চট্টগ্রাম-নাজিরহাট শাখা রেল লাইনে বগি লাইনচ্যূত হয়ে দুর্ঘটনার হার আশংকাজনক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই শাখা লাইন দীর্ঘদিন প্রয়োজনীয় সংস্কার, মেরামত ও উন্নয়নের অভাবে এই অবস্থা হয়েছে। নিরাপদে ট্রেন চলাচল ও যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য শাখা লাইনটি জরুরি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী মহল। জানা যায় ব্রিটিশ শাসনামলে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট শাখা রেল লাইন নির্মাণ করা হয়। সেই সময় হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজান এই তিন উপজেলায় বাস সার্ভিস ছিল না। তিন উপজেলার লোকজন নিজ নিজ প্রয়োজনে গন্তব্যে যাতায়েতের জন্য জনস্বার্থে তৎকালে এই রেল লাইন নির্মাণ করা হয়। রেল লাইন স্থাপনের জন্য সুদূর চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাট পর্যনত্ম বিপুল পরিমাণ জমি ও সরকার অধিগ্রহণ করেন। এলাকাবাসী ব্যক্তি স্বার্থের কথা বাদ দিয়ে জনস্বার্থে রেল কর্তৃপক্ষকে লাইন নির্মাণের জন্য নিজেদের জমি ও প্রদান করেন স্বতস্ফুত ভাবে। রেল লাইন নির্মিত হয়ে সার্ভিস শুরু হলে তিন উপজেলার লোকজন নিরাপদে গন্তব্যে যাতায়ত করতে থাকে। এই লাইনে রেল সার্ভিস চালু হলে মাইজ ভাণ্ডার দরবার শরীফের ওরশ ও নাজিরহাট রেল ষ্টেশনের পশ্চিম পার্শে মন্দাকিনী মেলার জন্য, ওরশ ও মেলার সময় অতিরিক্ত যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে অতিরিক্ত রেল সার্ভিসও চালু করা হয়। ক্রমে যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে এই লাইনে চার জোড়া ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়। লাইনে ট্রেন সার্ভিস নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার জন্য প্রয়োজনমত লাইন সংস্কার,উন্নয়ন ও মেরামত করা হত। বিগত এরশাদ শাসনামলের শেষ দিকে লোকসানের অজুহাত তুলে রেল সার্ভিস বন্ধ করতে চাইলে জনগণ ও যাত্রীদের প্রতিবাদের মুখে ১০/১২দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর জন আন্দোলনের মুখে পুনরায় ট্রেন সার্ভিস চালু হলেও মাত্র একটি আপ ও একটি ডাউন ট্রেন মাত্র চালু রাখা হয়। সেই থেকে লাইনটি নানা মুখী অবহেলার শিকারে পরিণত হতে থাকে। লাইন প্রয়োজনীয় সংস্কার, মেরামত ও উন্নয়ন না হওয়ায় ক্রমে ট্রেন চলাচলে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বাস/কোস্টার ভাড়া বৃদ্ধি, মহাসড়কে সীমাহীন যানযট সহ নানা কারণে সমপ্রতি ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা সীমাহীন রূপে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাছাড়া রেল কর্তৃপক্ষের স্বার্থে যাত্রীরা টিকেট পরীক্ষা শুরু করলে রেলের আয় বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং বিনা টিকেটে ভ্রমণ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হলে এই বছরের শুরুতে একটির স্থলে এক জোড়া ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়। এতে করে দুটি ট্রেন নাজিরহাট থেকে ছেড়ে চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে নাজিরহাট চলাচল করতে থাকে। ফলে যাত্রী সংখ্যাও সীমাহীন ভাবে বৃদ্ধি পায় নিরাপদ ও কম ভাড়ায় ভ্রমণের জন্য। কিন্তু এই রেল লাইনটি দীর্ঘদিন প্রয়োজনীয় সংস্কার, মেরামত ও উন্নয়ন না করায় ট্রেনের বগি লাইনচ্যুতির ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। লাইনের জোবরা বড়ুয়া পাড়া, বাড়ই পাড়া রাস্তার মাথা এলাকা, হাটহাজারী রঙ্গী পাড়া, আলিপুর, চন্দ্রপুর, আলমপুর, চারিয়া, মির্জাপুর, এনায়েতপুর, ধলই, মুহুরী পাড়া, জব্বারহাট প্রভৃতি এলাকায় লাইনে পাথর নেই। দীর্ঘ দিনের পুরাতন সিপারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া ফিটিংগুলো ডিলা হয়ে গেছে। ৩৯ ফুটের ব্যবধানে ১৭টি সিপারের মধ্যে তিন চারটি মাত্র ভালো আছে। বাকিগুলো অকেজো। ফলে দুর্ঘটনার হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত এক মাসে চারিয়া, চন্দ্রপুর, মুহুরী পাড়া, এলাকায় তিনটি রেলের বগি লাইনুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। এতে করে কমপক্ষে অর্ধশতাধীক যাত্রী আহত হয়েছে। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র এই শাখা লাইন উন্নয়নের জন্য টেন্ডার হয়েছে বলে উলেখ করেন। নানা জটিলতার কারণে পুরোপুরি কাজ শুরু করা যাচ্ছে না বলে সাংবাদিকদের জানান। যাত্রী সাধারণ বৃহত্তর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আপাতত বাদ রেখে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান প্রাথমিক সংস্কার ও মেরামতের দাবি জানিয়েছেন নিরাপদ ভ্রমণের সুবিধার্থে। এতে করে যাত্রীদের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাগব হবে বলে উলেখ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে বাস্তব সম্মত ব্যবস্থা গ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন পর্যবেক্ষক মহল।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/মোহাম্মদ হোসেন/হাটহাজারী

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here