নিউজ ডেস্ক।

ঢাকা: শেখ হাসিনাসাধারণত দিন যতই পার হয়, শোক ততই ম্রিয়মান হয়। কিন্তু এক চল্লিশ বছর পরও বাবা হারানোর শোক এতটুকু কমেনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা, মা ও ভাই হারানোর শোক জগদ্দল পাথরের মতো আজও চেপে আছে তার বুকে। আজও এ দিনটি তাকে ‘ইমোশনাল’ করে তোলে। প্রতিবার ১৫ আগস্ট এলেই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যেমন দেখেন শেখ হাসিনাকে, সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তারা এমন কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, বিশেষ করে ৩২ নম্বরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটিতে যখন যান শেখ হাসিনা, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না। সেই বাড়িতে আজ আপনজন নেই কিন্তু তাদের স্মৃতি তো রয়েছ। তারা বলেন, বাবা, মা ভাই হারানোর এই দিনটিতে একটু বেশি শেখ রাসেলের স্মৃতি হাতড়িয়ে বেড়ান শেখ হাসিনা। কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাষায়, আমাদের মনে হয় হিমালয়ের চূড়ায় ওঠা শেখ হাসিনার জন্যে অনেক সহজ হতো, কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এ দিনটি অতিক্রম করা।-বাংলা ট্রিবিউন।

কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, জনক হারানোর এই দিনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুরু হয় ইবাদতের মধ্য দিয়ে। এরপর একমাত্র বোন শেখ রেহানার সঙ্গে কিছুক্ষণ কাটান। এরপর ঐতিহাসিক ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতার সমাধিতে ও টুঙ্গিপাড়ায় সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া, মোনাজাত করেন। দিনটিতে শেখ হাসিনা রোজাও রাখেন। সকালে ধানমণ্ডির বাড়িতে গিয়ে তিনি জাতির পিতাকে যে সিঁড়িতে ঘাতকেরা বুলেটে বিদীর্ণ ক

BERLIN, GERMANY - OCTOBER 25:  Sheikh Hasina Wajed, Bangladesh's prime minister, attends a press conference with German Chancellor Angela Merkel at the Chancellory on October 25, 2011 in Berlin, Germany. Sheikh Hasina Wajed visits Germany during a state visit.  (Photo by Carsten Koall/Getty Images)

