২০৫০ সাল নাগাদ শুধুমাত্র উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ২ কোটিরও বেশি মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে যাতে ২১০০ সাল নাগাদ বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ শিল্পযুগপূর্ব সময়ের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রির চেয়ে বাড়তে না পারে।

২০৫০ সাল নাগাদ শুধুমাত্র উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ২ কোটিরও বেশি মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে যাতে ২১০০ সাল নাগাদ বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ শিল্পযুগপূর্ব সময়ের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রির চেয়ে বাড়তে না পারে।

রেজাউল হক, রামগতি (লক্ষ্মপুর) প্রতিনিধি :: উন্নত বিশ্বকে আইনগতভাবে কার্বন নি:স্বরণ কমাতে বাধ্য করার জন্য স্বাধীন আন্তর্জাতিক জলবায়ু আদালত গঠনের দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠনসমূহ। শনিবার (২৮ নভেম্বর) লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার মাছঘাটে জলবায়ু পদযাত্রা শেষে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি তোলেন।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে ন্যায্য ও আইনগতভাবে কার্যকর চুক্তির দাবিতে নোয়াখালী রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (এনআরডিএস), পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (প্রান), জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট, প্রান্তজন ও গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন এগেইনস্ট পোভার্টি (জিক্যাপ)-এর যৌথ উদ্যোগে উপকূলীয় অঞ্চলব্যাপী এ পদযাত্রা ও মানববন্ধনের আয়োজন করে।

এনআরডিএস এর প্রকল্প সমন্বয়কারী বিপ্লব চন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, প্রান এর প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ, এছাড়াও রামগতি পৌরসভা সামাজিক সুরক্ষা ফোরামে সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান,আলেকজান্ডার পৌর বাজার কমিটির সদস্য,সিডিএল এর সমন্বয়কারী মো নাসিম,এ নআরডিএস এর টেরেন ডায়েস রুপক প্রমূখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শিল্পোন্নত দেশগুলো ১৯৯৭ সালে প্রণীত কিয়োটো প্রোটোকল না মানার কারণে বাতাসে কার্বনের ঘনত্ব ৪০০ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) ছাড়িয়ে গেছে। ক্রমেই বেড়ে যাওয়া উষ্ণতার কারণে বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় দেশগুলো চরম সঙ্কটের মুখে পড়ছে। ঘনঘন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ও নদীভাঙনের কারণে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ বাস’চ্যুত হয়ে যাচ্ছে।

২০৫০ সাল নাগাদ শুধুমাত্র উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ২ কোটিরও বেশি মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে যাতে ২১০০ সাল নাগাদ বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ শিল্পযুগপূর্ব সময়ের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রির চেয়ে বাড়তে না পারে।
SAMSUNG CAMERA PICTURES

বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, ২০৫০ সাল নাগাদ শুধুমাত্র উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ২ কোটিরও বেশি মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে যাতে ২১০০ সাল নাগাদ বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ শিল্পযুগপূর্ব সময়ের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রির চেয়ে বাড়তে না পারে। কিন্তু প্রস্তাবিত খসড়া চুক্তিতে দূষণ কমানোর কোনো মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয় নি।

এছাড়া দূষণকারী দেশগুলো যে পরিমাণ নির্গমন কমানোর সংকল্প প্রকাশ করেছেন, তাও বাধ্যতামূলক নয়। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, ২১০০ সাল নাগাদ তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ ৪.৭ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাবে। এ আশঙ্কা সত্য হলে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন গড়ে ২০ শতাংশ কমে যেতে পারে যা চরম খাদ্যসঙ্কট সৃষ্টি করবে।

অপরদিকে, গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড ও অভিযোজন তহবিলসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলো পর্যাপ্ত অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন এ নিয়ে গড়িমসি করছে এবং স্বল্পশর্তের অর্থায়নের নামে সুদযুক্ত ঋণ ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো থেকে বিনিয়োগের কথা বলছে। এ ধরনের ঋণের মাধ্যমে গরিব দেশগুলো নতুন নতুন দেনায় জর্জরিত হলেও ধনী দেশগুলোর ঋণবাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো জলবায়ু দুর্যোগের জন্য দায়ী না হয়েও শুধুমাত্র টিকে থাকার জন্য এসব ঋণ নিতে বাধ্য হবে। এটাও আরএকধরনেরর ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণ। তাই বক্তারা জলবায়ু-সংক্রান্ত সকল প্রকার ঋণ বাতিল করে অনুদান প্রদানের দাবি জানান।

বক্তারা প্যারিস সম্মেলনে আইনি বাধ্যবাধকতাসম্পন্ন সার্বজনীন চুক্তি প্রণয়ণ, আন্তজার্তিক জলবায়ু আদালত গঠন, ‘জলবায়ু বাস্তচ্যুতদের উন্নত দেশগুলোতে সম্মানজনক অভিবাসনের অধিকার প্রদান, জলবায়ু চুক্তিতে অংশীদারিত্ব, ন্যায্যতা ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা, জিসিএফ, অভিযোজন তহবিলসহ অন্যান্য তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা খাতে সকল ধরনের ঋণের পরিবর্তে অনুদান প্রদান, জলবায়ু তহবিলের ব্যবহারে স্থানীয় জনসংগঠনের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি, ইতোমধ্যে সংঘটিত ক্ষয়-ক্ষতি পূরণের জন্য অতিরিক্ত ‘ক্ষতিপূরণ’ প্রদান এবং সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়-সাধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের কণ্ঠ জোরদার করাসহ নয় দফা দাবি উত্থাপন করেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here