Razib Mehbubআমি জগৎ ঈশ্বর – ঈশ্বর নই
রাজীব মেহবুব
 
কি দেখছো অমন করে,উদভ্রান্তের মতই ছুটছো
এখনো পৃথিবীর বুকে গভীর রাত,খসে পড়ে তারা
জোৎস্নাহীন ভয়ে ভয়ে ক্ষয়ে ক্ষয়ে
জোনাকিরা মরে পড়ে আছে পথে পথে-শান্তি,শান্তি কই?
 
“গগন কালো গহিন কালো
জনপদের পর জনপদ ধ্বংস হলো
ওহে মানুষ কিসের পদধ্বনি শোনো”
কফিনের পর কফিন সাজিয়ে তোলো
স্বজন যাচ্ছে,স্বজন যাবে,তুমি বড্ড ক্লান্ত 
অথচ যমদুত এখনো খুব ব্যস্ত 
ঘুরছে পাড়ার অলিতে গলিতে
তোমার খাবার ঘরে,পড়ার টেবিলে
শোবার ঘরে, অফিসে আদালতে
মর্ত্যের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত
সর্বত্রই সেই তিনি ব্যতিব্যস্ত
একের পর এক আত্মা নেবার 
করে আয়োজন – মানুষ থেকে মানুষ কীট
প্রাণী থেকে ক্ষুদ্র প্রাণী;আমিও প্রতিক্ষায় আছি
ওগো যমদুত তুমি কত কাছাকাছি
আমিতো নিরুপায় হয়ে দেখছি 
 
আকাশে মেঘের সারি
সারি-সারি ঘন কালো মেঘ
উথাল পাথাল ধ্বংসের খেলা
মেঘে মেঘে ঘর্ষণ -বজ্র বর্ষণ
ভূমির বুকেতে জলরাশি 
এখন জমাট বদ্ধ হিমবাহ।।
 
সুপেয় পানীয় ক্রমে ক্রমে 
শুন্য থেকে শুন্যতা সর্বত্র
ভূকম্পন অনুভুত হচ্ছে- রক্তগঙ্গায় ভাসছে বুক
ভূমির ভেতর থেকে বুকের ভেতর
তলিয়ে গেছে মানুষ,মানুষের পাপে 
আমরা পথহীন পথের বাঁকে নির্জীব নিষ্প্রান
মৃত সদ্য শিশু ডাষ্টবিনে,কুকুরেরা করে কাড়াকাড়ি
অভিশপ্ত সময়,অভিশপ্ত প্রকৃতি।।
 
আমি জগৎ ঈশ্বর -ঈশ্বর নই
যে এ তোমাদের অভিশাপ দেব
অথবা এ তোমাদের দেব আর্শীবাদ
আমি অতি সাধারণ এক উচ্ছিষ্ট মানুষ 
কাম,ক্ষুধা,মোহ,ঘুম সব আছে
ভালোবাসারও চাহিদা আছে জগতে
আমিও পাপী মহাপাপী জগৎ সংসারে
ন্যায় বিচারক তিনি স্রষ্টা মহান আল্লাহ
ওহে মানুষ আস্ফলোন ভালো না
যুগে যুগে বলেছি আস্ফালন করো না।।
 
নদীতে ডুবছে মানুষ,আকাশে ভাসছে মানুষ
হাতের উপর ভর করে হাঁটছে মানুষ আমি দেখছি
মানুষেরা খাচ্ছে মানুষের মরদেহ
মানুষের শরীরে চামড়ার বদলে ভরপুর 
আঁশটে -পঁচা দুর্গন্ধ যুক্ত চেহারা বিকৃত
কি হবে,হবে কি পৃথিবীর সেই কথা ভাবছি।।
 
