মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান, গবেষণা পরিচালক, ডরপ এবং সকলের জন্য পানি ও স্যানিটেশন (এসডব্লিউএ) আন্তর্জাতিক ফ্লাটফর্ম -এর দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি।

এক অদৃশ্য দূর্যোগ মোকাবেলাকে কেন্দ্র করে ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট প্রনয়ন এবং ঘোষিত হলো । সবার মনে, কি হবে? কি হবে? প্রশ্ন। নতুনভাবে এবার সংসদে পেশ হলো ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট। অর্থমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর অর্থমন্ত্রনালয়ের প্রনয়নকৃত প্রমান্যচিত্র ও পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে ৩০ মিনিটের মধ্যে পেশ হয়ে গেলো বাজেট। আমার ধারনা, সবার নজর ছিলো স্বাস্থ্য বাজেটের ওপর। কত হয় এবারের স্বাস্থ্য বাজেট? মাস্ক, পিপিইসহ হাসপাতালের জন্য কত বরাদ্দ ইত্যাদি। যেহেতু বাজেট হচ্ছে সরকারের সংখাগত বাৎসরিক পরিকল্পনা, তবে বরাদ্দের প্রায় খাতেই এবার দেখা গেছে অদৃশ্য জীবননাশক রোগ কভিড-১৯ থেকে আত্মরক্ষাকে কেন্দ্র করে।

এবারের বাজেট বিগত বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ বাজেট! কিন্তু জনপ্রতি হিসাব করলে ১৬ কোটি মানুষের দেশে প্রতিজনের জন্য বার্ষিক বরাদ্দ মাত্র ৩৫৫০০/- টাকা হয়। যদিও আমাদের বাজেট, মানুষ কেন্দ্রিক প্রনয়ন হয়না, হয় সরকারের ব্যায় নির্ধারন করে, বা অন্যভাবে বলা যায় খরচ কি হবে তার ওপর এবং প্রকল্প প্রনয়ন করে। যেহেতু এমন একটা সময় আমরা পার করছি যখন ‘জীবন এবং জীবিকা’র অগ্রধীকার নিয়ে নানা বিতর্ক, অর্থাৎ মুরগি আগে, না মুরগির ডিম আগে! তখন জনগনের চাহিদা মাফিক বা জনঅংশগ্রহনমূলক বাজেট তৈরী করার কথা আশা করে লাভ নাই। দরিদ্রদের সংখা বেড়েই চলছে। কর্ম হারানোর শঙ্কায় অনেকে বিপর্যস্ত। আগামীতে কিভাবে প্রস্তাবিত বিশাল বাজেট ঘাটতির পূরন হবে, তা নিয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে।

এ ছাড়া দুরবৃত্তায়ন, লুটপাট যাতে না হয়, সেজন্য বাজেট বরাদ্দকে জনগনের সামনে বার বার তুলে ধরতে হবে। গরীবি দূরীকরণে বাজেটের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দরকার। ২০১৯ সালের আন্তর্জাতিক বাজেট কর্মসূচি সংস্থার তালিকায় বাংলাদেশ বাজেট প্রনয়নের স্বচ্ছতার মাপকাঠিতে ৪১ থেকে নেমে ৩৬ নম্বরে স্হান পেয়েছে।

এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ খাতকে গুরুত্ব দেয়া হলেও পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন খাতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারি প্রতিরোধ হিসেবে বলা হযেছে বার বার সাবান- পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া৷ যার জন্য দরকার নিরাপদ পানি। অথচ ২০১৭ সালের জেএমপি তথ্যমতে বাংলাদেশের মাত্র ৫৬ শতাংশ মানুষ নিরাপদ ব্যবস্থাপনাভিত্তিক পানির আওতায়। অর্থ্যাৎ প্রায় অর্ধেক মানুষ পানির সুবিধা পাচ্ছেনা। অথচ এই দুঃসময়ে নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা অত্যন্ত জরুরী যাতে মানুষ করোনা থেকে আত্মরক্ষা করনে সাবান – পানি দিয়ে হাতধুতে পারে। সুতরাং পানির জন্য প্রয়োজন বাজেট বরাদ্দ। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে পিছিয়ে পড়া গ্রামাঞ্চল, চর, পার্বত্য অঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয়তার নিরিখেই অধিক অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় এ খাতকে এবার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক প্রকল্পের জন্য সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদে অর্থ বরাদ্দ প্রস্তাবিত বাজেটে সংযোজন করার জন্য দাবি জানাচ্ছি। জনঅংশগ্রহনমুলক বাজেট না হলেও, অন্তত ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জনগন বাজেট বরাদ্দের উপকার যাতে পায়।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে দেশের ৪৯তম ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here