ডেস্ক রিপোর্ট::  ভারতের লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ চলছে। সোমবার (১৩ মে) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে এই ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ১০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে মোট ৯৬টি আসনে ভোট গ্রহণ হচ্ছে আজ।

চতুর্থ দফার ভোটে ৯৬টি আসনে ১ হাজার ৭১৭ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। এর মধ্যে সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) দলের প্রধান এবং হায়দ্রাবাদের প্রভাবশালী রাজনীতিক আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এবং সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের পাশাপাশি আছেন আরও বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী।

সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোটের হেভিওয়েট প্রার্থী তালিকায় আছেন এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং, তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র, কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান।

এ ছাড়াও নজর থাকবে অন্ধ্রপ্রদেশের কাডাপা আসনের কংগ্রেস প্রার্থী তথা রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডির বোন ওয়াইএস শর্মিলা, ঝাড়খণ্ডের খুঁটি আসনের বিজেপি প্রার্থী তথা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার ওপরেও।

এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে ভোটে লড়ছেন অধীর চৌধুরী। পাঁচবারের সংসদ সদস্য অধীরের এবারের লড়াই ইউসুফ পাঠান ও বিজেপির নির্মল কুমার সাহার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে কৃষ্ণনগরে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী অমৃতা রায়। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির বধূ তিনি।

আসানসোলে শত্রুঘ্ন সিনহাকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। উপনির্বাচনে জিতে তিনিই এই আসনের বিদায়ী সংসদ সদস্য। সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া বিজেপির প্রার্থী এখানে। এক সময় বাবুল সুপ্রিয় বিজেপির মনোনয়নে জিতে এখানকার সংসদ সদস্য ছিলেন। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন।

আর বেগুসরাইয়ের প্রার্থী গিরিরাজ সিং। এখানে সিপিআইয়ের প্রার্থী আওয়াধেশ কুমার রাই।

এদিকে চতুর্থ দফায় পশ্চিমবঙ্গের আট আসনের পাশাপাশি দেশটির মোট ৯৬টি আসনে ভোটগ্রহণ চলছে। এরমধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের ২৫টি এবং‌ তেলঙ্গানার ১৭টির সব আসনেই ভোট হয়ে যাচ্ছে সোমবার। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশের ১৩টি, মহারাষ্ট্রের ১১টি, মধ্যপ্রদেশের ৮টি, ওড়িশার ৪টি, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের ৫টি আসনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মিরের শ্রীনগর আসনেও চলছে ভোটগ্রহণ।

সোমবার চতুর্থ দফার ভোটে একঝাঁক তারকা প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন ভোটারেরা। এরমধ্যে হায়দ্রাবাদের আসাদউদ্দিন ওয়াইসির নিরঙ্কুশ আধিপত্য খর্ব করতে বিজেপি এবার প্রার্থী করেছে মাধবীলতাকে।

বিজেপির হিসাব অনুযায়ী, ভোটের মেরুকরণে নিজামের শহরে এবার বিজেপি না জিতলেও ওয়াইসিরকে যথেষ্ট বেগ দেবেন মাধবীলতা।

অন্যদিকে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কনৌজ আসনে বিজেপি প্রার্থী সুব্রত পাঠকের কাছে প্রায় ১৩ হাজার ভোটে হেরে গিয়েছিলেন অখিলেশ-পত্নী ডিম্পল যাদব। এ বার কার্যত সকলকে চমকে দিয়েই এই কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন অখিলেশ নিজেই। বিজেপি পুনরায় প্রার্থী করেছে শর্মিলাকেই।

অন্ধ্রপ্রদেশের কাডাপা আসনে লড়াইটা আরও আকর্ষণীয়। এক সময় এই আসন থেকে জিতেই টানা চার বার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা ওয়াইএস রাজশেখর রেড্ডি। ১৯৯৯ সালে তিনি অবিভক্ত অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই আসন থেকে জেতেন রাজশেখরের ভাই বিবেকানন্দ রেড্ডি।

তারপর এই আসন থেকে জিতে সংসদ সদস্য হন জগন্মোহনও। বর্তমানে এই আসনের যিনি সংসদ সদস্য, সেই অবিনাশ রেড্ডি জগনের চাচা ভাস্কর রেড্ডির পুত্র। কিন্তু বিবেকানন্দকে রহস্যমৃত্যুতে তার দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন কেউ কেউ।

তাকে প্রার্থী করতেও এক সময় শর্মিলার আপত্তি ছিল বলেও শোনা যায়। পারিবারিক সেই বিবাদ এ বার রাজনৈতিক মঞ্চে চলে এসেছে। দাদার দলের বিরুদ্ধেই কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছেন শর্মিলা। রাজশেখরের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার কার হাতে থাকবে, সে দিকে নজর থাকবে সকলের।

বিহারের বেগুসরাই আসনে গত লোকসভা নির্বাচনে সিপিআই প্রার্থী করেছিল তৎকালীন ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারকে। কিন্তু বিজেপির গিরিরাজ সিংয়ের কাছে বিপুল ভোটে পরাস্ত হন তিনি। কানহাইয়া অবশ্য পরে কংগ্রেসে যোগ দেন।

তবে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক হিসাবে এ বারও বেগুসরাই কেন্দ্রে সিপিআই লড়াই করছে। তারা প্রার্থী করেছে অবধেশ কুমার রাইকে। অবধেশকে সমর্থন করছে কংগ্রেস এবং লালুপ্রসাদ যাদবের দল আরজেডি। বিজেপি এ বারেও এই আসনে প্রার্থী করেছে গিরিরাজকে।

গত তিন দফার নির্বাচনেই ভোটদানের হার গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। চতুর্থ দফায় ভোটের হার কেমন হয়, সে দিকে নজর থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here