এ কে এম শাহেদ, চাঁদপুর

বায়ান্নের শহীদদের রেখে যাওয়া রক্তের ঋণের যথার্থ মূল্যায়ণ তথা সারাদেশের অকুতোভয় বীর ভাষা সৈনিকদের মহান ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পরও রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। দেশব্যাপী সামগ্রীকভাবে দেয়া হয়নি কোন সম্বর্ধনা বা সম্মাননা। তারই ব্যর্থতাময় গ্লানির ধারাবাহিকতায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী মহান স্বাধীনতার স’পতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠীসহ চাঁদপুরের ২৭ভাষা সৈনিকের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি আজও মেলেনি। মেলেনি তাঁদের ভাগ্যে ন্যূনতম কোন সম্মান বা মর্যাদা। এমনকি আজ পর্যন- সরকারিভাবে তাঁদের পরিবারের কোন খোঁজ-খবরও নেয়া হয়নি।
চাঁদপুরের হতভাগ্য এসব ভাষা সৈনিকরা হচ্ছেন যথাক্রমে-সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ মরহুম মিজানুর রহমান চৌধুরী, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এম.পি’র পিতা তৎকালীন পূর্ব-পাকিস-ান ছাত্রলীগের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মরহুম আবদুল ওয়াদুদ পাটওয়ারী, বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহপাঠী প্রবীণ আইনজীবি বিশিষ্ট আওয়ামী রাজনীতিবিদ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক চাঁদপুর মহকুমা যুবলীগ সভাপতি মরহুম এ,এফ,এম ফজলুল হক, বিশিষ্ট সমাজসেবক মরহুম ডাঃ মজিবুর রহমান চৌধুরী, বিশিষ্ট সমাজসেবক মরহুম আবুল কাশেম চৌধুরী টুনু, সাবেক এমপি মরহুম আবদুর রব (ঢাকা জগন্নাথ কলেজের তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা), সাবেক এম,পি প্রবীণ আইনজীবি মরহুম আবদুল আউয়াল, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সাবেক গনপরিষদ সদস্য, চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান,প্রবীণ রাজনীতিবিদ  মরহুম আবদুল করিম পাটওয়ারী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম রফিক উদ্দিন আখন্দ ওরফে সোনা আখন্দ, প্রবীণ রাজনীতিবিদ আইনজীবি শেখ মতিউর রহমান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ এম,এ গফুর, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম বি.এম কলিম উল্লাহ, প্রবীণ রাজনীতিবিদ মোল্লা ছিদ্দিকুর রহমান, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আইনজীবি মরহুম আবু জাফর মোঃ মাইনুদ্দিন, সাবেক এম.পি ফ্লাঃ লেঃ (অবঃ) এ, বি, সিদ্দিক, সাবেক এম.পি মরহুম নওজোয়ান ওয়ালি উল্লাহ, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল হক বাচ্চু মিয়াজী, প্রবীণ আইনজীবি মরহুম আবুল ফজল, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মরহুম শেখ মুজাফ্‌ফর আলী, তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমা ছাত্রলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ, বিশিষ্ট হোমিও চিকিৎসক মরহুম এ,বি খান, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আবদুল করিম খান, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম সুজাত আলী মুন্সী, বিশিষ্ট সমাজসেবক ডাঃ আবদুস ছাত্তার, বিশিষ্ট নারী সংগঠক আমেনা বেগম, তৎকালীন তরুণ সংগঠক মরহুম শাহ্‌ আমান উল্লাহ্‌ মানিক ও বিশিষ্ট সমাজসেবক মরহুম এ,কে,এম ফজলুল বারী।
বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই মূলতঃ মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ তথা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়। ইতিহাসের এই অমোঘ কালের সাক্ষীকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের ঐতিহাসিক তাগিদে দেশের অকুতোভয় ভাষা সৈনিকদেরও মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যায় সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেয়া একান- প্রয়োজন বলে দেশের ইতিহাসবেত্তারা বিশেষভাবে মনে করেন। তা নাহলে আগামী প্রজন্ম দেশের সম্যক ইতিহাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে থাকবে। অথচ আজ সরকারি সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত দেশের কয়েক হাজার অকুতোভয় ভাষা সৈনিক। তাঁদের মতে, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যায় অকুতোভয় ভাষা সৈনিকদের পরিবার-পরিজনদের সরকারি চাকুরীতে কোটাভূক্ত করার পাশাপাশি সকল ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় সনদ প্রদান এবং তাঁদের নামে ব্রীজ ও সড়কসহ বিভিন্ন স’াপনার নামকরণ করা যেতে পারে। ইতিহাসের ওই সূত্র ধরে এ বিষয়টির প্রতি বর্তমান গণতান্ত্রিক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকারকেই সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসের প্রতি যথার্থ সম্মান জানানো হবে।
মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে তথা আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবজনক এবং গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৫২সালের এই ঐতিহাসিক দিনে ভাষার জন্য ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়। এ আন্দোলন দানা বেঁধে সমগ্র পূর্ব পাকিস-ানে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বস-রের মাঝে জ্বলতে থাকে প্রতিবাদের ঝড় ও আগুন। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউর বুকের তাঁজা রক্ত দিয়ে বিশ্ব ভাষার ইতিহাসে অকুতোভয় জাতীয় বীরে পরিণত হন। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন জাতিকে এভাবে ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়নি। তাই এই দিনটির যথাযথ গুরুত্ব বিবেচনা করে বিশ্ব সম্মান হিসেবে জাতিসংঘ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন-র্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই ঐতিহাসিক মর্যাদা এবং গৌরবময় সম্মানের কারণে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি বিশ্ব দরবারে আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখায়। বিশ্বের প্রতিটি দেশ তা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
১৯৫২’র এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস-ানের বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকাসহ প্রতিটি জেলা ও মহকুমায় মায়ের ভাষা ‘বাংলা’র জন্য প্রবল আন্দোলন-সংগ্রাম হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও গড়ে ওঠে ‘রাষ্ট্রভাষা বাস-বায়ন সংগ্রাম পরিষদ চাঁদপুর মহকুমা ইউনিট’। এই ইউনিটের নেতৃত্বে চাঁদপুরের অনেক কৃতি সন-ান ছিলেন যাঁরা ভাষার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। কিন’ তাঁরা আজও ‘ভাষা সৈনিক’ হিসেবে কোন স্বীকৃতি পাননি। কারা সত্যিকারের ভাষা সৈনিক হিসেবে চাঁদপুরের বীর হিসেবে পরিচিত বর্তমান প্রজন্ম তা আজও জানে না। জাতির পূর্ব ইতিহাস থেকে বর্তমান প্রজন্মকে শিক্ষা নিতে হবে। নতুন প্রজন্মকে জাতির সঠিক ইতিহাস জানানো আমাদের সকলের দায়িত্ব। বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে চাঁদপুরের অনেক বীর সৈনিকের অবদান আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের মায়ের ভাষা ‘বাংলা’ ভাষার জন্য সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউর-এর মত আরও অনেক জাতীয় বীরকে তৎকালে প্রাণ দিতে হয়েছে। আবার অনেকে এখনও বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে অবহেলার নির্মম বঞ্চনার শিকারে পরিণত হয়ে অজানা-অচেনা হয়ে বেঁচে আছেন। অনেকে ভাষা সৈনিকের মর্যাদা, সম্মান বা স্বীকৃতিটুকু না পেয়েও এই দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। আমরা এতটাই অকৃতজ্ঞ যে তাদের পরিবারেরও কোন খোঁজ-খবর রাখার এতটুকু প্রয়োজন বোধ করি না। আবার অনেকে ‘জাতীয় ভাষা সৈনিক’ হিসেবে ‘একুশে পদক’ নিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বেঁচে আছেন। মোদ্দা কথা, তৎকালীন ভাষা আন্দোলন শুধু সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউর বা ‘একুশে পদক’ পাওয়া ভাষা সৈনিকদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তা ছিল সারা দেশের আনাচে কানাচে ভাষার জন্য আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা তথা অসংখ্য গুণীজনের প্রাণান- চেষ্টা। যার ফলশ্রুতিতে মায়ের ভাষা ‘বাংলা’ আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষায় পরিণত হয়।
চাঁদপুরের অন্যতম ভাষা সৈনিক শেখ মতিউর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, ‘১৯৫২সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমা শহরে অবসি’ত আহম্মদিয়া মুসলিম হোষ্টেলে (বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ হোষ্টেলে) গোপনে এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ‘রাষ্ট্রভাষা বাস-বায়ন সংগ্রাম পরিষদ চাঁদপুর মহকুমা ইউনিট’ গঠিত হয়। উপসি’ত সকলের সর্বসম্মতিক্রমে ইউনিটের সভাপতি মনোনীত হন তৎকালীন ঢাকা জগন্নাথ কলেজের ছাত্র নেতা আবদুর রব এবং তৎকালে কমিউনিষ্ট পার্টির ছাত্র নেতা চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন রাড়িরচর গ্রামের মোল্লা ছিদ্দিকুর রহমান সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। সেই সাথে আমাকে যুগ্ম-সম্পাদক মনোনীত করা হয়’। ওই সভার মূল উদ্যোক্তাকারী এবং ‘রাষ্ট্রভাষা বাস-বায়ন সংগ্রাম পরিষদ চাঁদপুর মহকুমা ইউনিট’ গঠনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন কমিউনিষ্ট পার্টির ছাত্রনেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এল.এল.বি’র ছাত্র হাজীগঞ্জ উপজেলার মকিমাবাদ নিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা বি,এম কলিম উল্লাহ। তাঁকে বিশেষভাবে সহযোগিতা করেন ছাত্র নেতা মরহুম আবদুর রব এবং ১৯৪৩সালে কলকাতার ইসলামীয়া কলেজে স্ন্লাতক শ্রেণীতে পড়াকালীন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহপাঠী পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের তুখোড় সংগঠক প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা বিশিষ্ট আইনজীবি মরহুম এ,এফ,এম, ফজলুল হক। তাছাড়া উপসি’ত আরও অনেকেই বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
