টিপাই মুখ বাঁধ- আরেক মরণ ফাঁদ ! জাগো দেশবাসী জাগো, মরণের আগে জাগো, টিপাই মুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধ কর। মেঘনা নদী বাঁচাও- শীতলক্ষ্য বাঁচাও সুরমা, কুশিয়ারা, বাংলাদেশ বাঁচাও- এই শ্লোগান নিয়ে সর্বনাশা টিপাই মুখ বাঁধ নিমার্ণের প্রতিবাদে সোমবার সোনারগাঁয়ের বারদী খেয়া ঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদীতে সকালে ভাসমান ট্রলারে নদী কেদ্রীক শ্রমজীবি মানুষ ও ছাত্র জনতার একটি সমাবেশ অনুষ্ঠীত হয়। সংগঠনের আহ্বায়ক এ টি এম কামালের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সোনারগাঁ প্রেসক্লাবের সভাপতি বাবুল মোসারফ, সাধারন সম্পাদক ফজলে রাব্বি সোহেল, কলেজ লাইফ এর সভাপতি শহিদুলল্লাহ  রাসেল, প্রতিরোধ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রির্চাড সৌরভ দেউরি, সদস্য বিলস্নাল হোসেন, মাসুম মোলস্না, শিক্ষক ইসমাইল হোসেন, শফিকুল কবির ভূইয়া রিপন, কবির হোসেন মৃধা, ইমন কুমার বনিক ফিরোজ কবির সরকার, তাজুল ইসলাম, আসিকুর রহমান আলী প্রমুখ। এ সময় বিভিন্ন সামাজিক ও সাস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে এই কর্মসূচীকে সমর্থন জানান ও সংহতি বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে বক্তাগন বলেন, সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত বিশেষ করে মণিপুর, মিজোরাম ও আসাম রাজ্যের লাখ লাখ আতংকিত, ক্ষুদ্ধ জনতা এবং বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট, কুমিলস্না ও ময়মনসিংহের উদ্বিগ্ন কোটি মানুষের মতামত ও প্রতিবাদের পরও শেষ পর্যন্ত গত ডিসেম্বর মাসে ভারতের কেন্দ্রীয় শক্তি মন্ত্রণালয় মণিপুর রাজ্যের টিপাইমুখ নামক স্থানে বরাক ও টুইভাই নদীর সংযোগ স্থলের কাছে বহুল নিন্দিত টিপাইমুখ বহুমূখী বাঁধ প্রকল্পের বাস্তবায়নে সম্মতি প্রদান করেছে। এটির নক্সা চূড়ান্ত, প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই। সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত থেকে ১০০ কিঃ মিঃ দূরে নির্মিত হবে এই নদী সংহারক বৃহৎ বাঁধ। এর দৈর্ঘ্য হবে ১৫০০ ফুট ও উচ্চতা হবে ৫০০ ফুট। এই বাঁধের কাংখিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ড়্গমতা হবে ১৫০০ মেগাওয়াট, ন্যুনতম প্রাথমিক উৎপাদন মাত্রা হবে কমপড়্গে ৪ শত মেগাওয়াট। বক্তারা বলেন, বাঁধটি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত নর্থ ইষ্ট ইলেট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন (নিপকো) আগামী ২০১২ সালে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার কথা ভারতীয় সরকারকে নিশ্চিত করেছে। অথচ খোদ ভারতীয় জনগণই এই বাঁধ নির্মাণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কারণ কথিত পরিমানের বিদ্যুতের বদলে মণিপুর, মিজোরাম ও আসামের মানুষ ও পরিবেশ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে, বরাক ও অন্যান্য নদীর পানি প্রবাহ হ্রাস পাবে ১৭,৩৫৪ কিউসেক। বাঁধ সংলগ্ন বিরাট এলাকা জলমগ্ন হবে, বিনষ্ট হবে তাদের ২৭,২৪২ হেক্টর বন ও পাহাড়ী ভূমি। আমরা জানি বরাক নদীই বাংলাদেশে