কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করা এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি করে বিএনপি যে চিঠি দিয়েছে, তার জবাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চিঠিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ইভিএম ব্যবহার হবে এবং সেনা মোতায়েন করা হবে না। রোববার নির্বাচন কমিশনের বিশেষ বাহকের মাধ্যমে চিঠিটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে ইভিএম পদ্ধতি ও সেনা মোতায়েন ছাড়াই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ঘোষণার পর গতকাল সোমবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাতিল ও সেনা মোতায়েনের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। সোমবার নির্বাচন কমিশনার কুমিল্লায় আসার খবরে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন- কুমিল্লা (দ.) জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোসত্মাক মিয়া, শহর বিএনপির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, কোতয়ালী থানা বিএনপির সভাপতি এড. আলী আক্কাস, যুবদল সভাপতি আমিরুজ্জামান আমির, ছাত্রদল সভাপতি উৎবাতুল বারী আবু, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন কায়সার প্রমুখ। বক্তারা জানান- ইভিএম বাতিল ও  সেনাবাহিনী মোতায়েন না করা হলে নির্বাচন বয়কট করবো। আমাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

এদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো ভোটারদের মাঝে আনুষ্ঠানিক প্রচার চালাতে শুরু করেছে বিএনপি। তবে কুসিক নির্বাচনের উল্টো চিত্র। ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে ভোট কারচুপি করা সম্ভব তা নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করেছে বিএনপি। এটি সিডি আকারে ভোটারদের মাঝে বিতরণ করা হবে। রোববার থেকে বিএনপি এ সিডি প্রজেক্টরদের মাধ্যমে ভোটারদের মাঝে প্রদর্শন শুরু করেছে। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বৃহস্পতিবার থেকে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে ভোটারদের মাঝে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়- ইসি কর্মকর্তারা নির্বাচনী এলাকা বিভিন্ন স্থানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় ইভিএমের ব্যবহার তুলে ধরেছে। কীভাবে ভোট দিতে হবে তা দেখানো হচ্ছে। আর বিএনপি রোববার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে একই কায়দায় প্রজেক্টরের মাধ্রমে বড় পর্দায় ইভিএমের মাধ্যমে কীভাবে কারচুপি করা সম্ভব এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আইনি জটিলতা ও ভোট গ্রহণে নানা সমস্যা দেখাতে শুরু করেছে। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোসত্মাক মিয়া বলেন- আজ সোমবার থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে ইভিএম বিরোধী সিডি প্রদর্শন করা হবে। একই সঙ্গে সুশীল সমাজের কাছে বিনামূল্যে সিডি বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন- ২৩ নভেম্বর দলীয় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের সভায় ইভিএম বিরোধী প্রচার চালানোর সিদ্ধানত্ম নেওয়া হয়। অবশ্য ইভিএমের বিরুদ্ধে বিএনপি’র এ প্রচার নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন কি না জানতে চাইলে রিটানিং অফিসার মোঃ আবদুল বাতেন বলেন- ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের বিষয়টি আপনাদের থেকেই আমি জেনেছি।

এদিকে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও ইভিএম পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন ও সদ্য বিলুপ্ত পৌরসভার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু পৃথক পৃথক স্মারকলিপি জমা দিয়েছে কুমিল্লা রিটানিং অফিসারের নিকট।

মনিরুল হক সাক্কু সমর্থিত কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতা সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফজলুল হক ফজলু, নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুর রউফ চৌধুরী ফারুক, জেলা বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির ভূইয়ার স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি মাত্র ৭ লাইনে শেষ করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে ইভিএম বাতিল করে প্রচলিত ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ ও সেনা মোতায়েনের দাবী করা হয়েছে। না হলে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে এর দায় ইসিকে বহন করতে হবে।

এর আগের দিন শনিবার জেলা বিএনপির উদ্যোগে সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোসত্মাক মিয়া, শহর বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব ফরিদ আহমেদ, কোতয়ালী বিএনপির সভাপতি এড. আলী আক্কাসসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসভাপতি ও জেলা সভানেত্রী বেগম রাবেয়া চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি কুমিল্লা রিটানিং অফিসার নিকট জমা দেন।

হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন জানান- ইভিএম একটা অস্বচ্ছ পদ্ধতি। ব্যালট পদ্ধতিতে ভুল হয়েও ধরা পড়ে। ইভিএমের কারচুপির আশঙ্কা বেশি। আমরা নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ইভিএমেসর বিরুদ্ধে জনগণের মাঝে প্রচারণা চালাচ্ছি। তিনি বলেন-আমাদের দাবী হচ্ছে ইভিএম পদ্ধতি বাতিল এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা। সরকার আমাদের দাবি মেনে না দিলে আমরা নির্বাচনে অংশ নিবো না। আমরা নির্বাচন বয়কট করবো।

জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও মেয়র প্রার্থী অধ্যক্ষ আফজল খান বলেন- ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ইভিএম পদ্ধতি প্রথম পদক্ষেপ। এটা শতভাগ কার্যকর বলেও জানান তিনি।

জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী মহানগরী আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন- দলীয় সিদ্ধানেত্মই আমি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। ইভিএম পদ্ধতি ও সেনা মোতায়নের বিএনপির দাবীর সাথে একমত পোষণ করে জামায়াত আমির বলেন- এ দাবী আমাদেরও। তবে এ মুহুর্তে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে ওই দাবীও জানাচ্ছি। ওই দাবী মানা না হলে নির্বাচন বয়কটের ব্যাপারে তিনি বলেন- সময়মত সিদ্ধান্ত নেব। জোটবদ্ধ নির্বাচনে একক প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিবেন কিনা তা জানতে চাইলে তিনি জানান মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি নির্বাচন করার জন্য।

অপরদিকে কুসিক নির্বাচনে শতভাগ ইভিএম পদ্ধতি চালুর বিষয়ে ভোটারদের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করন কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজের শিক্ষক এম এইচ মনির বলেন- বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগে ইভিএম পদ্ধতি প্রশংসনীয় হলেও কুসিক নির্বাচনে শতভাগ সমযোপযোগী নয়। কারণ এ সম্পর্কে ভোটারদের পর্যাপ্ত ধারণা নেই। বিশেষ করে সিটির দক্ষিণাংশ অনগ্রসর। ধারণা না থাকায় ইভিএম পদ্ধতিকে আতঙ্ক মনে করছেন তারা।

অপরদিকে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু তফসিল ঘোষণার পর থেকে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। গণসংযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- সদ্য বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভার মেয়র ছিলাম। তাই জনগণের সাথে দেখা করতে বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছি, তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। তিনি ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও সেনা মোতায়েনের বিষয়ে বলেন- ইতিমধ্যে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এ দাবী না মানলে নির্বাচন বয়কট করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান-আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ইউনাইটেড নিউজ ডট কম/নেকবর হোসেন/কুমিল্লা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here