বদলে যাচ্ছে বিমানবন্দর-বনানী সড়কস্টাফ রিপোর্টার :: রকমারি সাজে সাজানো হচ্ছে রাজধানীর বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়ক। বিদেশ থেকে আগত অতিথিরা যাতে বিমানবন্দর থেকে নেমেই বাংলাদেশ সম্পর্কে সুন্দর ধারণা পেতে পারে এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। রাস্তারটির দুইপাশে থাকবে ডিজিটাল ডাস্টবিনের মতো ব্যতিক্রমী নানা আয়োজন। পথচারীরা সড়কে ময়লা ফেললেও তা সয়ংক্রিয়ভাবেই ডাস্টবিনে জমা হবে।

জানা গেছে, ‘ভিনাইল ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির কাজ করছে। বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। তবে আধুনিক সব সুবিধা সম্পন্ন এ সড়কটির সৌন্দর্য বর্ধণে সরকারকে কোনো অর্থ খরচ করতে হচ্ছে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ পরবর্তী দশ বছর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের খরচের অর্থ তুলে নিবে।

২০১৬ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া সড়কের আধুনিকায়নের প্রকল্পটির কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগে শেষ করা হবে। নির্মাণের কাজ শেষ হলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক সুবিধা সংবলিত ডিজিটাল সড়কের দুইপাশের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জনপথ অধিদপ্তরের ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান বলেন, দেশে সড়ক ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের জন্য এ প্রথমবারের মতো রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত উন্নত বিশ্বের আদলে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি তৈরির কাজ চলছে। সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে এ সড়কটি উন্নত বিশ্বের ন্যয় একটি আধুনিক পথচারী বান্ধব ডিজিটাল সড়ক হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে। ছয় কিলোমিটার সড়কজুড়েই থাকবে সুপ্রশস্ত দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত ওয়াকওয়ে। সাদা এলইডি ফোকাসিং করা লাইটের এমন ব্যবহার এই প্রথম দেশের কোনো সড়কে করা হচ্ছে। ফলে পুরো ওয়াকওয়ে সারা রাত আলোকিত থাকবে। সড়কের দুইপাশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আধুনিক জাতের ফুল ও ফলের গাছ লাগানোর কাজ চলছে। সারা বছরই ফুল ও ফলের শোভাবর্ধন করবে এখানে। এ ছাড়াও সড়কের বিভিন্ন এলাকায় ১২টি কৃত্রিম ঝরণা বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। মূলত এ সড়কটি হবে পথচারীবান্ধব।

সড়কটির সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে ইতোমধ্যে বনানীতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি কুড়িলে একটি সাব-কন্ট্রোল রুম ও অভিযোগ কেন্দ্র তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে। কুড়িল, শেওড়া, কাওলা, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও বিমানবন্দরসহ কয়েকটি এলাকায় ১২টি যাত্রীছাউনি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সড়কটির পাশে বেশ কয়েক জায়গায় ফুলের ছোট বাগান, কৃত্রিম ঝরণা, আলোর খেলা, বাহারি মাছের লেকসহ নান্দনিক দৃশ্য তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। সড়কের দুইপাশে কয়েকটি মাউন্টেন ঝরণা বসানো হয়েছে, যা থেকে পাহাড়ি ঝরণার মতো পানি ঝরতে থাকবে। বিমানবন্দর থেকে নিকুঞ্জ পর্যন্ত বাইসাইকেল চালানোর জন্য আলাদা লেন করা হয়েছে।

বদলে যাচ্ছে বিমানবন্দর-বনানী সড়কপ্রকল্প সুত্রে জানা গেছে, রাস্তার দুইপাশে থাকবে ডিজিটাল ডাস্টবিন বক্স। যেখানে ময়লা ফেললেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা চলে যাবে নিচে। সংবাদ শিরোনাম জানতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে এলইডি মনিটর বসানো হবে। যার মাধ্যমে যাত্রীরা গাড়িতে বসেই সারা দেশের খবর বিনামূল্যে জানতে পারবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলার খবর ও বিভিন্ন লাইভ অনুষ্ঠান দেখা যাবে এসব মনিটরে।

ইন্টারনেটের জন্য ফ্রি ওয়াইফাই সংযোগ ও ২৪ ঘন্টা নিরাপদে চলাচলের জন্য পুরো রাস্তায় বসানো হবে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ১৫০০ ক্যামেরা। রাস্তার সব কর্মকান্ড মনিটরিং করতে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র তৈরি করা হবে। আধুনিক এ সড়কটিতে সুপ্রশস্ত দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। সারা রাত রাস্তাটি আলোকিত রাখতে স্বচ্ছ আলোর এলইডি বাতির ব্যবস্থা করা হবে। ৩০ জন গার্ড সড়কটির দেখভালের দায়িত্বে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে। ফলে যে কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনাই কতৃপক্ষের নখদর্পণে থাকবে।

রাস্তায় বের হওয়ার পর আবহাওয়ার খবর জানতে ব্যবস্থা থাকবে। সড়কের ছয় কিলোমিটার এলাকায় মোট ১২টি যাত্রীছাউনি তৈরি করা হবে। এসব যাত্রীছাউনির প্রতিটির মধ্যে থাকবে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক আধুনিক টয়লেট। থাকবে মায়েদের সুবিধার্থে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার। এ ছাড়া এসব ছাউনিতে পথচারীদের জন্য নামাজের স্থান ছাড়াও থাকবে ডিজিটাল বোর্ড। বোর্ডে রাজধানীতে চলাচলকারী গণপরিবহনের কোন বাস কোথায় যাবে ও কখন থামবে তার সময়সহ যাত্রীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাতে নির্দেশনা দেয়া থাকবে।

পথচারীদের আনন্দ দিতে থাকবে হাতিরঝিলের মতো বাহারি আলোর একটি ফাউন্টেইন। এতে বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানের ছবি পানির মধ্যেই ভেসে উঠবে। যা পথচারীরা দেখতে পাবেন। রাস্তার ফুটপাতে প্রতিবন্ধী ও বাচ্চাদের ট্রলি টানার আলাদা লেন, চলার পথে ক্লান্ত হয়ে গেলে বিশ্রাম নিতে তৈরি করা হচ্ছে ১৫০টি গার্ডেন বেঞ্চ ও হাঁটার জন্য আলাদা লেন থাকবে। এ ছাড়া মাঝে মাঝে ছোট ছোট ফুলের বাগান থাকবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধন করতে তৈরি করা হবে কৃত্রিম ঝরণা। রাস্তাটির রাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে থাকবে লাল নীল বাহারি রঙ্গের আলোর খেলা, একুরিয়ামের ন্যয় বাহারি মাছের লেকসহ নান্দনিক দৃশ্য তৈরির কাজ করা হবে। সড়কটিতে বাইসাইকেল চালানোর জন্য থাকবে আলাদা লেন, রোডটির খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ লেকে শিশুদের জন্য পার্ক তৈরি হচ্ছে। সড়কটিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব গাছ, স্বল্প আকারের চা-বাগান তৈরি করা হবে। এ ছাড়া আধুনিক বিভিন্ন জাতের ফুল ও ফলের গাছ লাগানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here