আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :: লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভুটান থেকে আমদানি করা পাথর নিয়ে চালক ফরমান আলী ঝিনাইদহের মধুপুর যাচ্ছিলেন। গত শুক্রবার বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে ওই চালক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।
কিন্তু আদিতমারী উপজেলার বুড়িরহাট বাজার পার হওয়ার পরেই বসিনটারী নামক এলাকায় মহাসড়কের ডান দিকে তার ট্রাকটি উল্টে পড়ে। হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও তাকে উল্টো স্থানীয়দের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। ট্রাকেরও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত তিনদিন ধরে তিনি ট্রাকের সহকারী চালকসহ ওই এলাকায় যানজটে আটকা পড়ে আছেন।
মহাসড়ক পুনঃনির্মাণের নামে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার নির্মাণাধীন স্বর্ণামতি সেতু হতে একই উপজেলার বুড়িরহাট বাজারের সামনে থেকে এ মহাসড়কের মাত্র দুই কিলোমিটার এলাকা পার হতে একজন চালকের তিন থেকে চারদিন পর্যন্ত সময় লাগছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দরদিয়ে ভারতে রফতানির জন্য ঢাকা থেকে ঝুটকাপড় বোঝাই ট্রাক নিয়ে চালক আনারুল ইসলাম তিন থেকে একই এলাকায় যানজটে আটকা পড়ে আছেন। শুধু এ দুই ট্রাক চালকই নন; তাদের মতো আমদানি-রফতানি পণ্য বোঝাই ও খালি ট্রাকসহ কয়েকশ ট্রাক আটকা পড়ে মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে এ দুই কিলোমিটার এলাকায়।
আদিতমারী উপজেলার বুড়ির বাজারের সামনে থেকে একই উপজেলার স্বর্ণামতি নদীর উপর নির্মাণাধীন স্বর্ণামতি সড়ক সেতুর পশ্চিমতীর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার মহাসড়ক পুনঃ নির্মাণ কাজের কারণে এ মহাদূর্ভোগে পড়েছেন সবধরনের যানবাহন চালক ও যাত্রীরা। অনেক কষ্টে বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারলেও রোগী পরিবহনে এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের কোন পরিবহন চলাচলের সুযোগ নেই।
ট্রাক চালকদের অভিযোগ, পুনঃনির্মাণাধীন মহাসড়কের কর্দমাক্ত গর্তে ফেঁসে যাওয়া ট্রাক পার করে দিতে ঠিকাদারের এক্সেভেটর দিয়ে ঠেলে দিয়ে ট্রাক প্রতি ২শ থেকে ৩’শ টাকা পর্যন্ত বকশিস নেওয়া হচ্ছে। টাকার ভাগাভাগি নিয়ে মারামারির ঘটনায় শনিবার দুপুরে স্থানীয় ফারুক নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি স্বীকার করেছেন আদিতমারী থানার ও সি হরেশ্বর রায়।
লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার নির্মাণাধীন স্বর্ণামতি সড়ক সেতুর পশ্চিম দিকে ১ হাজার মিটার ও পূর্ব দিকে ৩১৮ মিটার মহাসড়ক পুনঃনির্মাণের জন্য ব্যয় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আর কাজের ঠিকাদার নিযুক্ত হন মেসার্স আমিনুল হক ও বিসমিল্লাহ বর্ষণ নামে জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর মাসে মহাসড়কটির পুনঃনির্মাণ কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে রাস্তার উপরের অংশে বালির পরিবর্তে মাটি মিশ্রিত বালু ব্যবহার করায় চলতি বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টিতে তা কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কাঁদায় আটকে যাচ্ছে গাড়ীর চাকা, এত দূর্ঘটনারও শিকার হচ্ছে যানবাহনগুলো।
ট্রাক চালক ফরমান আলী বলেন, ‘রাস্তার বেহাল অবস্থায় বুড়িমারী স’লবন্দরগামী একটি ট্রাককে সাইড দিতে গিয়ে বসিনটারী নামক স্থানে আমার পাথরবোঝাই ট্রাকটি উল্টে যায়। এতে সবমিলে আমার প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মহাসড়ক ভালো না হলে এ পথে ট্রাক নিয়ে আর কখনও আসা যাবে না।’
আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রোকনুজ্জামান বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার মহাসড়ক পুনঃনির্মাণ কাজ নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের কোন শেষ নেই। বিষয়টি লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের এম.পি ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ মহোদয়কে জানানো হয়েছে।’
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগকে সার্বক্ষনিক উপস্থিত থেকে বালু ও খোয়া দিয়ে মহাসড়ক পুনঃনির্মাণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরো বলেন, যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নিয়ে খুব দ্রুততার সাথে কাজ শুরু হবে।
লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমানের কাছে মাটি মিশ্রিত বালু দিয়ে মহাসড়ক পুনঃনির্মাণ কাজের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি রাস্তায় কাঁদা জমে রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের কথা স্বীকার করে বলেন, মাটি মিশ্রিত বালু এ রাস্তায় না ফেলানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন বৃষ্টির কারনে মাটি মিশ্রিত বালু ফেলার কারনে রাস্তায় কাঁদা হয়েছে বলে জানান। তিনি আরো বলেন, ঠিকাদারকে আকাশ ভাল হলেই তা অপসারণ করতে বলা হবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বিকাশ চন্দ্র এর মুঠোফোনে শনিবার বিকেলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরক্ষনেই তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।