রে, যেখানে তার নিথর দেহ পড়ে থাকে, সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে দরুদ পাঠ করেন। তারপরে দৌতলায় গিয়ে নিজের রুমে কোরআন তেলওয়াত করে কিছু সময় পার করেন তিনি। তারা বলেন, তারপর বাবা, মা, ভাই ও ছোট্ট রাসেলের স্মৃতিচারণ করেন। কখনও-কখনও সেখানে থাকা দুর্লভ ছবিতে হাত বুলান তিনি। বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবুতরের বাসাগুলোর সামনে, কখনও বা শেখ কামাল, শেখ জামালের রুমে গিয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। অশ্রু সংবরণের চেষ্টা করেন ঠিকই, কিন্তু ব্যর্থ হন। গাল বেয়ে পড়ে অশ্রুধারা। যেন কিছুতেই দিনটিকে তিনি ভুলতে পারে না, মানতে পারেন না। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ওই দিন নিহত সবার জন্যই কাঁদেন তিনি। দিনের শুরুই করেন নফল নামাজ, দোয়া, পবিত্র কোরআন তেলওয়াত পাঠের মধ্য দিয়ে। ওই দিন অ্যালবাম বের করে পরিবারের সবার দুর্লভ ছবিগুলো দেখেন প্রধানমন্ত্রী। সেই কালোরাতে নিহত সবার ছবি দেখতে দেখতে যখন ওই বাড়ির সবচেয়ে ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলের ছবি দেখেন, তখন একটু বেশিই স্মৃতিতাড়িত হন তিনি।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৫ আগস্ট যতবারই ঘুরে-ফিরে আসে, ততবারই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে একটু বেশি ‘ইমোশনাল’ দেখি। পুরো পরিবারের স্মৃতি তার মানসপটে ফুটে ওঠে, এটা আমরা বুঝতে পারি। ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে যখন আসেন, তখন আরও বেশি আবেগ প্রবণ হয়ে ওঠেন। তিনি যেহেতু বাড়ির বড় মেয়ে ছিলেন, তাই সবই তার মানসপটে ফুটে ওঠে। আর এসব স্মৃতি তাকে তাড়া করে ফেরে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১৫ আগস্টের ভয়াল স্মৃতি সবসময়ই শেখ হাসিনাকে তাড়া করে ফেরে। তবে ১৫ আগস্ট আসলে একটু বেশিই ‘ইমোশনাল’ থাকেন তিনি। দিনের শুরুই করেন নামাজ, কোরআন তেলোওয়াত ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে। এই দিনটিতে ছোট ভাই রাসেলের স্মৃতি তাকে বেশি তাড়া করে ফেরে। মতিয়া বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের কাছে অনেক সময় রাসেলের গল্প করতেন। একদিন তিনি বললেন, রাসেল যখন জন্মগ্রহণ করে তখন আব্বা জেলে। রাসেল পৃথিবীতে আসার পরে প্রথম আমি তাকে কোলে নেই। রাসেলের মাথাভর্তি চুল ছিল। অসম্ভব ভালো লেগেছে রাসেলকে।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে নিজের পিতাকে হারিয়েছেন, অন্যদিকে রাজনৈতিক জনককে হারিয়েছেন। তাই এ দিনটিতে তার মানবিক, পারিবারিক বেদনাবোধ অনেক বেশি। যা আমরা কল্পনাও করতে পারব না। স্বাভাবিকভাবেই এসব স্মৃতি বিশেষ করে এ দিনটিতে তাড়া করে ফেরে তাকে। ৩২ নম্বর বাড়িটি তো তার স্মৃতিবিজড়িত। সেখানে শেখ হাসিনাকে ভিন্ন রকম দেখায়। তিনি বলেন, রাসেলের স্মৃতি প্রায় সময়ই তাকে তাড়া করে, এটা বুঝতে পারি আমরা। কারণ রাসেল সবার ছোট ছিল, বাড়িতে হৈ-চৈ করত। রাসেল তো শেখ হাসিনার সন্তানতুল্য।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ১৫ আগস্টে খুব কাছ থেকে দেখা শেখ হাসিনাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বিরোধী দলীয় নেতা থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সূধাসদনেই থাকতেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। শোক দিবসটি কিভাবে কাটে বাবা, মা ভাই হারানো শেখ হাসিনার সেই সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমার কাছে মনে হয়, এ দিনটি এলে নেত্রী (শেখ হাসিনা) হয়ত মনে করেন হিমালয় অতিক্রম করা সম্ভব কিন্তু ১৫ আগস্ট অতিক্রম করা তার জন্য খুবই কঠিন।

রাসেলের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয় এই দিনটিতে শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি হাতড়িয়ে বেড়ান সন্তাতুল্য ছোট ভাই শেখ রাসেলকে। তবে রাসেলকে তিনি যতটা স্মৃতিতে হাতড়ে বেড়ান, ঠিক ততটা তাকে সামনে আনতে চান না। এটা আমরা বুঝতে পারি। আমার কাছে মনে হয়, তাকে আনতে গেলেই নেত্রীর বুকভাঙা আর্তনাদ বেরিয়ে আসবে, হয়ত তাই। তিনি তো শুধু রাসেলের বড় বোনই ছিলেন না, মায়ের মতো মমতামীয়ও ছিলেন। তাই রাসেলকে তিনি ভেতরেই বেশি ধরে রাখেন। বের করতে গেলে নিজেকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়।

আগস্ট মাস এলে নেত্রীর কাছে মনে হয় এভারেস্ট অতিক্রম করা যায়, কিন্তু ১৫ আগস্ট যে শোক সেই শোককে অতিক্রম করা নেত্রীর জন্যে কঠিন। বিরোধী দলীয় নেত্রী যখন ছিলেন তখন দেখেছি তিনি সারাদিন ৩২ নম্বরে থাকতেন। সারাদিন ইবাদত করতেন। রোজা থাকতেন। এখন তো তিনি প্রধানমন্ত্রী। নানা কর্মসূচিতে যোগ দিতে হয। তিনি প্রথম ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দেন। ঠিক যে জায়গাটায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ‘ডেড বডি’ সিঁড়ির মধ্যে পড়ে থাকে, সেখানে তিনি দীর্ঘক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। ইবাদত করেন। চলে যান সরাসরি তার রুমে। এরপর পুরো সময় সেখানে থেকে কোরআন তেলাওয়াত করেন। রাসেলকে নিয়ে সবসময়ই তিনি স্মৃতি তাড়া করে ফেরেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here