মো: আজাদ হোসেন::  বিজয়ের মাস আসলে মনে পড়ে যায় আমাদের স্মৃতিকাতর সেই ১৯৭১ সালের কথা। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করেছে আমাদের দেশের তরুণ-যুব ও নানা পেশার শ্রমজীবী মানুষ পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে। যোদ্ধাদেরা হয়ত উন্নত অস্ত্র ছিল না , কিন্তু তাদের মনে ছিলো অসীম সাহস। তাদের চিন্তা চেতনায় ছিলো আমাদের এই পরাধীন ভূখণ্ডকে স্বাধীন করা। মুক্তি সংগ্রামের অকুতোভয়ের অধিকারী ছিল বাংলার দামাল তরুনরা। তরুনেরা আজও আছে ৷ তবে সে সময়ের তরুণ নয় বর্তমানের তরুণ। বিজয় দিবসে এই প্রজন্মের তরুনদের দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। সামনে নিয়ে আসে পূর্বসূরীদের আত্মত্যাগের মহিমা।

বিজয়ে ৫১ তম বর্ষে এসে বিজয় দিবস নিয়ে কি ভাবছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা? বিজয় নিয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে তাদের ভাবনা তুলে ধরছেন মোঃ আজাদ হোসেন।

অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুর রহমান রিফাত বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। প্রায় ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক-হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এর মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন এক দেশের জন্ম হয়, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। এই দেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটি শহীদের রক্তের ও মা বোনের সম্মানের বিনিময়ে কেনা। একজন বাঙালি হিসেবে এই ইতিহাস কখনও ভুলবার নয়। বিশেষত ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় উৎযাপন এর সাথে সাথে এ কথাই স্পষ্ট করে মনে করিয়ে দেয়। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের একটি জাতীয় দিবস। সাধারণত জাতীয় দিবস গুলোর দিন ন্যাশনাল প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজ প্রদর্শনী হয়, কুচকাওয়াজে সামরিক(সেনা, নৌ ও বিমান) বাহিনী, বেসামরিক বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন গুলো অংশ নিয়ে থাকে। যেটা আমার বরাবরই ভালো লাগে, প্রতিবছর এই দিনগুলোর জন্য আমি অপেক্ষা করে থাকি। ১৬ ডিসেম্বরে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বিজয়ের আমেজ উপভোগ করার মজাই আলাদা। দেশব্যাপী একটা উৎসবমূখর পরিবেশ বিরাজমান থাকে, বিভিন্ন জায়গায় বিজয় মেলা বসে। এছাড়াও বাড়িঘর যানবাহন সর্বত্র শোভা পায় লাল সবুজের পতাকা। ছেলেবুড়ো সকলেই মেতে উঠে বিজয়ের উল্লাসে।
সকল কিছুর উর্ধ্বে ১৬ ডিসেম্বর হলো আমার কাছে অনুপ্রেরণা, আমার বাঙালিয়ানা চেতনার উৎস। ১৬ ডিসেম্বর থেকে আমি ভেতরে ভেতরে এক প্রকান্ড শক্তি অনুভব করি।

তিতুমীর কলেজ থেকে সদ্য গ্র‍্যাজুয়েশন শেষ করা মোঃ মানিক হোসেন সরকার বলেছেন,বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ নেতৃত্বে প্রায় ৩০ লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে (১৬ই ডিসেম্বর) আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। যার কল্যাণে আজকে আমারা স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করতে পারছি।
গত একযুগে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির দিক থেকে যে অকল্পনীয় সাফল্য অর্জন করেছে, তা বিশ্ববাসীর কাছেও বিস্ময়। বঙ্গবন্ধু যদি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার না হতেন, যদি আর কিছু দিনও বেঁচে থাকতেন, তাহলে এই বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৫১তম বছরে এসে বিশ্বের সমৃদ্ধশালী দেশগুলোর একটি হিসেবে গৌরবের আসন নিশ্চিত করতে পারত। কিন্তু পরাশক্তিসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দেশি-বিদেশি নানা শক্তির গভীর চক্রান্ত সেই স্বপ্ন নস্যাৎ করে দিয়েছিল জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে। বিলম্বে হলেও আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুহম্মদ শাহজাহান সিরাজ বলেছেন,উপমহাদেশে ভারত পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম ধর্মের ভিত্তিতে হলেও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্মের পিছনে রয়েছে ২৩ বছরের বৈষম্যের ইতিহাস। সামরিক শাসন, মার্শাল ল জারি করে মানুষের অধিকার হরণ, অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা,দুর্বল প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বৈষম্য তাদের মধ্যে অন্যতম। আজ বিজয়ের ৫১ বছরে পদার্পণ করেছে জাতি। স্বাধীনতার যে মহান লক্ষ্য গুলো সামনে রেখে আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম, এখনো তার সবগুলো পূরণ হয়নি।তাই বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ পেতে আমাদের আরো দায়িত্বশীল ভাবে কাজ করতে হবে,একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক,সমৃদ্ধ ও সাম্যের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মানে। তবেই সার্থক হবে,লাখো শহীদের আত্মত্যাগ। বিজয়ের এই দিনে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি দেশমাতৃকার জন্যে জীবন দেওয়া সেই শহীদের।এই জাতি তোমাদের ভুলবে না।

অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সোহানুর রশিদ হিজল বলেছেন, ১৬ ই ডিসেম্বর সব বাঙালিরই নিজ সত্তার সাথে পরিচিত হবার দিন৷ এই দিনটিতে শুধু স্বাধীনতা অর্জন করিনি, অর্জিত হয়েছে বাঙালি জাতির নিজেদের কথা বলার অধিকার, মাছে-ভাতে বাঙালি এই পরিচয় দেবার অধিকার। আমাদের কাছে ১৬ই ডিসেম্বর যেন নিজেদের বার বার করে ফিরে পাওয়ার দিবস। অবশ্যই আমি বাঙালি হতে পেরে গর্বিত। তবে একটু আফসোস থেকেই যায়, সবসময় মনে হয় যদি এই বয়সে ৭১ এ থাকতাম বুকের সম্পূর্ণ তাজা রক্তটুকু দিয়ে দিতে পারতাম দেশ মাতৃকার জন্য তাহলে হয়তো নিজেকে আর পরিবারকে আরেকটু গর্বিত মনে করার সুযোগ টা পেতাম। আমাদের গ্রামে একজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন সময় পেলেই তার কাছে গিয়ে ৭১ এর ঘটনা গুলো শুনতে চাই।সেও বলে একবুক গর্ব নিয়ে। আমি অবাক হয়ে শুধু শুনি। যদি দেশের জন্য কখনো জীবন দেওয়ার সুযোগ আসে, এক মুহুর্তও চিন্তা না করে বুকের সব রক্ত বিলিয়ে দিতে একটুও চিন্তা করবো না ইনশাআল্লাহ।

অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃজনি সাজ বলেন, ১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে আমরা পাক হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে এদেশ স্বাধীন করেছি। তাই আমরা ১৬ই ডিসেম্বর এই দিনটিকে অনেক গুরুত্ব সহকারে দিনব্যাপী পালন করি। যেখানে সকলেই একজন আরেকজনকে শত্রু না ভেবে একে অন্যের মিত্র হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জন্য কাজ করে যাবে । যেখানে নিজের মানুষের ভিড়ে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কাউকেই ভাবতে হবে না। আমরা স্বাধীন দেশের একটি ক্ষুদ্র বস্তুও হবে প্রতিটি মানুষের জন্য নিরাপদ। মাথার উপরের এক আকাশ আর পায়ের নিচের একই মাটির মানুষের মধ্যে থাকবে না কোনো দ্বন্দ। আর এসব উদ্দেশ্যেই তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ করা, লক্ষ লক্ষ প্রাণ বিলিয়ে দেয়া অতঃপর বিজয় নিয়ে আসার মূলে ছিল। আমাদের দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশা ছিল দেশটা তো এমনি হবে। এতকষ্টে অজির্ত বিজয় ও বীরদের জীবন উৎসর্গ কেবল তখনই পূর্ণ মূল্যায়ন হবে যখন নিজেরা নিজেদের আপন ভাবতে পারব কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে চলতে পারব। তবেই এই বিজয়ের পূর্ণ স্বাথর্কতা নিশ্চিত হবে।

অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাসিম ইকবাল বলেছেন, “ডিসেম্বার মানে দীর্ঘ শ্বাস,
ডিসেম্বর মানে আত্মবিশ্বাস।” এই ডিসেম্বরে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনে এই বাংলার বীর দামাল ছেলেরা। বাংলার আকাশে যে কালো ছায়া ছিল তা দূর করতে তারা সক্ষম হয়। যেমন করে শীতের পরে আসে বসন্ত , শীতের ঝরা পাতাগুলো বসন্তে যেমন করে গজায়, যেমন করে মাঠ ভরে যায় চিরলতার সবুজ পাতায়। তেমন করে বাঙ্গালীদের মনে ও জীবনে নেমে আসে বসন্ত, নেমে আসে সুখের সময়। আজ সেই ১৬ ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে বাঙালি লক্ষ কোটি সালাম ও শ্রদ্ধা। যাদের বিরত্বের কারণে আমরা পেয়েছি এই মহান বিজয় ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here