরোধের জন্য করোনাভাইরাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন চিকিৎসক ও রোগ বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে। অথবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে।

করোনাভাইরাস সম্পর্কে মৌলিক তথ্যগুলো যদি আপনার কাছে থাকে, তবে এ সময় বেশি তথ্য আপনার দরকার নেই। কারণ, বেশি তথ্য (ইতিবাচক/নেতিবাচক) নিলে তা আপনার মনকে দুর্বল করে দিতে পারে। আশপাশের আত্মীয়স্বজন ও কমিউনিটির মানুষের সঙ্গে নিরাপদ উপায়ে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এতে সবার মধ্যে যোগাযোগ ও হৃদ্যতা বাড়ে এবং সবাই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো আত্মবিশ্বাস পায়। পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের করোনাভাইরাস সম্পর্কে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য জানাতে হবে। এ সময় তাদের প্রতি ভালোবাসা ও যত্নশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিতে হবে, যাতে তারা আতঙ্কিত না হয়।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক। সম্পাদক-বাংলাপ্রেস ডটকম  
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here