আবারও নদী ভাঙ্গন আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :: বন্যার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে লালমনিরহাটের তিস্তা, সানিয়াজান ও ধরলা নদীর তীরবর্তী এলাকা গুলোতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। প্রতি নিয়ত ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে বসত-বাড়িসহ অসংখ্য আবাদী জমি, মসজিদ, মন্দির, স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

ইতোমধ্যে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ২ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ গোটার জেলার ৫ শতাধিক পরিবার তিস্তা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। গত শুক্রবার সড়ানো হয়েছে তিস্তা চরাঞ্চলের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আদিতমারী উপজেলার গোবর্ন্ধন ইসমাইলপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি।

নদী ভাঙ্গনের শিকার লোকজন জানান, গত ৭ দিনের ভাঙ্গনে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের পাসাইটারী তথা ৭ নং ওয়ার্ডের প্রায় শতাধিক বসত বাড়ি তিস্তা নদীর গর্ভে বিলিন হয়েছে। বিলিন হয়েছে এ জনপদের মানুষ গুলোর বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল ফসলি জমিটুকু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

মাথাগুজার ঠাঁই না পেয়ে অনেকের জায়গা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। কেউ কেউ দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে জমি বন্দক নিচ্ছে কিছু দিনের জন্য পরিবার পরিজনের মাথাগুজার ঠাঁই করতে। বাঁধ বা রাস্তার পাশেও কেউ কেউ মানবেতর জিবন যাপন করছেন।

গোবর্দ্ধন পাসাইটারী গ্রামের তিস্তার ভাঙ্গন আতংকে থাকা মানিক মিয়া, আজিজুল ইসলাম, আজিজার রহমান জানান, তিস্তা যে ভাবে ভাঙ্গছে, এর আগে এমন ভাঙ্গন ছিল না। দ্রুত ভাঙ্গন রক্ষা করা না হলে কয়েকটি গ্রাম ভাঙ্গনের মুখে পড়বে। তারা দ্রুত ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী বাঁধ দাবি করেন।

মহিষখোচা ইউপি সচিব আজহার আলী আতিক জানান, মহিষখোচা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড বিলিনের পথে। এ ছাড়াও ৪ নং ওয়ার্ডেও রয়েছে ভাঙ্গন আতংক। এরই মধ্যে ইউনিয়নে ১১০টি পরিবার তিস্তার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন।

তিস্তা চরাঞ্চলের ছেলে মেয়েদের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গোবর্ন্ধন ইসমাইলপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও শুক্রবার নদী গর্ভে বিলিন হচ্ছে। নিজের অর্থে বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ও ঘর সড়ায়ে নিচ্ছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিল। চরাঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত ১৯৩জন শিক্ষোর্থীর জন্য বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক রয়েছেন ৪জন। পাশের ৮শতাংশ জমি ১৫ হাজার টাকায় বন্দক নিয়ে মাটি ভরাট করা হচ্ছে বিদ্যালয়টি স্থান্তরের করতে। এ জন্য গত মাস থেকে বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়টির পাঠদান।

গোবর্ন্ধন ইসমাইলপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিল জানান, এ বছরসহ তিন বার সড়াতে হয়েছে বিদ্যালয়টি। ২২লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যায়ে গত বছর এ বিদ্যালয়ের ৪টি কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন করা হয়। যার কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়ায় ঠিকাদার কাজ বুঝে দেন নি। কিন্তু প্রয়োজনের কারনে পাঠদান শুরু হয় নতুন ভবনে। এরই মধ্যে সেই ভবনটিও নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা শিক্ষা কমিটিকে অবগত করে নিজের অর্থে সড়ায়ে নিচ্ছেন বিদ্যালয়টি।

আদিতমারী উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন জানান, সড়ায়ে নেয়া টিনে পাশ্বের একটি জমি বন্দক নিয়ে নতুন ভাবে করা হবে টিনসেট বিশিষ্ট বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের সকল আসবাবপত্র সিজারলিষ্ট করা হয়েছে।

তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে লালমনিরহাটের তিনটি উপজেলা। যার মধ্যে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের অর্ধেকাংশ বিলিন হয়েছে তিস্তায়। হাতীবান্ধা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নদীর তীরবর্তি। সদর উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন ধরলার ভাঙ্গনে ও ৩টি ইউনিয়ন রয়েছে তিস্তার মুখে। পুরো জেলায় পাঁচ শতাধিক পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন।

হাতীবান্ধা উপজেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন অফিসার ফেরদৌস আলম জানান, এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন তিস্তার ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে। যার মধ্যে দুইটি ইউনিয়নে ১২০টি পরিবার নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে বলে তার কাছে তথ্য রয়েছে। বাকীগুলোর তালিকাও খুব দ্রুত পৌঁছবে বলেও জানান তিনি।

লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার আরাফাত হোসেন জানান, ভাঙ্গন কবলিতদের তালিকা না পৌছলেও ভাঙ্গনে ক্ষতি গ্রস্থদের জন্য ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে ১৫ লাখ টাকা ও ৫শত বান্ডিল ঢেউ টিন বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। তালিকা পৌঁছলেই ক্ষতি গ্রস্থদের মাঝে এসব বিতরন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here