Narsingdi pic 01নরসিংদী : সংসারে অভাব গোছাতে স্বপ্ন দেখছিলেন আব্দুর রশিদ। আর সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় পিতা-মাতার আদর ও স্ত্রী, সন্তানের মায়া ত্যাগ করে জীবিকার সন্ধানে সাগর পথে গিয়ে ছিলেন স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায়। আর সেখানে ভাগ্য ফিরানোর পরিবর্তে ফিরেছেন লাশ হয়ে।

জানা যায়, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের সীমারবাগ গ্রামের আতাবুদ্দিনের ছেলে আব্দুর রশিদ (৪৫) দালালের খপ্পরে পড়ে সাগর পথে গিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। ওই খানে টাকার জন্য দালাল ও মালয়েশিয়ান পুলিশের হাতে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যায় আব্দুর রশিদ।

মঙ্গলবার আব্দুর রশিদের লাশ ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌছলে তার বড় ভাই আবুল কাশেম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে তার লাশ গ্রহণ করেন।

এ খবরে সীমারবাগ গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া ও পরিবারে বয়েছে শোকের মাতম। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও প্রতিবেশীরাও। গ্রামবাসীরা এক নজর আব্দুর রশিদের লাশ দেখার জন্য ভীড় জমায় তার বাড়ীতে ।

আব্দুর রশিদের স্বজনরা জানায়, আব্দুর রশিদ বেকার অবস্থায় দীর্ঘদিন জীবন চর্চার পর গত ২৭ মার্চ বাড়ীর কাউকে কিছু না জানিয়ে রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ গ্রামের জমির উদ্দিন নামে এক দালালের খপ্পরে পড়ে সাগর পথে মালয়েশিয়ার পাড়ি জমায়।

কয়েকদিন নিখোঁজ থাকার পর একদিন দালাল জমির উদ্দিন মোবাইল ফোনে রশিদের বড় ভাই কাশেমকে জানায়, রশিদ তার তত্ত্বাবধানে মালয়েশিয়ার পথে সমুদ্রের জাহাজে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। টাকা না দিলে তাকে জাহাজ থেকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো যাবে না। আর মালয়েশিয়ায় না যেতে পারলে জাহাজের ভিতরেই কষ্ঠ করে তাকে মরতে হবে। এখবর বাড়ীতে পৌছার পর রশিদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। শেষ পর্যন্ত রশিদকে বাঁচানোর জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় ভাই আব্দুল কাশেম ২৮ এপ্রিল আড়াই লাখ টাকা দালাল জমির উদ্দিনের হাতে তুলে দেন। এর পর দালাল জমির উদ্দিন অন্য দালালের মাধ্যমে তাকে মালয়েশিয়ার জঙ্গলে ছেড়ে দেয়। পরে অনেক ঘটনাক্রমে আব্দুর রশিদ মালয়েশিয়ান পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়। দীর্ঘদিন অনাহার ও অর্ধাহারে থাকার পর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বন্দিশিবিরে বন্দী অবস্থায় অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ২৬ জুলাই আব্দুর রশিদ আশ্রয় কেন্দ্রেই মারা যায়। এখবর বাঙ্গালী মহলে ছড়িয়ে পড়ার পর হারুন ও নয়ন নামে দুই বাঙ্গালী আব্দুর রশিদের লাশ আশ্রয় শিবির থেকে উদ্ধার করে নিজেদের খরচে বিমানযোগে বাংলাদেশে প্রেরণ করে।

খবর পেয়ে তার বড় ভাই আবুল কাশেম মঙ্গলবার বিমানবন্দরে গিয়ে ছোট ভাই আব্দুর রশিদের লাশ গ্রহন করে গ্রামের বাড়ী নিয়ে যায়।

পরে বিকালে আব্দুর রশিদের নামাজে জানাজা শেষে তার গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

রশিদের বড় ভাই আবুল কাশেমার অভিযোগ, রশিদকে মালয়েশিয়ায় নেওয়া দালালদের বিরম্নদ্ধে গত ২৫ জুন জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তের দায়িত্বভার দেওয়া হয় রায়পুরা থানাকে। কিন্তু তারা আজ অবধি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম বলেন, রশিদের পরিবার মামলা করেনি। পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে মাত্রা। তার ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনার সত্যতা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করছে। লাশ দাফনের পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পরিবারের লোকজন আসলে মামলা করাসহ যা ব্যবস্থা নিতে হয় সব করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here