জামালপুরের বকশীগঞ্জে একই দিনে দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ধানুয়া গ্রামে যৌতুকের কারণে স্বামীর হাতে তিন সন্তানের জননী খুকু মনি ও বাট্টাজোর পুর্বপাড়া গ্রামে সৎ মায়ের হাতে নবম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্র মিজান।
পুলিশ ঘাতক স্বামী নুর আলমকে গ্রেফতার করলে ও মিজান হত্যায় কাউকে গ্রেফতার করেনি।
এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় কামালপুর ইউনিয় চেয়ারম্যান ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ধানুয়া গ্রামে নুর আলম (৩৮) এর সাথে প্রতিবেশী দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার উত্তর ভাতখাওয়া গ্রামের মৃত সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের মেয়ে খুকু মনির (৩০) সাথে ১৫ বছর আগে বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকে যৌতুক লোভী স্বামী বিভিন্নভাবে যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি করত। যৌতুক নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ লেগেই থাকত।
ইতিমধ্যে তাদের ঘরে তিনটি কন্যা সন্তান হয়।
যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকার করায় ১ জানুয়ারী রোববার রাত সাড়ে এগারোটার সময় কথা কাটাকাটি এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যূপরি আঘাত করে।
স্ত্রীর খুকু মনির ডাক চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে উদ্ধার কলে খুকু মনি মারা যায়।
পরে গ্রামবাসীরা ঘাতক স্বামী নুর আলমকে আটক করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করেন।
ঘটনার রাতে খুনের বর্নণা দিতে গিয়ে নুর আলমের তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ুয়া বড় মেয়ে ফিতা (১০) কান্নাজড়িত কন্ঠে জানায়, বাবা বাবা তুমি আমার মাকে মেরোনা তোমার পায়ে ধরি! মাকে মেরে ফেললে আমাদের কে দেখবে, কে খাওয়াবে।
মেয়ের অনুরোধ উপেক্ষা করে নেশাখোর বাবা তার মাকে ছুরি দিয়ে নিঃশ্বংসভাবে খুন করে।
নিহতের বড় বোন লাভলি বেগম জানান, নুর আলম যৌতুকের জন্য তার বোনকে প্রায় নির্যাতন চালাত।
তারা ১ বছর পূর্বে ওয়ারিস সুত্রে প্রাপ্ত ৪ বিঘা জমি বিক্রি করে নগদ ৫ লাখ টাকা নিয়ে যায়।
যৌতুক লোভী স্বামী নুর আলম আবারও খুকুমনিকে টাকা আনার জন্য নির্যাতন চালায়।
নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক সপ্তাহ আগে ৩ মেয়েসহ খুকু মনি বাপের বাড়ি চলে আসে।
ঘটনার একদিন আগে সুকৌশলে স্বামী নুর আলম তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনে।
প্রতিবেশীরা জানায় নুর আলম ঢাকায় বসুন্ধরা সিটিতে ক্লিনার পদে চাকুরী করত।
সে নোশাখোর ও চরিত্রহীন থাকায় তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। সে গ্রামে এসেও স্বভাব বদলানি।
এই ব্যাপারে খুকুমনির বড় ভাই মোজাম্মেল হক বাদি বকশীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, বকশীগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোর পূর্বপাড়া গ্রামে দত্তের দাখিল মাদ্রাসার মেধাবী ছাত্র মিজানকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছে সৎমা বেদনা বেগম।
এলাকাবাসী রবিন জানায়, ৩দিন আগে খাতার কেনার জন্য বাড়ী থেকে ধান বিক্রি করলে সৎ মা ও দাদা ব্যাপক প্রহার করে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেয়।
পরে ১জানুয়ারী বাড়ী ফিরলে কৌশলে ভাতের সাথে বিষ মিশিয়ে খাওয়ালে মিজান অসুস্থ্য পরে।
পরে এলাকাবাসীরা অসুস্থ্য মিজানকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়।
অবস্থা অবনতি দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করে।
পরে সৎ মা ও দাদা ময়মনসিংহ না নেওয়ার জন্য তালবাহনা করলে বকশীগঞ্জেই রোববার রাতে সে মারা যায়।
মিজানের বাবা রফিকুল ইসলাম সিংগাপুর প্রবাসী।
লেখাপড়ার খরচ চাইলে মিজানকে প্রায় সময়ই দাদা ও সৎমা মিজানকে নির্যাতন করতো।
এ বিষয়ে বকশীগঞ্জ থানার ওসি আবু মোঃ ফজলুর করিম ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কমকে জানান, লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, ময়না তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ছাইদুর রহমান/জামালপুর