জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ: অভিযানের সময় নিয়ে প্রশ্ন !জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: মা ইলিশ শিকারে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ দিনের সরকারী নিষেধাজ্ঞা শেষ থেকেই মেঘনা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওলা মা ইলিশ।

ছোট থেকে বড়, প্রায় সব সাইজের ইলিশেরই পেটে ডিমে ভরপুর। ডিমওলা ইলিশ দেখে হতবাক জেলেরাও। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সরকারী নিষেধাজ্ঞা অভিযানের সময় নিয়ে।

সরেজমিনে কমলনগরের মেঘনা পাড়ের মতিরহাট মাছ ঘাটে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ল। গত ১০ অক্টোবর থেকে জেলেদের জালে ধরা পড়া শতকরা ৯০ ভাগ ইলিশের পেটেই ডিম ছিল বলে জানান, জেলে এবং ক্রেতারা। ধরাও পড়ছে প্রচুর ইলিশ।

তোরাবগঞ্জ বাজারে ক্রেতা নুরুল হুদা জানান, শনিবার তিনি ২৮টি মাঝারি সাইজের ইলিশ কিনেছেন যাদের ২৬টির পেটে ডিম পাওয়া যায়।

ডিম ছাড়ার জন্য ১৫ দিন অপেক্ষা করার পর ডিমওলা প্রচুর ইলিশ দেখে ডিম ছাড়ার সময় নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জেলেসহ স্থানীয়রা। এভাবে ডিমওলা ইলিশ মারা পড়লে এ বছর ইলিশ উৎপাদন নিয়ে অনিশ্চতা দেখা দিবে।

মতিরহাটের জেলে বাসার মাঝি ও সিরাজ মাঝি জানান, এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশে কোন ডিমই ছিল না।

এই জেলেরা বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি “অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে সাগরের ইলিশ দলবদ্ধভাবে আশ্বিন ও কার্তিক মাসে মিষ্টি জলের স্পর্শে ডিম ছাড়তে আসে।

এ সময়ে দেশে দু-তিনটি জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে, যা কিনা ইলিশের প্রজনন ক্রিয়ায় সহায়তা করে।” তবে এ বছর বৃষ্টি হয়েছে ৮-৯ অক্টোবর পর্যন্ত। শুনেছি এখন ও সাগরে চাপ আছে। তাদের মতে এ বছর ইলিশ ডিম ছাড়বে ৯ অক্টোবরের পরে।

কমলনগর থানা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস আই ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, অভিযানের সময় জেলেদের থেকে আটককৃত ইলিশেও কোন ডিম ছিল বলে তাকে বেশ কয়েক জন জেলে জানিয়েছে।

মৎস্য বিভাগের মতে, দেশের নদ-নদীতে মা ইলিশ সারা-বছর জুড়েই কমবেশী প্রজনন করলেও আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে ও পরে ৬০-৭০ ভাগ ইলিশ ডিম ছেড়ে থাকে। এ জন্য পূর্ণিমার আগে ও পরে ১৫ দিনকে ইলিশের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। স্বাচ্ছন্দ্য ও অবস্থানগত কারণে মেঘনা নদীর মিষ্টি ও লবণ জলের মিশ্রিত জায়গায় ইলিশ ডিম দিয়ে থাকে।

বিজ্ঞানীদের সুপারিশের আলোকে এ গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের উপকূলীয় ভাটি মেঘনার ভোলা ও লক্ষ্মীপুর জেলার মধ্যবর্তী ঢালচর, মনপুরা, মৌলভীর চর ও কালির চর এলাকার ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে সব ধরনের মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যার মধ্যে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের মতলব, উত্তরের ষাটনল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকা ছিল।

মৎস্য বিভাগের মতে, দেশের নদ-নদীতে মা ইলিশ সারা বছর জুড়েই কমবেশী প্রজনন করলেও আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে-পরেই ৬০-৭০ ভাগ ইলিশ ডিম ছেড়ে থাকে। আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের অবদান প্রায় ১২-১৩ ভাগ। সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের ৫০-৬০ ভাগ উৎপাদন হচ্ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন ইলিশ উৎপাদনে লক্ষ্মীপুর দ্বিতীয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here