প্রবাসীদের পাশে ২৪ ঘন্টা : প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক
প্রবাসীদের পাশে ২৪ ঘন্টা : প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক বিদেশগামী কর্মীদের সেবায় সর্বত নিয়োজিত রয়েছে। এ ডেস্কে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বর্হিগমনের যে কোন ধাপে অত্যন্ত আন্তরিক ও সহযোগীতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে বিদেশগামীদের সার্বিক সহযোগীতা করে থাকেন। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার বিদেশগামী ও আগমনী যাত্রী এ ডেস্ক থেকে সার্বিক সহযোগীতা নিয়ে থাকেন। চলমান বৈশি^ক মহামারি কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে কাজ হারিয়ে দেশে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের সার্বিক সহযোগীতায় যেমন এয়ারপোর্টে তাদের খাবার-পানি ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরন, আগমনী যাত্রীদের স্বাস্থ্য ফরম পুরণে সহায়তা করা। মার্চ ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত প্রায় পঁচিশ হাজার ফেরত কর্মীকে বিভিন্ন এনজিও এর সহায়তায় শুকনো খাবার-পানি-মাস্ক-হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদি সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব ইমরান আহমেদ এমপি ও মাননীয় সচিব জনাব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন গণের সু-স্পষ্ট ও বিচক্ষণ নির্দেশনায় দেশের করোনা পরিস্থিতিতে ২০২০ সালে লকডাউন চলাকালীন বিদেশে ফেরত প্রত্যেক কর্মীকে এয়ারপোর্টের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে নগদ পাঁচ হাজার করে প্রায় তিন কোটি টাকা বিতরন করা হয়, যাতে বিদেশ ফেরত কর্মীরা নিরাপদে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন।

এছাড়াও নারী কর্মী যারা কর্মস্থলে নিজেকে খাপখাইয়ে নিতে না পেরে এক বছরের মধ্যে দেশে ফেরত আসেন তাদেরকে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে নগদ পাঁচ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। গত ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে ১০ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত ১০২০ জন নারী কর্মীকে পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ৫১,০০,০০০ (একান্ন লক্ষ) টাকা বিতরন করা হয়। এ আর্থিক অনুদান বিতরনে মুলত: মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের বিচক্ষণ তত্ত¡াবধান থাকায় শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের প্রধান সেবা হচ্ছে বিদেশগামী কর্মীদের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটি’র বর্হিগমন ছাড়পত্র (স্মার্টকার্ড) এর সঠিকতা যাচাই ও সত্যয়ন পূর্বক বর্হিগমন অনুমতি প্রদান করা। এ সময় ডেস্ক হতে কর্মের সন্ধানে ভিসা নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীদের সার্বিক সহায়তা করা হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কর্মতৎপরতার কারণে অবৈধ বা অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায় বিদেশগমন সাম্প্রতিক সময়ে শতভাগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এক্ষেত্রে বিএমইটি’র মহাপরিচালক মো: শামছুল আলম মহোদয়ের ভুমিকা ও নির্দেশনা অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে। মুলত: মহাপরিচালকের তীক্ষè নজরদারীর কারণে বর্তমান সময়ে মানবপাচারের মত অপরাধমুলক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়াও বিদেশগামীদের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত যেকোন জটিলতায় প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক সর্বত্র কাজ করে যাচ্ছে। সৌদি আরব থেকে ছুটিতে এসে পুনরায় গমনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক কর্মীর ভিসা/ছুটির মেয়াদ যাচাইপূর্বক সত্যয়ন করে ইমিগ্রশণ কার্যক্রমকে আরো সহজ ও গতিশীল করেছে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক।
এছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্য রয়েছে বিদেশে মৃত বাংলাদেশি কর্মীর লাশ যথাযথ ওয়ারিশদের কাছে হস্তান্তর করা এবং এ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজে বিমানের কার্গো শাখার সাথে সমন্বয় করে মৃতের ওয়ারিশকে সহায়তা প্রদান করা। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে মৃতের লাশ হস্তান্তরের সময় তাৎক্ষনিকভাবে ওয়ারিশের নিকট লাশ পরিবহন ও দাফন খরচ বাবদ ৩৫,০০০/- টাকার চেক প্রদান করা হয়। লাশ পরিবহন ও দাফন খরচ বাবদ জানুয়ারী ২০২০ হতে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত আগত ২,৯০৬ জন মৃত কর্মীর পরিবারকে প্রায় ১০ কোটি ১৭ লক্ষ ১০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অর্থায়ন ও বোর্ডের মহাপরিচালক মো: হামিদুর রহমান মহোদয়ের সার্বিক তত্ত¡াবধানে এ আর্থিক অনুদান প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মহাপরিচালকের নির্দেশনা মত মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশদের সেবা ও অসুস্থ কর্মীর সহযোগীতার ক্ষেত্রে যুগান্তরকারী ইতিবাচক পরিবর্তন সুচিত হয়েছে। লাশ হস্তান্তরের সময় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে পরবর্তীতে বিএমইটির জেলা অফিস- জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের মাধ্যমে মৃতের পরিবারের জন্য তিন লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদান পাওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়।
প্রবাস ফেরত কর্মী অসহায় অবস্থায়, যার কাছে বাড়ি যাওয়ার ভাড়া নাই এমন প্রবাসীকে বিভিন্ন এনজিওর সহায়তায় গন্ত্যব্যে পৌঁছানোর ভাড়া বা অনেক সময় প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তত্ত¡াবধানে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয় এবং প্রবাস ফেরত অসুস্থ/মানসিক বিকারগ্রস্থ কর্মী দেশে ফিরলে তাদের রিসিভ করে তাদেরই নিকট আত্মীয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গুরুতর অসুস্থ কর্মীর ক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের এম্বুলেন্সযোগে ঢাকা মেডিকেল ও অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও গুরুতর অনেক অসুস্থ কর্মীকে দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইং এর ব্যবস্থাপনায় ডাক্তার/নার্স এর সহায়তায় দেশে প্রেরণ করা হয়। এক্ষেত্রে সফরসঙ্গী ডাক্তার/নার্স এর ঢাকায় অবস্থানকালীন হোটেলে থাকা-খাওয়া ও পুনরায় ফিরে যাওয়ার সার্বিক সহযোগীতা কার্যক্রম প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে স¤পাদন করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here