ঢাকা: চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ৮১টি উপজেলার ভোটগ্রহণ আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। এই ধাপের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলে আগে থেকে ইসি সাফাই গাইলেও বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন।
গত দুই দফা নির্বাচনের আগেও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয় ইসি। কিন্তু নির্বাচনের দিন ঘটে সহিংসতা, জালভোট, ভোটকেন্দ্র দখল, ভোটারদের ভয়ভীতি জোরপূর্বক ভোট প্রদান ও ব্যালট বাক্স ও পেপার ছিনতায়ের মতো ঘটনা। এছাড়া ক্ষমতাসীন প্রার্থীর পক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন।
প্রথম দফা নির্বাচন কিছুটা শান্তিপূর্ণ হলেও দিতীয় দফায় সহিংসতা মাত্রা চরমে ওঠে। এ কারণে ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে সহিংসতার কারণে নোয়াখালী সদর উপজেলার ১১৭টি কেন্দ্রসহ কয়েকটি উপজেলায় আরো ৩৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেয় ইসি। ওইদিন নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে ভোটকেন্দ্রে দু’পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে সাদ্দাম হোসেন (১৮) নামে এক যুবকও নিহত হন।
এছাড়া ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফা নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ও পেপার ছিনতাই, ব্যালট পেপার পুড়িয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন কারণে ৫ জেলার ১০টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। অন্যদিকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত শনিবার দিনভর আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষে আল আমিন নামে ছাত্রলীগের এক নেতা মারা যান। আরো সহিংসতার আশঙ্কায় ওই উপজেলার নির্বাচন পরবর্তীতে স্থগিত করা হয়। তারপরও নির্বাচন কমিশন বার বার বলে আসছে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আর যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো বিচ্ছিন্ন।
এদিকে সহিংসতার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেছেন, আমাদের ছোট একটি দেশ, সে দেশে ১৬ কোটি মানুষের বাস। নির্বাচনে একেবারেই সহিংসতা হবে না এটা বলা ঠিক নয়।
তৃতীয় দফা ভোটগ্রহণ শনিবার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকায় থাকবে সরকারি ছুটি। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নির্বাচনী এলাকায় টহল শুরু করেছে সেনাবাহিনী। তারা বুধবার মধ্যরাতের মধ্যেই নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছে যাবে বলে জানা গেছে। নির্বাচনের আগের দুইদিন ও ভোটগ্রহণের দিন এবং পরের দুইদিন নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করবে সেনাবাহিনী। অন্যদিকে মাঠে থাকছে র‌্যাব, পুলিশ বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ড ও গ্রাম পুলিশ।
তৃতীয় দফা নির্বাচনে মোট ৫ হাজার ৪৩৪ জন পর্যবেক্ষক মাঠে থাকবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা করেছে। সে অনুযায়ী ৮১টি উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষক থাকবে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও চট্টগ্রামের চন্দনাইশে। এ দুই উপজেলায় ১৩২ জন করে মোট ২৬৪ পর্যবেক্ষক মাঠে থাকবে। এছাড়া বেশির ভাগ উপজেলায় ৪০ জন করে পর্যবেক্ষক মাঠে থাকবে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ১৯ ফেব্রুয়ারি এবং ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাই পূর্বের সীমাবদ্ধতাগুলো যাতে তৃর্তীয় ধাপে না দেখা যায় সে ব্যাপারে নির্বাচন পরিচালনাকারীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হুঁশিয়ারি দিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি নিজ এলাকা এবং অন্য এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমরা শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেবো। ইতোমধ্যে রিটার্নিং অফিসারদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তৃতীয় দফায় ৪২ জেলার ৮৩টি উপজেলায় তফসিল ঘোষণা করলেও নির্বাচনী পরিবেশ না থাকায় গাজীপুরের শ্রীপুরের নির্বাচন স্থগিত করেছে কমিশন। এছাড়া সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের নির্বাচনের ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। তাই এ দফায় ফেঞ্চুগঞ্জেও নির্বাচন হচ্ছে না।
জানা গেছে, ৮১টি উপজেলায় মোট ভোটার ১ কোটি ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ২৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮৩২, নারী ভোটার ৬৬ লাখ ১৭ হাজার ১৮১ জন। মোট চেয়ারম্যান প্রার্থী ৪১৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪২৩ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ২৭৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। মোট ভোটকেন্দ্রর সংখ্যা ৫ হাজার ৪৪৪, ভোট কক্ষ ৩৫ হাজার ৩৩১টি।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী এসব উপজেলায়  বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হবে প্রচারণা। আইন অনুযায়ী ভোটগ্রহণ শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। তা বহাল থাকবে ভোটগ্রহণের ৬৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। কোনো ব্যক্তি বা প্রার্থী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে, অন্যূন ৬ মাস অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এছাড়া যানচলাচলেও থাকবে নিয়ন্ত্রণ। ওই সময় নির্বাচনী এলাকায় অনুমোদনহীন কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।
তৃতীয় দফায় যে ৮১টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে:
ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর; দিনাজপুরের সদর ও নবাবগঞ্জ; নীলফামারীর সদর; লালমনিরহাটের আদিতমারী; কুড়িগ্রামের সদর, রৌমারী ও চিলমারী; গাইবান্ধার সদর ও সাদুল্লাপুর; জয়পুরহাটের আক্কেলপুর; চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, ভোলাহাট ও শিবগঞ্জ; নওগাঁর মান্দা, পোরশা ও ধামইরহাট; রাজশাহীর গোদাগাড়ি, চারঘাট ও দুর্গাপুর; চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদা; যশোরের মনিরামপুর; নড়াইলের লোহাগড়া; বাগেরহাটের সদর, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল, মংলা ও শরণখোলা; খুলনার পাইকগাছা; সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ; ভোলার সদর, বরিশালের মুলাদী, হিজলা ও বাবুগঞ্জ; পিরোজপুরের নেছারাবাদ; জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, শেরপুরের শ্রীবর্দী; ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া, গৌরীপুর, মুক্তাগাছা, ফুলপুর ও ধোবাউড়া; নেত্রকোনার সদর ও মোহনগঞ্জ; কিশোরগঞ্জের সদর, কুলিয়ারচর ও হোসেনপুর; ফরিদপুরের সদর, আলফাডাঙ্গা ও সদরপুর, চরভদ্রাসন, ভাংগা ও মধুখালী; গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, শরীয়তপুরের সদর ও নড়িয়া; সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ; সিলেটের দক্ষিণ সুরমা; মৌলভীবাজারের বড়লেখা; টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী ও দেলদুয়ার; কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, হোমনা, বুড়িচং, চৌদ্দগ্রাম, ব্রাহ্মণপাড়া, তিতাস; চাঁদপুরের কচুয়া ও হাজীগঞ্জ; নোয়াখালীর সেনবাগ; লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সীতাকুণ্ড; রাঙামাটির বরকল, বাঘাইছড়ি ও কাউখালি; মানিকগঞ্জের ঘিওর;  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর; ফেনীর দাগনভূঁইয়া; বান্দরবান সদর ও আলী কদম।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here