কলিট তালুকদার,পাবনা প্রতিনিধি:: ভাসমান পদ্ধতিতে মৎস্য চাষে স্বনির্ভরতার অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছেন পাবনার বড়াল, হুরাসাগর, গুমানী নদীতে তীরবর্তী এলাকার অনেক বেকার যুবক। ভাসমান মৎস খামারে তুলনামুলক কম খরচে মাছ চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ।
ভাসমান মৎস খামারে মাছ চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার পুঙ্গলী ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান জানান, ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থ এবং ৬ ফুট গভীর ভাসমান মৎস খাচায় তিনি এক হাজার থেকে বার শত মনোসেক্স মাছের পোনা চাষ করে। প্রতি ছয় মাস পর পর স্থানীয় বাজারে ১’শ২০ টাকা থেকে ১’শ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয় এসব মাছ। প্রতি কেজি মাছ উৎপাদনে খরচ হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা।
হাফিজুর রহমান আরো জানান, চাঁদপুর জেলার ডাকাতিয়া নদীতে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা দেখে তিনি অনুপ্রানিত হয়ে ২০১০ সাল থেকে নিজ এলাকার বড়াল নদীতে ভাসমান মৎস খামারে মাচ চাষ শুরু করে অর্থনৈতিকভাবে এখন অনেকটাই স্বচ্ছল তিনি।
ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষে হাফিজুর রহমানের সাফল্য দেখে ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার নাজিমুদ্দিন এবং আব্দুর রাজ্জাক সহ অনেকেই এখন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে সাধারন মানুষের মাধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। শুধু ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলারই নয় ভাসমান পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন উপজেলার কাশিনাথপুরের বাদশা মিয়া।
তিনি প্রায় তিন বছর পূর্বে বেড়া হুরাসাগর নদীতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভাসমান মৎস্য চাষ শুরু করেন। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে বর্তমানে তিনি আর্থিকভাবে যথেষ্ট স্বাবলম্বী হয়েছেন।
বাদশা মিয়া জানান, ভাসমান এ মৎস্য চাষ পদ্ধতিতে রুই, চিংড়ি ও মনোসেক্স তেলাপিয়া এই তিন ধরনের মাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়। জাল, বাঁশ, জিআই পাইপ ও প্লাস্টিকের বড় বড় ড্রাম দিয়ে এই মৎস্য চাষের খাঁচা তৈরি করা হয়। এক একটি খাঁচার দৈর্ঘ্য ২০ ফুট ও প্রস্থ ১০ ফুট। প্রতিটি খাঁচা তৈরি করতে ব্যয় হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। একটি খাঁচায় ১১শ মাছ অনায়াসে চাষ করা হয়। ভাসমান এই মাছ চাষে সময় লাগে মাত্র ৬ মাস। ৬ মাস পর্যন্ত মাছের খাদ্যে ব্যয় হয় ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকা। সার্বক্ষণিক দেখা শোনা করার জন্য ২ জন প্রহরী রয়েছে। প্রতিজন প্রহরীর বেতন ভাতা মাসিক ৮ হাজার টাকা দিতে হয়। একটি খাঁচায় ৬ মাস পর্যন্ত মাছ চাষ করতে প্রথম অবস্থায় খাঁচা তৈরিসহ ব্যয় হয় প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। ৬ মাস পর একটি মাছের ওজন হয় ৮শ গ্রাম থেকে ১ কেজি।
এতে করে একটি খাঁচার মাছ কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়। ৬ মাসের খরচ বাদে প্রতি খাঁচায় আয় হয় ৩০ থেকে ৩৪ হাজার টাকা।
এলাকার মৎসজীবীরা জানান, তাদের কে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহজ শর্তে আর্থিক ঋণ সুবিধা দিলে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে সুফল পাওয়া যাবে।
পাবনা জেলা মৎস কর্মকর্তা আব্দুর রউফ জানান, জেলার ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, বেড়াসহ বিভিন্ন উপজেলার উপর দিয়ে বযে যাওয়া বড়াল,গুমানী ইছামতি হুরাসাগরে ভাসমান মৎস খামারে মাছ চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে স্থানয়ী অনেক বেকার যুবক। বিষয়টির ব্যাপক প্রচার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সহ সহযোগিতায় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে অনেকেই ঋণ সুবিধা পেয়েছে । মৎস্য বিভাগ সহযোগিতার জন্য সব সময় প্রস্তুত আছে।