প্রবেশের পর সুরমা ও কুশিয়ারার বিভক্ত হয়েছে যা পরবর্তীতে আবার যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে মেঘনার। অর্থাৎ বরাক-সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনা একই পানি যা সর্বমোট ৯৪৬ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত হয়ে আছে। এর মধ্যে ভারতে রয়েছে ২৭৭ কিলোমিটার আর ৬৬৯ কিলোমিটার বাংলাদেশে। আমরা জানতে পেরেছি যে, ভারত শুধু জলবিদ্যুতের জন্য টিপাইমুখ বাঁধ বানিয়েই ক্ষান্ত হবেনা, বরাকের আরেকটু উজানে ফুলারতল এলাকায় তারা আরেকটি সেচ-ব্যারাজও নির্মাণ করবে। যার মাধ্যমে শীতকালে প্রচুর পানি কৃষিকাজের জন্য বরাক থেকে সরিয়ে নেয়া হবে। এসব বাঁধ নির্মিত হলে এই দীর্ঘ এলাকার পানি সরবরাহ হ্রাস পাবে, পাহাড়ী ও সমতল বন, গাছ-গাছালি, ফল-ফসল, কৃষি উৎপাদন, জলাশয়, অন্যান্য ছোট-বড় শাখা নদী সমূহ পানি বঞ্চিত হবে, শুরম্ন হবে মরম্নকরণ, উপরের দিকে উঠে আসবে সামুদ্রিক লোনা পানি, জমি হবে লবনাক্ত, সৃষ্টি হবে পানীয় জলের সংকট, বিপর্যস্ত হবে বাংলাদেশের পরিবেশ ও কোটি কোটি জনতা। শুকনো মওশুমে পানি টিপাইমুখে আটকে রাখার ফলে বৃহত্তর সিলেট, কুমিল্লা ও তৎসংলগ্ন ময়মনসিংহ এলাকা হবে শুষ্ক ও পানিশূন্য আর বর্ষার ভারি বর্ষনের সময় খোলা রাখা ফ্লাডগেট থেকে প্রবল স্রোতের সঙ্গে প্রচুর পানি নেমে এসে একই এলাকা বন্যায় ভাসাবে। এক হিসেবে বলা হয়েছে যে, টিপাইমুখ বাঁধ চালু হলে সুরমা নদীর পানি বর্ষাকালেই ৫ ফুট কমে যাবে, বঙ্গোপসাগরের লবন ঢাকা নারায়ণগঞ্জ বেয়ে সিলেট শহরে পৌঁছুবে ১৫ বছরের মধ্যেই। তাছাড়াও ভূ-প্রাকৃতিক চরিত্রের কারণে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভূমিকম্প প্রবণ যে ছয়টি স্থান রয়েছে তার ১৮টি বৃহৎ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে সর্বশেষ ৫০ বছর পূর্বের আসামের ভূমিকম্পের পর পরবর্তী  মারাত্মক কম্পন ধ্বংসযজ্ঞও হবে অনেক অনেক বেশী। ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। নিম্ন অববাহিকায় দেশ হিসেবে সকল আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি, কনভেনশন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার পানি চুক্তি এবং ভারতীয় মন্ত্রীদের আশ্বাস মোতাবেক বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কোন নদী-ভিত্তিক কার্যক্রম ভারত করার কথা নয়, কিন্তু বাস্তব অবস্থা তার উল্টো। বাংলাদেশমূখী সকল নদী নিয়ে আনত্মঃ নদী সংযোগ প্রকল্পসহ ভারতের এতসব কর্মযজ্ঞ অবাধে চলছে অথচ বাংলাদেশ সরকার বা যৌথ নদী কমিশন সেসব বিষয়ে যথাসময়ে বা যথেষ্ট অবহিত নয়। বক্তারা আরো বলেন, দুর্বল ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারনেই বাংলাদেশ আজ চরম ক্ষতির মুখোমুখি তাই এখনি টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও আপামর জনতার জাতীয় ঐক্য। আসুন, দোষারোপ আর প্রতিহিংসা নয়; দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধে সোচ্চার হই।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/মাকসুদুর রহমান কামাল/নারায়ণগঞ্জ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here