নারীকে অর্ধনগ্ন করে গাধার পিঠে চড়িয়ে শাস্তিদিল্লি :: ভারতের রাজস্থানে গ্রাম্য পঞ্চায়েতের নির্দেশে চল্লিশ বছর বয়সী এক নারীকে নগ্ন করে, গাধার পিঠে চাপিয়ে ঘোরানো হয়েছে। তার মাথা মুড়িয়ে মুখে লেপে দেওয়া হয়েছিল কালো রংও! ওই নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনিই নাকি তার এক আত্মীয়র মৃত্যুর জন্য দায়ী।

শনিবার বিকেলে তাদের জাতের বিচারসভায় মহিলাকে ওই বর্বর শাস্তি দেওয়ার পর খবর পেয়ে বেশি রাতে পুলিশ ছুটে যায়, তারপর গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত মোট ৩৯জনকে। নির্যাতিতা মহিলাকে এখন পুলিশি পাহারায় রাখা হয়েছে, চেষ্টা চলছে সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও!

এই নৃশংস ও পাশবিক ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, সেটি রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরে, রাজসমন্দ জেলার কুম্ভলগড় এলাকায়।

শনিবার বিকেলের ওই পাশবিক ঘটনাটির বিবরণ দিতে গিয়ে রাজসমন্দ জেলার পুলিশ সুপার শ্বেতা ধনকর বলেছেন, ৮ই নভেম্বর রাত এগারোটার সময় তারা খবর পান যে ওই মহিলাকে বিবস্ত্র করে, মাথা কামিয়ে দিয়ে আর মুখে কালি লেপে গাধার পিঠে চাপিয়ে ঘোরানো হয়েছে। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছুটে যায়, অভিযুক্ত ৩৯ জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি জানান, ওই মহিলাকে দসানা রাজপুতদের নিজস্ব রীতি-মাফিক সালিসি-সভা থেকেই ওই শাস্তি দেওয়া হয়েছিল – কারণ কিছুদিন আগে ওই মহিলার এক সম্পর্কিত দেবরের মৃত্যুর জন্য তাকেই দায়ী করা হয়েছিল!

দিন-কয়েক আগে ওই ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশকে কিছু জানানোও হয়নি, যদিও সেটা আত্মহত্যা ছিল বলেই পুলিশ এখন ধারণা করছে। কিন্তু ওই মহিলা ও তার পরিবার যে জাতের, সেই গোষ্ঠীর মাতব্বররা গ্রামে বিচারসভা ডেকে রায় দিয়ে দেন ওই মহিলাই যুবকটির মৃত্যুর জন্য দায়ী।

রাজসমন্দের এমপি হরিওম সিং রাঠোর বলেছেন, পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপের আগেই যে এমন একটি ঘটনা ঘটে যেতে পারল তা অত্যন্ত লজ্জার। ওই গ্রামটি আদিবাসী-অধ্যুষিত অনগ্রসর এলাকা হিসেবেই পরিচিত, যদিও নির্যাতিতা মহিলা ও অভিযুক্তরা কেউই কিন্তু আদিবাসী নন। এরা সবাই রাজপুত সমাজেরই একটি অংশ, দসানা রাজপুত জাতের।

মি. রাঠোর বলেছেন, “তাদের মধ্যে নিজস্ব বিচারসভা বসানোর রেওয়াজ আছে ঠিকই, কিন্তু যেভাবে প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে তারা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়েছে ও ওই মহিলার সাথে বর্বর আচরণ করেছে সেই অধিকার কিছুতেই তাদের দেওয়া যায় না।”

ঘটনাটি ঘটার পর ওই মহিলার স্বামী উদয় সিং অনেক সাহস সঞ্চয় করে পুলিশে খবর দিয়েছিলেন, তার অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ এতজন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ সুপার শ্বেতা ধনকর জানিয়েছেন, ওই নারী এখন অনেকটা স্বাভাবিক আছেন। -সূত্র বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here