যে মহান কৃষক তোমার মুখে অন্ন দেবে বলে
রোদ- ঝড়- বৃষ্টি মাথায় করে ফসলে ভরলো
তোমার গোলা;সেই কৃষকও ফসলের দাম পাইনি
অসহায় পিতৃত্বের গোপন সমাধি ছেড়ে
ফসলের ক্ষেতে-ফসলে লাগল পোকা,শান্তি নেই
সু-খাদ্যহীন পৃথিবী আজ ভালোবাসা হীন।।
 
কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতাদের হাহাকারে
প্রকম্পিত হলো সর্বদিক
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেনি
অগনিত নারী পুরুষ -বাড়ছে স্বেচ্ছাচারিতা।।
 
শান্তির প্রতারণার বিষে জর্জারিত কাব্য
হাহাকার করে,মরতে মরতে বাঁচে পৃথিবীর জন্য
পৃথিবীকে আলো দেখাবে বলে তাঁর বেঁচে থাকা 
তবুও পৃথিবী বধির এবং মোহে বন্দি।।
 
সুফসল আসেনা এখানে কারো ঘরে
দেশে দেশে যুদ্ধের দামামা -ওহে নেতা তুমি উল্লাসিত
হাজার হাজার ক্ষতবিক্ষত শরীর গুলো দ্যাখো
আর অস্ত্র ব্যাবসা কত সফল হলো
তার হিসাব কষো ঠান্ডা ঘরে- আর দেখছো
রক্তের স্রোতে ভেসে আসছে মুদ্রা।।
 
ওদিকে মুদ্রাতাপে রমণীর স্তন যুগল হয় প্রিয়
দাঁত ও নখারাঘাতে রক্তাক্ত করো অবকাশে
হচ্ছো পাশবিক কামুক দানব – ওহে নর- নারী
কুমারীর শরীরে নিপুন কারুকাজ আঁকো
কম্পমান শরীরে আল্লার আরশ কাঁপলো
শুধু কাঁপলে না তুমি ; না তোমার বিবেক।।
 
মনে রেখো আমি জগৎ ঈশ্বর -ঈশ্বর নই
যে তোমায় আর্শীবাদ দেব
আমি অভিশাপ দিচ্ছি 
তোমরা অচিরে যৌবন হারাবে
তোমাদের ফসলের ক্ষেত হবে শুণ্য
অকাল বার্ধক্য মিলবে সরস যৌবনের।।
 
কোটি কোটি জনতার মতামতে নয়-ধর্ষণে এ তুমি
গড়েছো আপন নীলয়,বিশ্ব বলয়ে তুমিই শোষক-
শোষিতের রক্ত কত প্রিয়,মদ এবং রক্তে একাকার
এই তোমার কোমল পানীয় নেশাগ্রস্থ উম্মাদ তুমি
সর্বদা প্রসারিত জিহ্বা-খাচ্ছো সব।।
 
একদিন খাবে নিজেই নিজেকে
সেই সময়ে শিশুরা হারাবে দুধের উৎস
আর ভালবাসা বঞ্চিত মানুষ তখন পবিত্র
তারা নিরুপায় -ভালবাসা নিরুদ্দেশ
ভালবাসতেও ভুলে গেছে আমার পৃথিবী।।
 
জ্বালায় জ্বালা দেহের জ্বালা
মনের জ্বালা জ্বলছে দেখি প্রাণে
সেই জ্বালাতে কাঁদছে সবাই
সুরে সুরে কণ্ঠ ছেড়ে গহীন গভীরে
জ্বালায় জ্বালা দেহের জ্বালা
দেখলাম জনম ভরে।। 
 
আকাশ বাড়ী মেঘের সাথে বাতাস করলো খেলা
সেই খেলাতে জন্ম নিলো বৃষ্টি নামের কন্যা
বৃষ্টি এলো প্রাণের মায়ায় ভরে জলাকার
পানকৌড়ি ভালোবাসা জলের পরে প্রাণের খেলা
ডানায় ডানায় প্রেমের ছায়ায় ঠোঁটে ঠোঁটে
ঠাকুর ঠুকুর ছন্দে মেতে মন নাচছিলো বেশ
হঠাৎ পানকৌড়ি প্রিয়তমা দিলো ডুব;
ডুব সাঁতারে অনেক দুরে কেন গেলো চলে
পানকৌড়ি প্রিয়তম ডুকরে ডুকরে কাঁদে
কতশত বেদনা আজন্ম জাগে,প্রাণের প্রদীপ নিভে।।Razib Mehbub 01
 