উপরোল্লিখিত ২৭ ভাষা সৈনিক ছাড়াও আরো অনেকে ‘রাষ্ট্রভাষা বাস-বায়ন সংগ্রাম পরিষদ চাঁদপুর মহকুমা ইউনিট’ গঠনের ওই সভায় যোগদান করে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। পরে তৎকালীন ‘রাষ্ট্রভাষা বাস-বায়ন সংগ্রাম পরিষদ চাঁদপুর মহকুমা ইউনিট’এর প্রতিনিধি হিসেবে চাঁদপুরের বিভিন্ন থানায় উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আরও অনেকেই। চাঁদপুরের তৎকালীন ৬টি থানা থেকে তাঁরা এসে এ আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করে আন্দোলনকে আরও গতিশীল ও বেগবান করে তুঙ্গে নেন। তৎকালীন মুসলীম লীগ নেতাদের চরম বিরোধীতার মুখেও আন্দোলন গর্জে উঠেছিল এবং তৎকালীন পাক-পুলিশ নেতা-কর্মীদের হণ্যে হয়ে খুঁজছিলো গ্রেফতার করে জেলে ঢুকানোর জন্য।
ওই গোপন সভায় বায়ান্নের ভাষা শহীদ সালামের রক্তমাখা শার্ট দেখিয়েছিলেন তৎকালীন ছাত্র নেতা বি,এম কলিম উল্লাহ। তিনি ২১শে ফেব্রুয়ারি বুলেটবিদ্ধ সালামকে বাঁচানোর জন্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন’ বি,এম কলিম উল্লাহ শেষ পর্যন- সালামকে বাঁচাতে পারেননি। সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম বীর সালাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সালামের রক্তমাখা শার্ট দেখে চাঁদপুরে ছাত্র-জনতা উত্তেজিতভাবে আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। মূলতঃ এ বিষয়টিই চাঁদপুরে ছাত্র-জনতা আন্দোলনকে আরও বেশি বেগবান ও সম্পৃক্ত করে অর্থাৎ এ বিষয়টি চাঁদপুরে ভাষা আন্দোলনে আগুন ধরিয়ে দেয়। সারাদেশে এ রক্তের আগুনই পরবর্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদেরকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ এবং একটি স্বীয় ভূখন্ডের মানচিত্র ও লাল-সবুজ একটি পতাকা উপহার দানে বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছিল।
চাঁদপুরের আরেক ভাষা সৈনিক বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ এম, এ গফুর স্মরণ করে বলেন, ‘আমি তখন ঢাকা মেডিকেলের এম.বি.বি.এস-এর ছাত্র। ২১শে ফেব্রুয়ারির মিছিলে গাজীউল হক, আবদুল মতিন, অলি আহাদ, আতাউর রহমান খান, আবুল কাশেম (অধ্যক্ষ আবুল কাশেম)-এর ঠিক পিছনে ছিলাম আমি। রাজপথে দেখেছিলাম বুলেটবিদ্ধ রক্তে রঞ্জিত ভাষা শহীদদের শরীর। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের বারান্দায় পড়ে থাকা বুলেটবিদ্ধ সফিউর রহমানকে বাঁচানোর জন্যে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন’ ইতিমধ্যে তিনি শাহাদাত বরণ করেন’। ডাঃ এম, এ, গফুর আরও  বলেন, ‘২১শে ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের উদ্যোগে তাৎক্ষণিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করার সর্বসম্মত প্রস-াব গৃহিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত সিদ্ধান- মোতাবেক ওই রাতেই সেখানে একটি শহীদ মিনার নির্মিত হয়। যা পরদিন শেরে বাংলা এ, কে, ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আতাউর রহমান খানসহ অনেক নেতৃবৃন্দ ও জনতা এসে নব-নির্মিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বঙ্গবন্ধু তখন জেলে ছিলেন । পরে তদানিন-ন পাক-পুলিশ এসে নব-নির্মিত সেই শহীদ মিনার ভেঙ্গে দেয়। এটাই হচ্ছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ও প্রথম ইতিহাস, যা আজ দেশবাসীর কাছে জাতীয় শহীদ মিনার হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত।
এমতাবস’ায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের গণতান্ত্রিক সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য এবং সদিচ্ছা থাকলে সারা দেশের ভাষা সৈনিক যাঁরা মারা গেছেন তাঁদেরকে ‘মরনোত্তর ভাষা সৈনিক’ আর যাঁরা জীবিত রয়েছেন তাঁদেরকেও রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘ভাষা সৈনিক’ এর স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে। তাহলে ইতিহাসের প্রতি যথাযথ পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন এবং দেশের গুণী ব্যক্তিদের প্রকৃত সম্মান অক্ষুন্ন থাকবে বলে পর্যবেক্ষক মহল জোরালো অভিমত ব্যক্ত করেন। এ ব্যাপারে তাঁরা বর্তমান সরকার এবং বিরোধী দলের আশু সুদৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক ত্বরিত হস-ক্ষেপ কামনা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here