শিপুফরাজী, চরফ্যাশন প্রতিনিধি :: শরৎ ঋতুর শেষ পর্যায়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে। দিনে গরম এবং শেষ রাতে হালকা শীত অনুভব হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে ঠাণ্ডা, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। বাসা-বাড়ির পাশাপাশি হাসপাতালে রেখেও চিকিৎসা করাতে হচ্ছে আক্রান্তদের আতঙ্কিত অভিভাবকদের।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে চরফ্যাশন হাসপাতালের গিয়ে নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগীদের প্রচণ্ড চাপ দেখা গেছে। এই হাসপাতালে শিশুদেও জন্য আলাদা কোন ওয়ার্ডের ব্যবস্তা নেই। হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডের একটি অংশকে শিশু ও নবজাতক ওয়ার্ডে হিসাবে ব্যবহার করা হতো । তাও আবার ২০১৬ সালের ৬ মে শিশু কর্নারের ২৪ নং শয্যায় পলেস্তার খসে পড়ে।
এসময় এই শয্যায় ভর্তি ছিল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রাব্বী । পলেস্তার খসে পড়লে শিশুরোগী রাব্বী এবং তার তিন স্বজন রশিদ মাঝি, রুপজান এবং মানিকজান আহত হন। তখন থেকেই এই ওয়ার্ডের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয় । ওয়ার্ডে থাকা চিকিৎসাধীন ৩০ জন রোগীকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এই হাসপাতালে কোন শিশু ওয়ার্ডে নেই, অন্য রোগীদের সাথে রেখেই শিশুদের চিকিৎসা দেয় হয়।
হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডে বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ জন, নবজাতক ওয়ার্ডে আছে আরও ৭/৮ জন। একেকটি বেডে গড়ে ৩/৪ জন শিশু রোগীকে গাদাগাদি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মেঝেতে ও রয়েছেন শিশু রোগীর পাশাপাশি অভিভাবক ও স্বজনেরা।
ধারণ ক্ষমতার চারগুণ বেশি রোগী থাকায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
কর্তব্যরত নার্সেরা জানান, একেতো এই হাসপাতালে কোন শিশু ওয়ার্ডে নেই, তারপরে আবার জেনারেল ওয়ার্ডে রোগীর তুলনায় বেড কম । তার মধ্যে আবার জেনারেল রোগীদের সাথে গাদাগাদি করে শিশু রোগীকে রাখতে হচ্ছে। শিশুদের অধিকাংশই নিউমোনিয়া ও অন্য শীতজনিত রোগে আক্রান্ত।
উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়ন থেকে আসা শিশু রোগীর মা ইয়ানুর বলেন, ‘এ বেডে ৪ জন রোগী। ভর্তির পর সব ওষুধ বাইরে থেকে এনেছি। হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধ দেওয়া হয়নি’।
অন্য এক রোগীর স্বজন আছমা বেগম বলেন, ‘চারদিন আগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখন পর্যন্ত অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি’।
ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে নিউমোনিয়া আক্রান্ত নবজাতক আবিরকে। এক সপ্তাহ আগে ভর্তি শিশুটিকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। আবিরের মা জানান, চিকিৎসাসেবা পেলেও ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।
উপজেলার নুরাবাদ ইউনিয়ন থেকে আসা রোগীর স্বজন ইকবাল বলেন, শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে। এখন একটু সুস্থ্য, কিন্তু গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে।
শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স আকলিমা বলেন, ‘রোগী বেশি থাকায় অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবুও আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি’।
জানাযায়, নিউমোনিয়া আক্রানত হয়ে এবছর এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালে ৪ জন প্রান হারিয়েছে । সরকারি হিসাবের বাহিরে গ্রামে এর প্রকোপ আরো বেশী বলে জানিয়েছে, নাম প্রকাশ না কররা শর্তে একজন পল্লী চিকিৎসক ।
চরফ্যাশন হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ডা: শুমিত্রা মজুমদার বলেন, ‘শীতের আগে-পরে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। তবে দু’দিন আগে রোগীর অনেক চাপ থাকলেও এখন কিছুটা কম। আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি’।