Sany Sarkerদুর্গাপুজো

সানি সরকার

এই পুজোতে শাড়ি থাক মা।
এই পুজোতে দু-মুঠো ভাত দিও পথের শিশুগুলিকে,
আমার প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন, আর
ঘরের মানুষটিকে ভালো রেখো…

এই পুজোতে আমার আর কিছু চাই না।
ঘরের মানুষটি ঢাক বাজিয়ে ঘরে ফিরলে
ও-আমাকে বসিরহাটে ইছামতী
দ্যাখাতে নিয়ে যাবে বলেছে-

ইছামতী মানে ঢেউ, আমার খুব ঢেউ ভালো লাগে।
ঢেউগুলিকে আমার এক-একটি দস্যি ছোটবেলা মনে হয়…
আর ওই যে আমাদের চন্দননগরের গঙ্গার ওপারে
আবছায়া কঙ্কালসার বাড়িগুলি…
ওদের দেখে মনে হয় আমার জন্মদাত্রী মা,
রিক্সা টেনে টেনে হাড় হিল-হিলে বরেন জ্যাঠা-
ওঁর ভেতর আমি দেখতে পাই,
আমার ফেরার হয়ে যাওয়া
কোনোদিন না দ্যাখা বাবাকে… এই সময় আমার কান্নাপায় খুব, যেন
টুঁটি চেপে ধরতে চায় মৃত্যুর দেবতা।

আমাদের শান্তিপুরের খড়ের বাড়িতে
আমার মা পুজোর সময় রুই মাছ রান্না করতো।
প্যান্ডেলে হিন্দি সিনেমার গান-
পাতে রুই মাছের ঝোল… আহহহ…
তেমন-ই এক বিজয়া দশমীর ভর – সন্ধেয়
ও-আমাকে চুপিচাপি বলল, চল বৈশাখী,
আজ আমরা বিয়ে করবো।
আমি বললাম, বিয়ে করে আমাকে খাওয়াবে কি?
ও-বলল, ভালোবাসা।
মুখ্য-সুখ্য আমার লোকটি কি সুন্দর কাব্যি করলো।
আমি হাসতে-হাসতে নিজেকে গুঁজে দিলাম ওঁর বুকের খাঁচাটিতে…

সেই থেকেই ও-পুজোর সময় হলেই চলে যায় দূরে…
ঘুরে-ঘুরে আমার আর ঠাকুর দ্যাখা হয় না।
এবার যাওয়ার সময় ও-আমাকে বলে গেল,
সামলে থাকিস বৈশাখী।
আমি বললাম, আমাকে কার জিম্মায় রেখে যাচ্ছ?
ফাজিল মানুষটি আমাকে বুকের মধ্যিখানে
টেনে নিয়ে আমার ঠোঁটের সমস্ত নুন নিয়ে নিলো
নিজের ভেতরে, তারপর
আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল,
ভালোবাসার, ভালোবাসার, ভালোবাসার…

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here