ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, এখনও সময় আছে জনগণের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন।

তিনি আরো বলেন, এমনিতেই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। এর পরও ভুল পথে গেলে বিচ্ছিন্নতার আরো গভীরে চলে যাবেন। তখন ক্রেন দিয়ে টেনে তুলতে হবে।

বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাবেক ফুটবলারদের বিএনপিতে যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, দেশে এখন যে সরকার আছে, সে সরকার বৈধ নয়; সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক সরকার। তারা জোর করে ক্ষমতায় আছে। গায়ের জোরে তারা যে সকল কর্মকা- করছে, তাও অবৈধ। আর এ জন্য একদিন তাদের জবাব দিতে হবে। যারা আজীবন জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায় তাদের পরিণতি অত্যন্ত খারাপ হয়।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থেকে জাতিকে বিভক্ত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার দেশের জন্য কাজ করে না। তারা কেবল নামফলক লাগায় আর দখলবাজি নিয়েই ব্যস্ত থাকে। এ অবস্থা চললে দেশের উন্নয়ন হবে না। এ থেকে মুক্ত হতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সীমান্তে হত্যা হলে সরকারের প্রতিবাদ করার সাহস নেই। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে, ক্ষমতায় থাকার জন্য কীভাবে বিএনপিকে ধ্বংস করা যায়।

সরকার নির্যাতন চালাচ্ছে- এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরে আর কোনো সরকারের আমলে এতো মানুষকে হত্যা করা হয়নি। গত ৩ মাসে ৩ শ ৪ জনকে হত্যা এবং ৫৬ জনকে গুম করা হয়েছে। এই খুন, গুম, হত্যা বন্ধ করতে প্রয়োজন সুষ্ঠু, সুন্দর ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ।

আওয়ামী লীগের আমলে আইনের শাসন নেই। বিচার বিভাগে চলছে চরম অনিয়ম। সরকারের নির্দেশে কাজ করছেন বিচারকরা। সিভিল প্রশাসনেও যোগ্য ব্যক্তিদের ওএসডি করে রাখা হয়েছে। আর অযোগ্য ব্যক্তিদের দলীয় বিবেচনায় পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনকেও দলীয়করণ করা হয়েছে, – অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাকে একটি বিরাট ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে বিডিআর বিদ্রোহের প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ না হলেও একদিন তা প্রকাশিত হবেই। তখন এর সুবিচারও হবে।

তিনি বলেন, বহির্বিশ্বে আজ দেশের কোনো সুনাম নেই। সেই সুনাম, গণতন্ত্র, সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য ‘অবৈধ’ সরকারকে বিদায় নিতে হবে এবং আগামী দিনে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দেশে নির্বাচন হতে হবে। এ লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণ বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।

জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচন এক নয়। জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হলেও উপজেলা নির্বাচনে তা হয় না।

তিনি বলেন, প্রথম দুই দফা উপজেলা নির্বাচনে ভরাডুবির পর প্রধানমন্ত্রী আরো কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলাফল বিএনপির পক্ষে যাওয়ায় তাদের গায়ে জ্বালা ধরে গেছে। সিল মেরে জোর করে ক্ষমতায় থাকাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য। এ জন্য উপজেলা নির্বাচনে দখল উৎসবে মেতে উঠেছেন তারা।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, নির্বাচনে এখনও দখলবাজি চলছে। তার পরও আমাদের অবস্থান ভালো। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এর প্রতিফলন ঘটবে।

বিএনপিতে যোগ দেওয়া খেলোয়াড়দের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, সব ক্ষেত্রে দলীয়করণ আর দুর্নীতির মধ্য দিয়ে দেশ চলছে। ক্রীড়াঙ্গনেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এতে ক্রীড়ার মান নষ্ট হয়েছে। দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে খেলোয়াড়দের বিএনপিতে যোগদান দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করবে।

এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে সাবেক ফুটবলার ও ক্রীড়া সংগঠকরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন।

বিএনপিতে যোগ দেওয়া ফুটবলাররা হলেন- বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মো. আমিনুল হক, সাবেক ফুটবলার ইমতিয়াজ আহমেদ নাকিব, মাসুদ রানা, মিজানুর রহমান ডন, মেসবাহ উদ্দিন, আনামুল হক, অরূপ কুমার, জিয়াউর রহমান, মো. উজ্জল, শাকিল আহমেদ, মাসুদ করীম, এ এন এম মাহিদ উদ্দিন ভূইয়া। এ ছাড়া ক্রীড়া সংগঠক আলহাজ কাজী শামীম তারেক, সালাহউদ্দিন হায়দার খোকন, জিয়াউর রহমান (তপু), বজলুর রহমান একই সময়ে বিএনপিতে যোগ দেন।

যোগদান পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় সাবেক ফুটবলার মেজবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতির দুঃসময়ে আমরা নতুন-পুরনো খেলোয়াড়রা একত্রিত হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাই। ফেডারেশন নষ্ট হয়ে গেছে। সেখানে এখন অস্ত্রের মুখে সব কাজ হয়। শুধু মাঠে নয়, রাজপথেও থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

আমিনুল হক বলেন, এই দিনটি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। দেশের ক্রীড়াজগত আজ কলুষিত হয়ে গেছে। এই অন্যায় দূর করতে চাই। এ জন্য খেলার মাঠে যেমন পরিশ্রম করেছি তেমনি রাজনীতিতে এসে ক্রীড়াজগতের জন্য কিছু করতে চাই। অবৈধ সরকারের অগণতান্ত্রিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা দিয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।

ফুটবলারদের যোগদান অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, ফজলুর রহমান পটল প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here