মো. শাহীন, ডিআইইউ প্রতিনিধি :: ইউজিসির নির্দেশনা মেনেই ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শুরু করেছে অনলাইন ক্লাস। অনলাইন ক্লাসগুলো সাধারণত জুমে হয়ে থাকে যার জন্য প্রয়োজন স্মার্ট ডিভাইস আর উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবস্থা। বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট গতির অবস্থা খুবই নাজুক। ইতোমধ্য করোনার কারনে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে।
.
ডিভাইস কিংবা ইন্টারনেটের কারনে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তাছাড়া উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় বন্যার কারনে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় কষ্ট। তেমনই একজন শিক্ষার্থী ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়াউর রহমান। তার গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার যুক্তিতলা গ্রামে। করোনাকালীন সংকটের কারণে তাকে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করতে হচ্ছে। আর অনলাইনে ক্লাস করতে পড়তে হচ্ছে ভীষণ ভোগান্তিতে। ক্লাস করার জন্য তাকে পায়ে হেঁটে এক কিলোমিটার দূরে পাকশী ইপিজেডের কাছে যেতে হয় । এজন্য ক্লাস করতে ও পরীক্ষা দিতে তাকে পড়তে হয় ভোগান্তিতে।
.
আর একজন শিক্ষার্থী শামসুল হূদা, তিনি জানান তিনি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পতেঙ্গার দক্ষিন পতেঙ্গা খালপাড় এলাকায়। তাকে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য যেতে হয় এয়ারপোর্ট রোডে যা তার বাড়ি থেকে দুই – তিন কিলোমিটার দূরে। ফলে অনলাইনে ক্লাস করতে তাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তরপরও তিনি ক্লাস করেছেন। তিনি জানান,আমাকে পরিক্ষায় পাস করার জন্য ক্লাস করা উচিত কারণ পরিবারের সঞ্চয়, আশা ও স্বপ্ন সবই আমাকে ঘিরে ।
.
ফার্মেসী বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান তিনি বলেন- তিনি জামালপুর জেলার মেলান্দহের উপজেলার মুহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা। আমাদের এলাকা এবং আশেপাশের প্রায় সব এলাকা পানি বন্দী। দেওয়ানগঞ্জ এখানে বাহাদুরবাদ ঘাটে ১২৯সেমি, বকশিগঞ্জ,সরিষাবাড়ি এই সব উপজেলা সম্পূর্ণ পানির নিচে, সকল রাস্তা ঘাট এবং বাধঁ ভেঙ্গে গেছে। আর অধিক বন্যার পানির জন্য বিদ্যুতের খুটি পড়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন এলাকার নেটওয়ার্ক সংযোগ। এতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক নেটওয়ার্কের সমস্যা হচ্ছে। সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে না শুধু রাতে ২/৩ ঘন্টার জন্য বিদ্যুৎ আসে। এজন্য অনলাইন ক্লাসের নিয়মিত ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের । তাছাড়া বাড়িতে বসে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই টাওয়ারের কাছে গিয়ে ক্লাস করতে হয়েছে। ফলে তাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে তিনি বলেন এত কষ্ট করেও অনলাইনে ক্লাস করা যাতে তিনি পরীক্ষা পাশ করতে পারেন। কারণ তাকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন রয়েছে।
.
ডিআইইউর ইংরেজি বিভাগের আর এক শিক্ষার্থী মো. হাবিবুর রহমান। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলার আফজাল কান্দি গ্রামে। তিনি বাড়িতে কোন নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন না। মোবাইলে কল করে কথা বলার জন্যও তাকে বাড়ির সামনে রাস্তায় যেতে হয়। আর অনলাইনে ক্লাস করতে ও পরীক্ষা দেয়ার জন্য তাকে ১০-১৫ মিনিটের পথ পায়ে হেঁটে টাওয়ারের কাছে যেতে হয়। তারপরও তিনি কষ্ট সহ্য করে ক্লাস করছেন পরীক্ষায় অংশ নেয়া ও পাশ করার জন্য। তিনি বলেন, তাছাড়া অনলাইলে ক্লাস করতে ও পরীক্ষা দিতে অনেক এমবি খরচ হয়। আর এই করোনাকালীন সংকটে আমার জন্য এমবি খরচ করে ক্লাস করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাছাড়া ইন্টারনেটের দামও বেশি!
.
এতো কিছু সহ্য করেও শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন ও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। তাদের পরিবার ও নিজেদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তারা অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। সেশনজট এড়াতে অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষার কোন বিকল্পও নেই!