সঞ্জিব দাস।
গলাচিপা: পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার মান্তা সমপ্রদায়। ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠি। পোশায় এরা জেলে । তাদের স্থায়ী কোন বসবাস নেই। তাই নৌকায়ই এদের বসবাস করতে হয়। জন্ম থেকে মৃত্যু – ওই নৌকায়।
নিজ দেশে বাস করেও যেন এরা পরবাসী। চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা, সরকারি বিভিন্ন সাহায্য- সব নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাদের কানে পৌছায় না কোন ঘোষনা কিংবা নির্দেশনা। এ কারনে ছোট ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে লেখাপড়া শেখানোর বদলে ওদেরকে অভিজ্ঞ জেলে হিসেবে তৈরী করার জন্য জাল ও বৈঠা বাওয়ানোর প্রশিক্ষন দেয়া হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগেই ছেলে মেয়েদের বিবাহ দেয়।
আবার জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি সম্পর্কে না বোঝার কারনে অল্প বয়সে মা হন। সরেজমিনে পটুয়াখালীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরমোন্তাজ স্লুইজের খাল, গহিনখালী খাল ও কোড়ালিয়া খালে গিয়ে মান্তা সমপ্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমনি তথ্য পাওয়া গেছে। উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার সড়ক পথে গহিন খাল। সেখানে প্রায় ৫০ টি মান্তা পরিবারের বাস। ওই খালেই দেখা হয় কাঞ্চন হাওলাদারের সঙ্গে। দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে সহ ছয় সদস্যের সংসার তার। মাছ ধরে যা আয় করে তা দিয়েই চলে তার সংসার।
এসময় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কাঞ্চন হাওলাদার বলেন, নদীতে মাছ ধরা আমাদের পেশা ও নেশা। ঘরবাড়ী নেই , জায়গা জমি নেই। তাই নৌকায় বসবাস। খাওয়া দাওয়া ঘুম সব কিছুই নৌকায়। ঘর বাড়ি না থাকায় সরকারি কোন সুযোগ সুবিধাও আমাগো কপালে জোটে না। হুনছিলাম সরকার নাকি জাইল্লাগো চাল দেয়। কিন্তুু ৩০ বছর ধইরা নদীতে মাছ ধরলেও আমরা ঐ চাল পাই না।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিষয়ে জানা আছে কিনা জানতে চাইলে, কাঞ্চন হাওলাদারের স্ত্রী নূর জাহান বেগম বলেন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ এডা আবার কী ? আগে তো কোন দিন হুনি নাই। আমাগোরে কেউ এই বিষয়ে কিছু কয়ও নাই। ওই খালের আর এক বাসিন্দা ফোরকান মিয়া বলেন, আমাগো ভোটার আইডি কার্ড নাই। জাইল্লা কার্ডও নাই। এইয়ার লাইগ্যা সরকারি কোন কিছু আমরা পাই না। সরকারি কিছু পাইতে অইলে নাকি আইডি কার্ড লাগে।
ফোরকানের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, আমগো রোগ বালাই অইলে পোলা মাইয়ার চিকিৎসা করাইতে পারি না। গর্ভবতী অবস্থায় বুদ্ধি পরামর্শ ও সরকারি কোন চিকিৎসার সু ব্যবস্থা পাই না। জানা গেছে, রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ স্লুইজ খাল, গইন খালী খাল ও কোরালিয়া খালে প্রায় পাঁচ শতাধিক মান্তা জণগোষ্ঠির বসবাস।
এরা বুড়া গৌরাঙ্গ, আগুন মুখা, দারছিরা, রামনাবাধ, তেতুলিয়া নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে।
সরেজমিন চরমোন্তাজ স্লুইজ খালে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় তিনশত মান্তা পরিবার বসবাস করেন। এরা সবাই নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।