নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার আওতাধীন রাজউকের পূর্বাচল উপশহর এলাকার আদিবাসিন্দাদের প্লট হস্তান্তরের পূর্বে উচ্ছেদের প্রতিবাদে বুধবার এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভকারীরা ঢাকা বাইপাস সড়কের রূপগঞ্জের মাঝিপাড়া এলাকার বিভিন্ন স্থানে টায়ার, কাঠের টুকরোতে আগুন জ্বালিয়ে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অবরোধ সৃষ্টি করে।

অবরোধ চলাকালে সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। তাতে পরিবহনের যাত্রীরা চরম ভোগানিত্মর শিকার হয়। গত সোম ও মঙ্গলবার  শতাধিক পরিবারকে বিনা নোটিশে আকষ্মিকভাবে উচ্ছেদ করার পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের সময় মঙ্গলবার গোবিন্দপুর গ্রামের স্বপনের ছেলে সজল (৭) নামের এক শিশু দেওয়ালের চাপায় ঘটনাস্থলে নিহত হয়। তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে মঙ্গলবার রাতে দাফন করা হয়েছে। রাজউকের ম্যাজিষ্ট্রেট ছাড়াও পুলিশ, র‌্যাব উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেয়।

এদিকে আদিবাসিন্দাদের প্লট বুঝিয়ে না দিয়ে আকষ্মিক উচ্ছেদ অভিযান চালানোর কারণে পূর্বাচলে আদিবাসিন্দাদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সকাল থেকেই এলাকার পুরম্নষ-মহিলারা অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। পুরম্নষদের অধিকাংশের হাতে লাঠি ও মহিলাদের হাতে ঝাঁড়ু ছিল। অবরোধ চলাকালে ঢাকা বাইপাস সড়কের রূপগঞ্জের মাঝিপাড়া লালমাটি এলাকায় আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন পূর্বাচল আদিবাসি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন, কমিটির নেতা মনিরুল হক খসরু, মোস্তফা কামাল, নিজামউদ্দিন, রিটন প্রধান, মজিবুর রহমান, মোনায়েম, আব্দুস সামাদ, কাজীমউদ্দিন, রাসেল মিয়া, আকিমউদ্দিন, আলমগীর হোসেন মোল্লা, রফিকুল ইসলাম সামা, মীর ওয়ালিউল্লাহ প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন, জমি ও ঘরবাড়ির ক্ষতিপূরণের বিল আমরা ইতিমধ্যে উত্তোলন করেছি ঠিক কিন্তু এখনো বহু আদিবাসিন্দা প্লট বরাদ্দ পায়নি। আবার অনেকে বরাদ্দ পেলেও তাদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়নি। দু’জন থেকে ৯ জনের মধ্যে যৌথ প্লট বরাদ্দ করা হয়েছে। আকস্মিকভাবে উচ্ছেদ করলে আমরা কোথায় রাত কাটাবো। আগে প্লট বরাদ্দ ও হস্তান্তর করতে হবে। পরে আমরা নিজেরাই অন্যত্র চলে যাব।

জানা গেছে, রাজউক পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের সড়ক উন্নয়নের জন্য স্থাপনা উচ্ছেদ করতে এসে বসতবাড়িও উচ্ছেদ করে ফেলে। অভিযানে চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্রের শতাধিক যুবক শ্রমিক হিসেবে অংশ নেয়। তারা আদিবাসিন্দাদের বসতঘরে রক্ষিত নগদ টাকা, মোবাইলসেটসহ মূল্যবান সামগ্রী লুটে নেয়। আকষ্মিক অভিযানের কারণে অধিকাংশ আদিবাসিন্দা বসতঘরের আসবাবপত্র সরাতে পারেননি। তাদের মধ্যে গোবিন্দপুর গ্রামের আরেফিন, আবু সাঈদ, মোসলেউদ্দিন, মজিবুর, মাঝিপাড়া গ্রামের আরমান, বসতঘরে রক্ষিত নগদ টাকা, মোবাইল সেট, মূল্যবান কাগজপত্রসহ আসবাবপত্র সরাতে পারেননি। বুলডোজারে এসব গুড়িয়ে দেয় রাজউক।

মাঝিপাড়া গ্রামের প্রট বঞ্চিত ওমর আলী বলেন, আমার বাব-দাদার জমিতে পূর্বাচল উপশহর গড়ে উঠছে অথচ আমার মতো অনেকের নামেই প্লট বরাদ্দ দিতে রাজউক টালবাহানা করছে।

রূপগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নীলা বলেন, প্রট হস্তান্তরের পূর্বে পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা ঠিক হবে না।

উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত উপশহর রাজধানী ঢাকা থেকে ১৬ কিলোমিটার পূর্বে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার ৬ হাজার ৭৫১ একর জমি নিয়ে পূর্বাচল উপশহর স্থাপন করা হচ্ছে। প্রকল্পের পশ্চিমে বালু ও পূর্বে শীতলক্ষ্যা সেতু। উপশহরের জন্য নিকুঞ্জ এলাকার উত্তরপ্রানত্ম দিয়ে ৩০০ ফুট নতুন শহরের নির্মাণ কাজ ধীর গতিতে চলছে। প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়, হাসপাতাল, কলেজ, ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার, ষ্ট্রেডিয়াম, ইনডোর কমপ্লেক্স, সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগার, ক্লাব, পার্ক, সিনেমাহল সহ সুযোগ সুবিধা থাকবে। আবাসিক এলাকার পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৪৫ দশমিক ৯১ একর জমি। ইতিমধ্যে প্রবাসী, সাধারণ ও আদিবাসিন্দাদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো বহু আদিবাসিন্দারা পস্নট বরাদ্দ পায়নি। যারা পেয়েছে তাদের মধ্যে হসত্মানত্মর করা হয়নি।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/মাকসুদুর রহমান কামাল/নারায়ণগঞ্জ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here