বেশ কয়েকটি আলোচিত অপরাধের কারণে ঘটনাবহুল ছিল ২০১১ সাল। এসব অপরাধের প্রায় প্রতিটিতেই জোরেসোরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। আর এসব ঘটনাগুলো নিয়ে সারাবছরই বিব্রতকর অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন পার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা।

২০১১ সালের শুরুটাই হয় বড় ধরনের সহিংসতা দিয়ে। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের আড়িয়াল বিলে ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ তৈরির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ৩১ জানুয়ারি ভোর থেকে ঢাকার নবাবগঞ্জ, দোহার, মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এক সময় তা জনরোষে পরিণত হয়।

এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে ঘেরাও করে আক্রমণ চালায়। পুলিশও গুলি করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহতসহ কমপক্ষে ২৫ জন গুরুতর আহত হন।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/স্টাফ রিপোর্টার

বছরের মাঝামাঝিতে ৫ জুন স্বামীর হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষিকা রুমানা মঞ্জুরের নির্যাতনের ঘটনাটি বেশ আলোচনার ঝড় তোলে। নির্যাতনে তার দুটি চোখই নষ্ট হয়ে যায়। ঘটনার ১০ দিন পর স্বামী সাঈদ হোসেনকে রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে আটক করা হয়।

পরে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে সাঈদকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৫ ডিসেম্বর রহস্যজনক মৃত্যু হয় তার।

জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে বিনা অপরাধে রাতের অন্ধকারে সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের ছাত্র আব্দুল কাদেরকে। পরে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে কাদেরের নামে ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করে পুলিশ।

এ ঘটনায়ও নিন্দার ঝড় ওঠে। এ সময় ঘটনা তদন্তে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে কাদের। এ ঘটনায় খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ আরও দুইজনকে বরখাস্ত করা হয়।

পরে ১ নভেম্বর নরসিংদীর পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেনকে দলীয় কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় একটি ট্রেনে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ঘটনার পেছনে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজু ও তার ভাই সালাউদ্দিন বাচ্চুর নাম উচ্চারিত হয় জোরেসোরে। ২ দিন পর মন্ত্রীর ভাই বাচ্চুসহ ১৪ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন মেয়রের পরিবার। এ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বরাবরের মতো এ বছরেও প্রথম দু’মাসে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান ২৪ জন। আর সারা বছরজুড়েই ছিল গুপ্তহত্যা আর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা। বছরের শেষ দু’মাসে গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ২২ জন। আর বছরজুড়ে নিখোঁজ হয়েছেন ৫০ জনেরও বেশি। তাদের মধ্যে ১০ জনের লাশ পাওয়া গেলেও বাকিদের খোঁজ মেলেনি এখনো।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here