হুমায়ূন আহমেদের জন্ম দিন আজষ্টাফ রিপোর্টার :: আজ হুমায়ূন আহমেদের ৬৮তম জন্ম দিন। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর  নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলাধীন কুতুবপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ফয়জুর রহমান আহমদ একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন, লেখালেখি করতেন এবং তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শহীদ হন। মাতা আয়েশা আখতার খাতুনও লেখালেখি করেন। তিনি (হুমায়ূন আহমেদ) বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সব গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।

পরে ঢাকা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্টের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণার মাধ্যমে পিএইচডি করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

ছাত্রদের কাছে অনেক জনপ্রিয় শিক্ষক হলেও লেখালেখির কারণে তিনি অধ্যাপনা পেশা ছেড়ে দেন এবং আমৃত্যু লেখালেখি করেন। তাঁর লেখালেখির জন্য অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা তিনি পেয়েছেন।

২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়ার্কের ভেলভ্যু হাসপাতালে মাত্র ৬৪ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। হুমায়ন আহমেদ মরেও বেঁচে আছেন আমাদের মধ্যে। হয়তো তার সৃষ্টির মধ্যে তিনি চিরকাল বেঁচেও থাকবেন।

এ উপলক্ষে আজ টিভি চ্যানেলগুলোতে নানাভাবে ঘুরেফিরে আসবেন তিনি, তাকে নিয়ে প্রচারিত হবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান।

তিনি ৩০০ অধিক গ্রন্থ লিখেছেন: এর মধ্যে উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, বৈজ্ঞানি কল্পকাহিনী, রম্যরচনা ও শিশুদের রচনা পরর্যন্ত রয়েছে। তার রচনার সবগুলোর আর্থিক সাফল্য সমান না হলেও হিংসে করার মতো সাফল্য তিনি পেয়েছেন। বাংলাদেশের লেখকদের মধ্যে তিনি,  জীবিত অবস্থায় কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন।

হুমায়ন আহমদের সবচেয়ে বড় সাফল্য তাঁর রচনায় তিনি যে চরিত্রগুলো সৃষ্টি করতেন; তা একদম জীবন্ত রূপ নিতো-কোন কাগুজে চরিত্র তিনি আঁকতেন না। টিভি সিরিয়ালে  বাকের ভাই এর যে চরিত্রটি তিনি উপস্থাপন করেছিলেন তা এতই জীবন্ত হয়ে পরেছিল যে, নাটকের কাহিনীতে তার (বাকের ভাই) ফাঁসির আদেশ হলে সেই ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে মিছিল পর্যন্ত হয়েছিল।

দর্শক মনে করেছিল বাকের ভাই নাটকের কোন চরিত্র নয় সত্যসত্যই একজন মানুষ। তাই তার ফাঁসি যাতে না হয় সেজন্য মিছিল করেছিল। একজন লেখকের এটা যে কত বড় পাওয়া, তার ব্যাখ্যা করতে হলে রীতিমতো গবেষণা করতে হবে।

তিনি যা-ই সৃষ্টি করেছেন, তা-ই দর্শক পাঠককে টেনে এনেছে। সিনেমাতে বাংলাদেশের হলগুলো যখন শূন্যে পড়ে থাকত; তখন হুমায়ন আহমেদের ছবি আরাম্ভ হলে সিনেমা হল ভর্তি হয়ে যেতো। টিভি সিরিয়ালে যাদের টিভি নেই তারাও হুমায়নের সিরিয়াল দেখার জন্য নিজেদের অহমিকা ভেংগে অন্যের বাড়িতে যেয়ে সিরিয়াল দেখত। নন্দিত নরক দিয়ে আরাম্ভ করে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘১৯৭১’ এর মতো অসাধারণ রচনায় তিনি সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন; সার্থক হয়েছিল তার সৃষ্টি।

এর মধ্যে মধ্যাহ্ন, মাতাল হওয়া জোছনা ও জননীর মধ্যে তিনি ১৯০১ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সময়কে তুলে ধরেছেন। তাঁর কিছু কিছু চরিত্র বিশেষ করে হিমু চরিত্র এতই হৃদয়িক যে, অনেক যুবক হিমুর সাথে একাত্ম হয়ে হলুদ বস্ত্র পরিধান করে হিমু সেজে আজো ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং মিসির আলী রহস্য সকরের কাছেই আকর্ষণীয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here