স্টাফ রিপোর্টার :: করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ রোধে সবাইকে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় আবারও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। নিজেকে নিরাপদ রাখতে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অনেকের মধ্যে মাস্ক পরার বিষয়ে নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
সোমবার মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর একথা জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ঘরের বাইরে সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকেও জোর দেওয়া হয়েছে। সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে সচেতনতামূলক পদক্ষেপের সঙ্গে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইন প্রয়োগ করতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারদের সভায়ও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন হলে সেটাও করা হবে। ইমামদের মাধ্যমে প্রতিদিন জোহর ও মাগরিবের নামাজের পরে এ ব্যাপারে মুসল্লিদের তাগিদ দিতেও ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে বলা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাজার, মার্কেট বা গণজমায়েত যেখানে হয়, সেসব জায়গায় ‘অনুগ্রহ করে মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করবেন না’ স্লোগান লেখা থাকবে। এটা কার্যকর করতে বিভাগীয় কমিশনারদের ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেভাবে যতটুকু সম্ভব মানুষকে সব জায়গায় অনুরোধ করে, অনুপ্রাণিত করে বা প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করতে হলেও সেটি করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পাবলিক প্লেসে কোনোভাবেই মাস্ক ছাড়া যাওয়া যাবে না। মসজিদ, জনসমাগম স্থল, বা সামনে দুর্গাপূজায় কোনোভাবেই কেউ যেন মাস্ক ছাড়া না যান, তা নিশ্চিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, সবাই সচেতন হয়ে মাস্ক ব্যবহারে আরও বেশি মনোযোগী হবেন।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার কম :করোনাভাইরাসের মধ্যে চলতি বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ কমেছে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভার ৪৬ শতাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভার ৫৮ শতাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছিল। করোনাভাইরাসের কারণে বিরূপ পরিস্থিতির হওয়ায় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিদ্যমান অগ্রগতি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা ধীর হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মন্ত্রিসভা ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। যদিও গত বছরের ?তুলনায় বাস্তবায়নের হার একটু কম আছে। সেক্ষেত্রে বাস্তব অবস্থা সকলেই বুঝতে পেরেছেন। কভিডের কারণে কাজ কম হয়েছে, সেই কারণে ডিসেম্বরের মধ্যে এটি দ্রুততার সঙ্গে পুষিয়ে নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভার ২৫টি বৈঠক হয়। গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৩টি বৈঠক হয়েছে। ২০১৯ সালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২৫৮টি সিদ্ধান্ত হয়; এর মধ্যে ২৩৮টির বাস্তবায়ন হয়। বাস্তবায়নের হার ৯২ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ১৬৯টি সিদ্ধান্ত হয়েছে; এর মধ্যে ১১৬টির বাস্তবায়ন হয়েছে। বাস্তবায়নের হার ৬৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৭টি আইন জারি করা হয়েছে, প্রক্রিয়াধীন আছে ৩৩টি। এছাড়া ১৭টি নীতি, কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন হয়েছে। এ সময়ে ১৯টি দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক চুক্তি বা প্রটোকল অনুমোদন বা অনুসমর্থন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিসভার জন্য ২৯৭টি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১৫টি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মন্ত্রিসভার বৈঠক ও গৃহীত সিদ্ধান্তের সংখ্যা ২০১৯ সালের ওই সময়ের চেয়ে বেড়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।