অবহেলা-বঞ্চনা-অপমান-লাঞ্চনা
আর তিরষ্কার এই কাব্যের সম্বল
এখানে কেউ কারো নয়,যে যারে পারে
তারে ঠকায় – উল্লাসে মাতে।।
এভাবে চলবে কতদিন
শান্তি কোথায়,কোথায় শান্তি??
 
আমাদের জগৎ সন্তানেরা হবে অনির্বাণ
প্রীতিলতা,ক্ষুদিরাম,বঙ্গবন্ধু আজো আছে
মোহম্মদ এর আদর্শ শরীর থেকে শরীরে বয়ে মগজে
সুন্দর দিনের আশায় ;আশাতে বুক বাঁধে
অথচ মানুষের মত দেখতে মানুষ বিপথ গামী
আমি নিশ্চিত তোরা একদিন ধ্বংস প্রাপ্ত হবি।।
 
আমি অতীতের সবকটা যুগেও ছিলাম
আমি প্রাগৈতিহাসিক যুগে ছিলাম,বর্তমানে আছি
আগামীতেও থাকবো তোমাদের মাঝে
চোখের তারায় মহামিলনের সন্ধিক্ষণে।।
 
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জন্মেছি
আমি আমার অভাগিনী মায়ের কোলে
মায়ের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে
অনাদর অবহেলায় বড় হয়েছি,প্রতিটি বিপ্লবে ছিলাম
বিপ্লবের জন্য শান্তি – ভালোবাসার মানুষ খুঁজেছি
পাবার আগেই হত্যা করেছো প্রিয়তমাকে।।
আমি অভিশাপ দিচ্ছি হে সর্বভুক ধ্বংস হবি
বাঁচতে যদি চাস’রে তবে শান্তিকে ফিরিয়ে দিবি
 
আমি জগৎ ঈশ্বর -ঈশ্বর নই
যে তোমায় অভিশাপ দেব
অথবা তোমায় দেব আর্শীবাদ
আমি অতি সাধারণ এক ভালোবাসা উপবাসী
আমিও মানুষ আমারও কাম,ক্ষুধা,মোহ,ঘুম 
সব আছে প্রতিটি ঘরের প্রতিটি প্রাণের কোণে।
 
আমি কি করে বোঝাবো হে জগতবাসী
কতখানি কষ্ট পেলে পৃথিবীর মুখে রক্ত ঝরে,
বারুদ ছাড়াও বিষ্ফোরিত হয় চোখ!
 
তবু বারবার জন্ম নেব সফল বিপ্লবে তোমাদের
বারবার জন্ম নেবো সবুজ পাতায় অতৃপ্ত আত্মা হয়ে  
ভালোবাসার শান্তিকে খুঁজে পেতে বুকের মাঝে
আকাশ ভেদে,জল ছিঁড়ে,ভূমি ফুঁড়ে মাটির ঘরে
আমি বারবার জন্ম নেবো,আমি বারবার জন্ম নেবো
 
আমি জগৎ ঈশ্বর -ঈশ্বর নই
আমি মানুষ অতি সামান্য ক্ষুদ্র প্রাণের মানুষ
আমি শান্তির জন্য মানুষ,এ পৃথিবীবাসীর জন্য মানুষ।
আমি শান্তির জন্যই মরি, শান্তির জন্য বিপ্লবী
আমি মানুষ অতি সামান্য ক্ষুদ্র প্রাণের মানুষ
আমি জগৎ ঈশ্বর -ঈশ্বর নই।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here