ব্যারিস্টার মিতি সানজানা এই সময়ের জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব। তিনি লিগ্যাল কাউন্সেল নামক একটি স্বনামধন্য কর্পোরেট চেম্বারস এর পার্টনার। তিনি কোম্পানি আইন, জমিজমা সংক্রান্ত আইন, বিদেশী বিনিয়োগ, আইটি, শ্রমআইন, চাকুরি সংক্রান্ত আইন, পারিবারিক আইন যেমন বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশে প্রায় ৫০০ র উপর বিভিন্ন দেশি, বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে প্রায় একযুগেরও বেশি সময় ধরে আইনি সেবা দিয়ে আসছে তাঁর প্রতিষ্ঠান লিগ্যাল কাউন্সেল।
ইউনাইটেড নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম: আমাদের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
.
মিতি সানজানা: বাংলাদেশের এ সংবিধান মানবাধিকার, সুশাসন নিশ্চিতকরণ, মৌলিক নীতির বাস্তবায়ন ও মৌলিক অধিকার রক্ষায় নিশ্চয়তা বিধান রয়েছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে৷ তবে আমাদের সরকার রোহিঙ্গাদের পু্র্নবাসনের উদ্দেশ্যে ভাসানচরে শরণার্থী ক্যাম্প স্থাপন করেছে। তাঁদের পুর্নাঙ্গ জীবন লাভের একটি সুযোগ দিয়েছে। এর থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশের মধ্যে নয় সারা বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। সারা বিশ্বব্যাপী তা প্রসংশিত হয়েছে। তবে অতি দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমিতে ফিরিয়ে দেয়ার সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে আমি মনে করি।
.
ইউনাইটেড নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম: দেশে বিভিন্ন সময়ে যে বিক্ষিপ্ত ঘটনাগুলো ঘটছে তাতে বলা চলে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এ নিয়ে আপনি কি বলবেন?
মিতি সানজানা: যে ঘটনাগুলো সম্পর্কে বলছেন বাংলাদেশে না শুধু সারা পৃথিবীতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। এসব ব্যর্থতায় রাষ্ট্রের দায় অবশ্যই আছে। রাষ্ট্র যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারে সেখানে সামাজিক বিপর্যয় আসতে পারে। তবে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে এককভাবে দায়ী করার সুযোগ নেই। এই অধিকার রক্ষায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে, সামাজিক পর্যায়ে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সবার দায়িত্ব রয়েছে। সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করলে, তখনই এ থেকে উত্তরণ ঘটা সম্ভব।
.
ইউনাইটেড নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম: পত্র-পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে নারী নির্যাতন-ধর্ষণ ৷ তাহলে কিভাবে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে?
.
মিতি সানজানা: নারী অধিকার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে নারী অধিকার নিয়ে অনেক আইন আছে, শিশু নির্যাতন রোধে আইন রয়েছে। ২০১০ সালে পারিবারিক সহিংসতা সুরক্ষা আইন করা হয়েছে। যেখানে একজন নারী শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, যৌন হয়রানির শিকার হলে কি প্রতিকার পাবে তা বলা হয়েছে। কিন্তু এই আইনগুলোর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। আর শুধু আইন দিয়ে বাস্তবায়ন করলেই হবে না প্রত্যেকটা মানুষের কর্তব্য নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কাজ করা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেওয়ার আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ধর্ষণকে জঘন্যতম অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে আইন থেকেও লাভ হবে না। নারীকে আসলে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে ভোগের বস্তু নয়। পারিবারিক শিক্ষা এখানে অত্যন্ত গুরুতপূর্ণ।
ইউনাইটেড নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত?
.
মিতি সানজানা: যখন আমি কঠিন আইন প্রণয়ণ করছি, সংশোধনের মাধ্যমে আমি নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করছি, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন আইন তৈরি করা হচ্ছে তা অবশ্যই রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর। তবে আইন প্রণোয়নের পাশাপাশি দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা খুবই জরুরি। বিচার ব্যাবস্থা যদি দীর্ঘসূচিতা লাভ করে তখন তা ভিকটিম এর প্রতি একটি অবিচার বলে আমি মনে করি। বিচারের মূল উদ্দেশ্য মামলার রায় প্রদান করে বাদী-বিবাদীর মধ্যকার বিবাদ নিষ্পত্তি করা। স্বাভাবিকভাবেই যত দ্রুত ও অল্প সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা যায় ততই উভয় পক্ষের জন্য তা কল্যাণকর। এতে অত্যাচারের শিকার ব্যক্তির ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রতীক্ষার অবসান ঘটে এবং অত্যাচারীর ত্বরিত শাস্তি হয় এবং অত্যাচারও বন্ধ হয়।
ইউনাইটেড নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম:মানবাধিকার রক্ষায় নাগরিকদের কি কর্তব্য আছে বলে আপনি মনে করেন?
.
মিতি সানজানা: প্রত্যেক নাগরিকে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নিজের কোন কার্যকলাপ থেকে অন্য কারো অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বা ব্যাহত হচ্ছে কিনা সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে হবে। অন্যের মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা এবং অন্যের অধিকারের প্রতি পূর্নাঙ্গ শ্রদ্ধাবোধ থাকলেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে। সেই সাথে আইন ও বিচারব্যবস্থার উপর আস্তা রাখতে হবে।
.
ইউনাইটেড নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম: বাংলাদেশে মানবাধিকার পুরোপুরি রক্ষিত হচ্ছে কিনা?
.
মিতি সানজানা: আমি মনে করি, কোথাও ব্যত্যয় ঘটছে অনেক ক্ষেত্রে ভঙ্গ হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ মানবাধিকার রক্ষায় পূর্ণ সমর্থন ও সদিচ্ছায় কাজ করছে।