দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান চা বাগানের দুটি ট্রেড ইউনিয়নেই স্থবিরতা বিরাজ করছে। দেশের বৃহৎ শ্রমিক সংগঠন ‘চা শ্রমিক ইউনিয়নে’ বৈধতা বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতার ফলে দ্বি-বার্ষিক চুক্তি সম্পাদনেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিদ্যমান এ পরিস্থিতিতে চা-বাগানে কর্মরত শ্রমিক ও কর্মচারিদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। অপরদিকে কর্মচারিদের সংগঠন ‘টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশনে’ নির্বাচন পরবর্তী জটিলতায় সাংগঠনিক কার্য়ক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ফলে আগামী ডিসেম্বরে শেষ হওয়া মেয়াদের মধ্যে ‘টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশনে’র সাথে মালিকপক্ষের ‘বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশন’এর দ্বি-বার্ষিক চুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

শ্রমিকদের সংগঠন ‘চা-শ্রমিক ইউনিয়নে’র সঙ্গে মালিকপক্ষের ‘বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশন’এর (বিটিএ) দুই বছর মেয়াদি চুক্তির মেয়াদ গত ৩১ আগস্ট ২০১১খ্রি: শেষ হয়ে গেছে। ওই চুক্তির মাধ্যমে চা বাগানে কর্মরত সব শ্রমিকের মজুরি এবং অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চত হয়ে থাকে। শ্রমিকদের বৈধ সংগঠনের সঙ্গে দুই বছর পরপর বিটিএ এ চুক্তি করে। কিন্তু বিবাধমান দুই গ্রুপের অনঢ় অবস্থানের কারণে সৃষ্ট জটিলতান ফলে বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়ায় ৩১ আগস্ট চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বিটিএ কোন পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেনি।

অপরদিকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০১১খ্রি: বিটিএ’র সঙ্গে ‘টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশনে’র দ্বি-বার্ষিক চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এর আগে দাবিনামা (চার্টার অব ডিমান্ড) তৈরি করে সংগঠনের সাধারণ সভায় অনুমোদন নিয়ে বিটিএতে পেশ করতে হবে। যে দাবিনামার মাধ্যমে দেশের সব চা বাগানে কর্মরত কর্মচারিদের আগামী দুই বছরের বেতন-ভাতা নির্ধারিত হবে। সংগঠনের এসব কাজ না হওয়ায় চা বাগান কর্মচারিদের মধ্যে হতাশার পাশাপাশি ক্ষোভও বিরাজ করছে বলে টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশনের দুই অংশের নেতা মাহবুব রেজা ও মো. ইকবাল চৌধুরী জানান। তারা সংগঠনের কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃস্টি হওয়ার কথাও স্বীকার করেন। তবে সাধারন সম্পাদক পদে নির্বাচিত মো. জাকারিয়া জানান, মূলত সভাপতি পদে নির্বাচিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের বিষয়টি সহসাই সূরাহা না হলে বিকল্প ব্যবস্থায় তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করবেন।

শ্রীমঙ্গলস্থ শ্রম কল্যাণ অধিদপ্তরে উপ-শ্রম পরিচালক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, দুই সংগঠনেই দৃশ্যত এখন অচলাবস্থা বিরাজমান। এতদিন আদালতে মামলা থাকায় এনিয়ে কিছু করা যায়নি। তবে ইতিমধ্যেই যুগ্ম শ্রম পরিচালক ও নিবন্ধক (ট্রেড ইউনিয়ন) বিবদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে তিনি জানান।

গত ১৯ অক্টোবর সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পাঁচজন সদস্য নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে স্বীকার করে যুগ্ম শ্রম পরিচালক ও নিবন্ধককে (ট্রেড ইউনিয়ন) লিখিতভাবে জানান। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দেয়। পুরনো কমিটিও নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়নি অভিযোগ এনে নতুন কমিটির কাছে ক্ষমতা  হস্তান্তর করেনি। উলে­খ্য নির্বাচনে গত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল চৌধুরী সভাপতি ও  মো. জাকারিয়া সাধারন সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।

সংশি­ষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ২ মে অনুষ্ঠিত হয় চা-বাগান কর্মচারিদের সংগঠন ‘টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশন’এর নির্বাচন। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে গত কমিটির সভাপতি মাহবুব রেজাসহ আরও কয়েকজন প্রার্থী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন।

দেশের চা বাগানগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের সংগঠন ‘চা-শ্রমিক ইউনিয়’নে ২০০৮ সালের ২৬ অক্টোবর পঞ্চায়েত ও ভ্যালি কমিটি এবং ২ নভেম্বর কেন্দ্রিয় কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মাখন লাল কর্মকার-রামভজন কৈরি সমর্থিতরা জয়লাভ করে। নির্বাচনে পরাজিত বিজয় বুনারজি-সীতারাম অলমিক সমর্থিতরা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ঢাকায় শ্রম পরিদপ্তরে অভিযোগ করে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের শর্তে শ্রম পরিদপ্তর বিজয় বুনারজিকে আহবায়ক করে ৩০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। শ্রম পরিদপ্তর গঠিত আহবায়ক কমিটির ক্ষমতা বলে ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর বিজয় বুনার্জী-সীতারাম অলমিকের সমর্থকরা শ্রীমঙ্গলে ইউনিয়নের কেন্দ্রীয দপ্তর লেবার হাউসে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করলেও শ্রম পরিদপ্তরের বেধে দেওয়া শর্ত অনুযায়ী ১২০ দিনের মধ্যে ওই কমিটি নির্বাচন করতে পারেনি।

এব্যাপারে জানতে চাইলে চা শ্রমিক ইউনিয়নের আহবায়ক বিজয় বুনার্জী বলেন, শ্রম আদালতে মামলা হওয়ার কারণে ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি আটকে গিয়েছিল। এখন গঠনতন্ত্র সংশোধনের কাজ করা হচ্ছে।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরি বলেন, শ্রম পরিদপ্তরের আহবায়ক কমিটি গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শ্রম আদালতে মামলার রায় তাঁরা পেয়েছেন। উচ্চ আদালতে (হাই কোর্ট) আপিল করেও আহবায়ক কমিটি হেরেছে।

তবে, চা শ্রমিক ইউনিয়নের বিবাদমান দুই গ্রুপের নেতৃবৃন্দই মনে করেন, বিটিএ’র সঙ্গে নতুন চুক্তি করা না গেলে চা বাগানের শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষন করা সম্ভব হবে না। এর ফলে শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা বাড়বে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/কাওছার ইকবাল/শ্রীমঙ্গল

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here