সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার-মেহেরুন রুনির একমাত্র পুত্র মাহিদ সরওয়ার মেঘের আকাশ এখনও মেঘাচ্ছন্ন। তার জীবনে যে বিপর্র্যয় নেমে এসেছে তা এখনও সে বুঝতে পারছে না। তবে এটা বুঝতে পারছে, তার বাবা-মা নেই। আঙ্কেলরা তাদেরকে মেরে ফেলেছে। বাবা-মা আর কোনদিন তাকে আদর করবে না। আর কোনদিন তাদের দেখতে পাবে না- এটা অবশ্য এখনও তেমনভাবে বুঝতে পারছে না। রক্তপাতময় মৃত্যুর ভয়াবহতা দেখার পর সে ভীষণ ভয় পেয়েছে। মনের দিক থেকেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তার দিন কাটছে পুলিশ প্রহরায়। খুনিরা তখন তাকে হত্যা না করে ছেড়ে দিয়ে গেলেও আর কখনও তার ওপর আক্রমণ করবে না- এমনটি মনে করছে না পুলিশ। তাদের মতে, খুনের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সে, এজন্য তার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে। যখন সাগর-রুনিকে হত্যা করে খুনিরা পালিয়েছে, তখন হয়তো তাদের ধারণা হয়নি যে মেঘ সব বলতে পারবে। তাদেরকে চিনে ফেলতে কিংবা ছবি দেখলেও পুলিশকে বলে দিতে পারবে। পুলিশ যেমন মিডিয়াকর্মী ও আত্মীয়-স্বজনরা অনেকেই তখন তার কাছে জানার চেষ্টা করে কি হয়েছিল সেদিন, সে কি দেখেছে? প্রথম প্রথম ঘটনার কিছু কিছু বিবরণ দিলেও এখন তেমন কিছুই বলছে না। বারবার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে। ছবি আঁকলেও বাবা-মায়ের ছবি আঁকার চেষ্টা করছে, কবরস্থানের ছবি আঁকার চেষ্টা করছে। আশপাশের ফ্ল্যাটের শিশুদের সঙ্গে তাকে খেলতে দেয়া হচ্ছে, তবে এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি সে। বাসায় সে মাঝে-মধ্যেই কম্পিউটারে গেম খেলতো, এখন বাসায় যেতে পারছে না। ওখানে যাওয়ার জন্য তার মন কাঁদে। এখনও মনে করছে, বাবা-মা হয়তো ফিরে আসবে। তাকে নিয়ে যাবে। গতকাল তার খবর নিয়ে জানা গেছে, সে এখন আগের চেয়ে কিছুটা ভাল। তবে মানসিকভাবে এখনও ওইসব দৃশ্য ভুলতে পারছে না। নানী-মামাদের কাছে বাবা-মা সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করছে। তারা যতখানি সম্ভব উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে বেশি কিছু বলছেন না। তারা অত্যন্ত সতর্ক রয়েছেন। তারা মনে করছেন, এমন কোন কথা মেঘের সামনে বলা যাবে না যাতে সে আঘাত পায় কিংবা তার কষ্ট হয়। সূত্র জানায়, মেঘ এত বেশি কষ্ট পেয়েছে যে, কাঁদতেও পারছে না। তার মানসিক দিকটি বিবেচনা করে ইতিমধ্যে বিশিষ্ট একজন মনোবিজ্ঞানীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। তিনি কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। মেঘকে যতটা সম্ভব তার বাবা-মায়ের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করেছেন, টেলিভিশনের বাবা-মায়ের খবর দেখাতেও নিষেধ করেছেন। সেই সঙ্গে তাকে খাওয়া-দাওয়াসহ স্বাভাবিক কাজকর্মে অভ্যস্ত করানোর চেষ্টা করতে বলেছেন। ঘুম যাতে ঠিকমতো হয় তা-ও লক্ষ্য রাখতে বলেছেন। কোনভাবেই যাতে সে নতুন করে কোন ধরনের মানসিক আঘাত না পায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে বলেছেন। এছাড়াও মনোবিজ্ঞানী তাকে একজন শিশু বিশেষজ্ঞকেও দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন। মেঘকে স্বাভাবিক রাখতে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সে যা করতে চাইছে, তা-ই করতে দেয়া হচ্ছে, যা খেতে চাইছে তা-ই খেতে দেয়া হচ্ছে। তবে আগের মতো এখন সে খাচ্ছে না। তার খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমও ঠিকমতো হচ্ছে না। রাতে ও দুপুরের খাবারের পর তাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা চলছে। (মানবজমিন)

মেঘ এখন তার নানীর বাসায়। জীবনের বেশির ভাগ সময়টাই তার কেটেছে এ বাসায়। বাবা-মা তাকে ওখানে রেখে অফিসে যেতেন। অফিস শেষে বাবা কিংবা মা আবার নিয়ে যেতেন। বাবা-মা অফিসে থাকলে সে টেলিফোনে কথা বলতো।
ভবিষ্যতে মেঘ যাতে সব ঘটনা জানতে পারে এজন্য সব সংবাদপত্র কিনে রাখা হচ্ছে। তার মামা বলেন, ও বড় হলে এগুলো দেখবে। অনেক পত্রিকায় অনেক কথাই লেখা হচ্ছে। কোন নেগেটিভ লেখা প্রকাশ হলে বড় হলেও ওর মনে সেসব লেখার প্রভাব পড়বে। তাই সবারই উচিত আরও একটু দায়িত্বশীল হওয়া। মেঘের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ও তার বড় হয়ে ওঠার জন্য সবারই সহযোগিতা দরকার।

সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর পর তার নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। প্রথমে সাদা পোশাকে পুলিশ তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়। এখন অবশ্য তার জন্য পোশাকি পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার লেখাপড়াসহ সকল কিছুুর দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে সব কিছুর পর এটাই সত্য- মেঘকে বেড়ে উঠতে হবে বাবা-মাবিহীন। ছোট ছোট আবদার করতে পারবে না- যেটা বাবা-মায়ের সঙ্গে করতো। সাগর-রুনির ঘনিষ্ঠ আরও একজন বলেন, সে রাতের ঘটনা সম্পর্কে ও অনেক কথা বলেছে এটা ঠিক। কিন্তু ওর সব কথাই ঠিক- এটা মনে করা যাচ্ছে না। কারণ ও কতখানি দেখেছে, কতখানি মনে রেখেছে- সেটা বলা যাচ্ছে না। ও বলছে, যে আঙ্কেলরা ওদের বাসায় এসেছে, তারাই ওর বাবা-মাকে মেরেছে। ওদেরকে পিকনিকে দেখেছে, আসলে এটা কতখানি ঠিক তা-ও বলা যাচ্ছে না। খুনিরা ক’জন ছিল, কারা ছিল তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ও ছোট মানুষ ওর সব কিছু বুঝতে সময় লাগবে। এই কারণে কেউ যাতে ওকে এ খুনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে অযথা বিরক্ত করতে না পারে তাই মিডিয়া কর্মীদের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছে। অনেক সাংবাদিক তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু এখন কাউকেই কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, একেক জন একেকভাবে ওকে প্রশ্ন করলে মনে যা আসবে তাই বলবে। এগুলো পত্রিকায় লেখা হবে। তাতে কিছু সমস্যাও হতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, মেঘকে মিডিয়া কর্মীদের কথা বলতে দিলে ঘটনার অনেক কিছুই বেরিয়ে আসতো। তদন্তে অগ্রগতি হতো আরও বেশি।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/নিউজ ডেস্ক

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here