অন্তঃসত্ত্বা ইউএনও

স্টাফ রিপোর্টার :: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা বেগম বীনাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করার বিষয়টি নিয়ে সংসদে কথা বলেছেন ক্ষমতাসীন দলের দুই জন সদস্য। তারা এই ঘটনায় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। পরে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, তিনিও আশা করেন এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বক্তব্য দেবেন।

সোমবার বিকালে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে এই প্রসঙ্গটি তোলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। তিনি ওই নারী কর্মকর্তার ওএসডি হওয়া এবং ৩১ সপ্তাহে তার অপরিপক্ক শিশুর জন্মের বিষয়টি তুলে ধরেন। দৃষ্টি আকর্ষণ করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রীর।

হোসনে আরা বেগম বীনা নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও ছিলেন। তিনি বিয়ের নয় বছর পর গর্ভবতী হয়েছেন। এই অবস্থাতেও দায়িত্ব পালনে ছিলেন একনিষ্ঠ। সম্প্রতি তিনি ওএসডি হন আর এই অবস্থায় ৩১ সপ্তাহেই তার সন্তানের জন্ম নিয়েছে যদিও স্বাভাবিক নিয়মে ৩৮ সপ্তাহে তার জন্ম নেওয়ার কথা ছিল।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস হোসনে আরা বেগম বীনা। এটি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। তিনি ঘটনাটি তদন্তেরও এ নির্দেশ দেন।

এদিকে হোসনে আরা বীনাকে বিশ্রামে থাকতেই ওএসডি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) শেখ ইউসুফ হারুন।

সংসদে প্রসঙ্গটি তোলার পর এ নিয়ে কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানও। তিনি বলেন, ‘কী অপরাধে কী কারণে তাকে (বীণা) হঠাৎ করে ওএসডি করা হলো এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি যদি কোনো অপরাধ করতেন তাহলে আমি জানতাম। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী তাকে ওএসডির কারণ এবং কার নির্দেশে মেয়েটিকে ওএসডি করা হয়েছে সে বিষয়ে কথা বলবেন বলে আশা করি।’

পরে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘আমার মনে হয় নিশ্চয়ই জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বাস্তব পদক্ষেপ নেবেন এটা আমরা আশা করি।’

 

তদন্তের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরা বেগম বীণাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি সোমবার জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।

অন্তঃসত্ত্বা ইউএনও হোসনে আরাকে ওএসডি করার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে হোসনে আরাকে ভালো কোথাও বহালেরও নির্দেশনা দিয়েছেন।

এদিকে অন্তঃসত্ত্বা হোসনে আরাকে চিন্তামুক্তভাবে বিশ্রামে রাখতে ওএসডি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) শেখ ইউসুফ হারুন।

হোসনে আরাকে ৪ ফেব্রুয়ারি ওএসডি করা হয়। এ নিয়ে তিনি ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি অভিযোগ করেন, সন্তানসম্ভবা হওয়ায় কাজে অযোগ্য দেখিয়ে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা তাকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে বদলির পায়তারা শুরু করেছিলেন।

অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরও অত্যন্ত সফলভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জানিয়ে হোসনে আরা আরও লেখেন, ৪ ফেব্রুয়ারি তাকে ওএসডি করার সংবাদ পেয়ে তিনি প্রচণ্ড মানসিক চাপ পান। ২০ এপ্রিল বাচ্চা জন্মের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও মানসিক চাপে তার ফুসফুসে রক্ত সঞ্চালন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় এবং বাচ্চার অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাস পায়। এ ঘটনায় রাতেই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন এবং পরদিন সকালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here