কলিট তালুকদার

পাবনা  প্রতিনিধি

আপনাদের পাবনার হেমায়েতপুরে মানষিক হাসপাতাল। হাসপাতালটি দেখে রাখবেন। রোড মার্চের সাফলতা দেখে এই সরকারের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। সরকার কখন কি বলছে তা তারা নিজেও জানেনা। গতকাল শনিবার পাবনার ঈশ্বরদীর উপজেলার দাশুড়িয়া মোড়ে খুলনা অভিমুখে রোড মার্চের প্রথম পথসভায় বিরোধী দলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন ও চারদলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের কোন উন্নয়ন করতে পারেনি। তারা প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে। এ সরকার নির্বাচনের আগে বলেছিল তারা ক্ষমতায় এলে দশ টাকা কেজি চাল খাওয়াবেন। প্রতিটি ঘরে ঘরে চাকুরি দিবেন, কৃষক কে বিনামূল্যে সার, কীটনাশক ও কৃষি উপকরণ দিবে। বিনা মূল্যে সার দেওয়া তো দূরের কথা বরং বিএনপির সময় ইউরিয়া সার ছিল ৬৫০ টাকা সেই সার এখন ১ হাজার ৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বেড়ে গেছে কৃষি উপকরণের দাম তাই ধানের উৎপাদন কমে গেছে। কৃষকের ধান উৎপাদনের খরচ উঠছে না।

চাল-ডাল-তেল কাঁচামরিচসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। সাধারণ মানুষ উচ্চ মূল্য দিয়ে এসব কিনতে পারছে না। তাই দেশের বেশিরভাগ মানুষ না খেয়েই দিন কাটায়।

টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে বেগম জিয়া বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞরা যৌথ জরিপ চালিয়ে যদি টিপাইমুখ বাঁধের কারণে এ দুই দেশের কোন ক্ষতি হবে না বলে নিশ্চিত করতে পারে তাহলে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি আমরা বিবেচনা করে দেখবো। সিলেট অঞ্চলে এখন বিক্ষোভ হচ্ছে। সেখানে মানুষ আন্দোলন করছে। আওয়ামী লীগ ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ প্রতিরোধ না করায় এ অঞ্চলের (উত্তরবঙ্গ) মানুষ যেমন দুর্ভোগের শিকার হয়েছে, তেমিনি সিলেটের মানুষ দুর্ভোগের শিকার হতে যাচ্ছে। তাই তারা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

টিপাইমুখের ব্যাপারে আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে চিঠি দিয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি আজ আসার আগে শুনে এসেছি- মনমোহন সিংক আমার চিঠির উত্তর দিয়েছেন। আমি ওই চিঠিতে বলেছিলাম- টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ হলে আমাদের এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র, পশু-পাখি, নদ-নদী, হাওর-বাওর ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার- বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞরা যৌথ জরিপ চালিয়ে যদি টিপাইমুখ বাঁধের কারণে এ দুই দেশের কোনও ক্ষতি হবে না বলে নিশ্চিত করতে পারে তাহলে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি আমরা বিবেচনা করে দেখবো।

চারদলীয় জোট আয়োজিত পথসভায় বেগম জিয়া ৪০ মিনিটের বক্তৃতায় সরকারের ব্যর্থতা, লুটপাট-দুর্নীতি, দেশবিরোধী চুক্তি, বিরোধী দল নির্যাতন, হামলা-মামলা ও জনগণের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগ দেশকে দেউলিয়া বানিয়ে দিচ্ছে অভিযোগ এনে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া বলেন, তিন বছরে এ সরকার কিছুই করতে পারেনি। কেবল বিদেশি প্রভুদের খুশি করতেই ব্যস্ত। আর সারাদেশে গণজাগরণ দেখে জনগণকে ধরে ধরে জেলে ঢোকাচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন,জনগণ না চাইলে বিদেশি প্রভুরা এ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে পারবে না। দেশের বুক চিরে করিডোর ও দেশের জমি বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। আরও কয়েকটি রোডমার্চ শেষে সরকারকে বিদায় করতে চুড়ান্ত কর্মসূচি দেয়া হবে।

