স্টাফ রিপোর্টার :: করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় নতুনটি চারটিসহ মোট ৫টি প্যাকেজে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজগুলো হলো:

প্যাকেজ-১: ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা দেওয়া, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেওয়া।

এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। ঋণের সুদের অর্ধেক অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ঋণ গ্রহিতা শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।

প্যাকেজ-২: ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান: ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হারও হবে ৯ শতাংশ। ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণ গ্রহিতা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।

প্যাকেজ-৩: বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বাড়ানো: ব্লক টু ব্লক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইডিএফের বর্তমান আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। ফলে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে। ইডিএফের বর্তমান সুদের হার এলআইবিওআর + ১ দশমিক ৫ শতাংশ (যা প্রকৃত পক্ষে ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ) হতে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে।

প্যাকেজ-৪: প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণ সুবিধা চালু করবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৭ শতাংশ।

প্যাকেজ-৫: এরআগে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন/ভাতা পরিশোধ করার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন ৪টিসহ মোট ৫টি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ হবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা যা জিডিপি’র প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।

বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে এসব প্যাকেজ ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আশা করি, পূর্বে এবং আজকে ঘোষিত আর্থিক সহায়তার প্যাকেজগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে এবং আমরা কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।’

সবাইকে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিও আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সম্ভাব্য এ বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক সঙ্কট হতে উত্তরণের জন্য রপ্তানি খাতের পাশাপাশি দেশীয় পণ্যের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমি সবাইকে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে আশ্চর্য এক সহনশীল ক্ষমতা এবং ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে জাতি মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে-সে জাতিকে কোনো কিছুই দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে গণভবনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যােলয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here