বর্তমান বিশ্বে তথ্য ও প্রযুক্তির ক্রমাগত বিকাশের সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে অপরাধ প্রবনতা। সেই সাথে অপরাধ সংগঠনের কৌশল ও অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। তাই দিন দিন অপরাধ পাচ্ছে নতুন মাত্রা। বাংলাদেশের অপরাধের ধরন, অপরাধের হার ও এর সাথে অন্যান্য উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজন প্রচুর গবেষনার । বিভিন্ন ধরনের মৌলিক গবেষনা অপরাধ দূরীকরনের নীতি নির্ধারণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে নানা ধরনের অপরাধ নিয়ে গবেষনা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্পূর্ণ ভিন্নধারার সামাজিক অবড়্গয় ইভটিজিং নিয়ে গবেষনা করেছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ তত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিড়্গার্থী মো: শামসুর রহমান রবিন। সমাজ থেকে কিভাবে ইভটিজিং দূর করা যায় সে চিনত্মা থেকেই ইভটিজিং নিয়ে গবেষনার সিদ্ধানত্ম নিই-বললেন রবিন। তার গবেষনার শিরোনাম ছিল “ইভটিজিং এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারন অনুসন্ধান”। রবিনের গবেষনার সুপারভাইজার ও অপরাধ তত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ইভটিজিং এর সাথে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কারন জড়িত। তাই এটি প্রতিরোধে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সংস্কারের প্রয়োজন। তাই এ ধরনের গবেষনা ইভটিজিং প্রতিরোধে যথেষ্ট ভুমিকা রাখবে। ইভটিজিং প্রতিরোধে পরিবার এবং মিডিয়া বিশেষ গুরম্নত্ব বহন করে বলেও জানান তিনি।

তিনি তার গবেষনায় বিভিন্ন দেশীয় ও আনর্ত্মজাতিক গবেষনা সংস্থার জার্নাল, ম্যাগাজিন থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তন্মধ্যে মাল্টি সেক্টরাল প্রজেক্ট অন ভায়োলেন্স অ্যাগেনইস্ট উইমেন, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবি সমিতি (বিএনডবিস্নওএলএ), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), টান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর বিভিন্ন নথিপত্র গবেষনার তথ্য সংগ্রহে ব্যবহার করা হয়েছে।

ইভটিজিং এর গবেষনা থেকে রবিন দেখান- ১.ইভটিজিং মানব সভ্যতার শুরম্ন থেকে বিরাজমান ২.এটি সমাজের মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট একটি সমস্যা যা সমাজে খুব সাধারন হয়ে গেছে ৩. সমাজের বখাটে, বেকার, উঠতি মাসত্মান ও উগ্র মানসিকতার ব্যক্তিরা বেশী ইভটিজিং করে ৪. স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী ও পেশাজীবি নারীরা বেশী ইভটিজিংয়ের  শিকার হয়  ৫. নারীরা কর্মস্থল, একাকী রাসত্মায়, মার্কেটে, শিড়্গাপ্রতিষ্ঠানে এমনকি বাসাবাড়িতেও ইভটিজিংয়ের শিকার হতে পারে।

তার গবেষনা থেকে জানা যায়, দেশের ৯৪ শতাংশ নারীরা জীবনের কোন না কোন সময়ে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে। ইভটিজিং করে প্রায় ৮৮ শতাংশ  পুরম্নষ।

ইভটিজিংয়ের প্রধান কারনগুলো হচ্ছে সামাজিক মুল্যবোধের অবড়্গয়, সামাজিক অস্থিরতা, অসচেতনতা, বেকারত্ব, মাদকাসক্তি, প্রেমে ব্যর্থতা, নারীদের উগ্র পোশাক ও চলাফেরা, মিডিয়ায় নারীদের ভোগপন্য হিসেবে উপস্থাপন, ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব, আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত উদ্যোগের অভাব প্রভৃতি।

ইভটিজিংয়ের এর ধরন সমূহের মধ্য রয়েছে-প্রেমের ও বিয়ের প্রসত্মাব, যৌন কটুক্তি, অশস্নীল কথা, অবৈধ যৌন সম্পকের প্রসত্মাব প্রভৃতি।

ইভটিজিংয়ের ফলে সমাজে কলহের সৃষ্টি, নারী শিড়্গা ও চাকুরী ব্যাহত, আত্মহত্যা, দাম্পত্য কলহপ্রভৃতি সৃষ্টি হয়। ফলে একজন নারী মানসিক অশানিত্মর সৃষ্টি, হতাশা, ভয়, লজ্জা, নিরাপত্তাহীনতা প্রভৃতি সমস্যায় ভুগতে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম নুরম্নল ইসলাম বলেন, ইভটিজিং নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের গবেষনা অবশ্যই প্রসংশার দাবীদার। আশাকরি এই গবেষনা ইভটিজিং প্রতিরোধে সহায়ক হবে এবং সমাজের মানুষ এতে উপকৃত হবে। সনত্মানের পেষাক পরিচ্ছদ, সঙ্গী সার্থী ও ইন্টারনেট ব্যবহােেরর ব্যাপারে বাবা-মাকে সাবধান হওয়ারও আহবান জানান তিনি।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/রিয়াজ উদ্দিন রিপন/মাভাবিপ্রবি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here