নির্বাচন কমিশন পুনগঠনের দাবী জানিয়ে বেগম জিয়া বলেন,আওয়ামী লীগের অধীনে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়কের অধীনেই এদেশে নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেও আসতে হবে।

পরীক্ষামূলকভাবে ট্রানজিট দেয়ার কথা বলেছিল এ সরকার। কিন্তু এখন শুনি গোপনে ট্রানজিটের নামে করিডোর দেয়া হয়ে গেছে।

পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেতু নির্মাণের অভিজ্ঞতা বিএনপির আছে। বিএনপি যমুনাসেতুর ৮০ ভাগ কাজ করে রেখেছিলো। আমি যমুনা সেতু ভিত্তিপ্রসত্মর স্থাপন করতে যাই সেদিন আওয়ামী লীগ দেশে হরতাল দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করে নিজেদের উন্নয়নের কথা বলছে। কিন্তু তারা পদ্মাসেতুর টাকা খেয়ে ফেলেছে। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে একটা নয়, মাওয়া ও পাটুরিয়ায় দু’টি পদ্মা সেতু হবে।

আমাদের সময়ই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিতে পদ্মা সেতুর সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে।

উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশকে কী অন্যের হাতে তুলে দিতে দেবেন ? উপস্থিত জনতা চিৎকার দিয়ে ‘না’ উত্তর দেয়। জবাবে বেগম জিয়া বলেন, যদি না দেন, তাহলে রাস্তায় নামতে হবে, নামবেন? জনতা আবার বলে, ‘হ্যাঁ’। খালেদা জিয়া তখন বলেন, এ যুদ্ধে আমি আপনাদের সঙ্গে থাকব। আপনাদের সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচার হটিয়েছি। আ’লীগ সব অবৈধ ও সামরিক সরকারের সঙ্গী। আ’লীগ নিজের কথায়ই জাতীয় বেইমান। এবার স্বৈরাচারের দোসরদের সরাতে হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। মানুষ এখন ঘরের মধ্যে বসেও নিরাপদ বোধ করেন না। চারদিকে শুধু খুন ও সন্ত্রাস। এটি এখন প্রতিদিনের ঘটনা।

শেয়ার বাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে যায়। শেয়ারবাজার লুটের ঘটনা তদন্তে সরকারের বড় বড় লোকের নাম এসেছে। অর্থমন্ত্রী তাদের নাম প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছেন না। এ কারণেই সরকারি দলের প্রভাবশালী একজন নেতা বলেছেন, বিড়ালের কাছে শুটকি পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বেগম জিয়া আরো বলেন, শেয়ারবাজারে টাকা বিনিয়োগ করে লাখ লাখ মানুষ পথে বসেছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আত্মহুতি দেওয়ার জন্য সরকারকে হুমকি দিয়েছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

সরকারের লোকেরা শেয়ারবাজারের টাকা লুট করে তা ডলার ও পাউন্ড বানিয়ে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এ কারণে ডলার ও পাউন্ডের দাম বেড়ে গেছে। ডলারের দাম বাড়ায় দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। কিন্তু সরকারের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।

পাবনা জেলা বিএনপির সভাপতি মেজর অব: কেএস মাহমুদের সভাপত্বি আয়োজিত পথ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপাপ্ত মহাসচিব ফকরুল ইসলাম আলমঙ্গীর,ব্যারিষ্টার মওদুদ আহম্মেদ, ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফজলুর রহমান পটল, আমানুল্লাহ আমান, খন্দকার মোশারফ হোসেন, ড. মঈন খান, মীর্জা আব্বাস, মিজানুর রহমান মিনু, খাইরুল কবির খোকন, সৈয়দা আশরাফি পাপিয়া (এমপি),নাদিম মোসত্মফা, শিরিন সুলতানা,  রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here