যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত মাওবাদী নেতা কিষেনজীর মৃতদেহ সনাক্ত করল তার পরিবারের সদস্যরা। শনিবার সকালে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে গিয়ে মাওবাদী নেতা কিষেনজীর দেহ সনাক্ত করে তার ভাইঝি দীপা রাও সহ আরও দুই আত্মীয়। তাদের সঙ্গে ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের বিশিষ্ট কবি ভারাভারা রাও। শুক্রবার রাতেই তারা মেদিনীপুরে পৌঁছেছিলেন। শনিবার সকালে মর্গে গিয়ে কিষেনজীর মরদেহ সনাক্ত করার পর তার দেহের ময়না তদন্ত শুরু করা হয়। ময়না তদন্তের পর এদিন মাও নেতা কিষেনজীর দেহ তার পরিবারের আত্মীয়দের হাতে তুলে দেয়া হয়।

 

এদিকে কিষেনজীর মৃত্যু যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালীন গুলি লেগেই হয়েছে। শনিবার কিষেনজীর দেহের ময়নাতদন্তের পর একথা জানালেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। এদিন সকালে কিষেনজীর দেহের সনাক্তকরণের পর তার দেহের ময়না তদন্ত শুরু হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। ময়নাতদন্তে কিষেনজীর দেহে ছটি বুলেট ও দুটি স্প্লেন্টারের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পাশাপাশি কিষেনজীর সারাদেহে ২০টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সেই আঘাতের নমুনা দেখে চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে মনে করছে মাওবাদী নেতা কিষেনজী যৌথবাহিনীর সাথে গুলির লড়াই চলাকালীন আহত হয়েই মৃত্যুবরন করেছিলেন।

 

এদিকে মাওনেতা কিষেনজীর মরদেহ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে কলকাতায় নিয়ে আসার সময় কিষেনজীর সম্পর্কে স্লোগান দেয়ায় বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন অন্ধ্রপ্রদেশের বিশিষ্ট কবি ভারাভারা রাও। এদিন সকালে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে মাওনেতা কিষেনজীর দেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর কিষেনজীর দেহ তুলে দেয়া হয় তা আত্মীয়দের হাতে। এরপর তার দেহ নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার সময় কবি ভারাভারা রাও সহ এপিডিয়ারের সদস্যরা কিষেনজী অমর রহে বলে স্লোগান দেন। পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি এদিন ধিক্কারও জানান তারা। সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত এলাকার বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। উত্তেজিত বাসিন্দারা জানায় মাওবাদী নেতা কিষেনজী বহু মানুষকে খুন করেছেন। এমন একজনকে শহীদ বলা হলে সেটা তারা মেনে নেবেনা। এদিন তারা ‘মাওবাদীরা নিপাত যাক’ বলে পাল্টা স্লোগান দিতে থাকে। তবে ঘটনাস্থলে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ বাহিনী মজুত থাকায় পরিস্থিতি অশান্ত হতে পারেনি। এরপরই সেইস্থান থেকে কনভয়ে করে মাওবাদী নেতা কিষেনজীর দেহ নিয়ে তার আত্মীয়রা এবং কবি ভারাভারা রাওকে সেখান থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা  করানো হয়। এদিন বিকেলে কলকাতা থেকে বিমানে করে অন্ধ্রপ্রদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারা। অন্ধ্রপ্রদেশের করিমনগরে কিষেনজীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

এদিকে মাওবাদী নেতা কিষেনজীর নিহত হওয়ার বিষয়ে এবার মুখ খুললেন রাজ্যের প্রধান বিরোধী বামফ্রন্ট দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। শনিবার সকালে বামফ্রন্টের সম্পাদক বিমান বসু জানিয়েছেন। মাওবাদী নেতা কিষেনজীর মৃত্যু নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে সেই বিষয়ে সরকারকে তার অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত। বিমানবাবু জানিয়েছেন মাওবাদী নেতা কিষেনজী গুলির লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন নাকি তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে তা নিয়ে ইতিমধ্যে যে বাদবিতণ্ডা শুরু হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে তার অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিয়ম মেনে কিষেনজীর দেহের ময়না তদন্ত করা উচিত। এদিন বামফ্রন্টের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু সাংবাদিকদের জানিয়েদেন বামফ্রন্টের শাসনকালেই রাজ্যে মাওবাদীদের মোকাবিলায় অভিযান শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি বেশ কয়েকবার কিষেনজীকে ঘিরে ফেলা সত্ত্বেও কিছু বাধ্যবাধকতা থাকার কারনে সে সময় তাকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে এদিন জানিয়েছেন বিমান বসু।

ইউনাইটেডনিউজ ২৪ ডট কম/শফিকুল ইসলাম/কলকাতা

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here