ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক ::
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর এবার রাজনীতি ছেড়ে দেবার ঘোষণা দিলেন নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ঠিকানার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি ও প্রবাসী সাবেক সাংসদ এম এম শাহীন। গত ২৫ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিকালে কুলাউড়ায় নিজ বাসভবনে নির্বাচন পরবর্তী ধন্যবাদজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হয়ে এম এম শাহীন নির্বাচনে অংশ নিলেও ৭ জানুয়ারি ভোট শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী ওরফে নাদেল নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। দীর্ঘ ২৭ বছর পর মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে জয়ের মুখ দেখল আওয়ামী লীগ। তিনি এবারই প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁর বাড়ি কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের কৌলা গ্রামে।
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে শফিউল আলম চৌধুরীসহ আট প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে ৭ জানুয়ারি ভোট শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এম এম শাহীন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম সফি আহমদ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেন।
এসব কারণেই কিংবা কিছুটা নিজের সাথে অভিমান করে বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতি, সন্ত্রাসী-লুটেরা রাজনীতিবিদ আর প্রিসাইডিং অফিসার নামধারী কিছু আদর্শচ্যুত শিক্ষকসমাজের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করে দলীয় রাজনীতি থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের কথা জানান তিনি। তবে যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সম্পূর্ণ দলনিরপেক্ষ অবস্থান থেকে দেশ ও মানুষের, বিশেষ করে কুলাউড়াবাসীর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন তিনি।
শাহীন বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি দিন দিন খুনি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, লুটেরা আর দেশদ্রোহীদের আয়ত্তে চলে যাচ্ছে। বিস্ময়কর হলো, দেশের প্রায় অনেক দল ও গোষ্ঠী এই অপরাজনীতিবিদদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তাদের অর্থবিত্ত ও অশুভ শক্তির দাপটে দেশপ্রেমিক ও সৎ রাজনীতিবিদেরা আজ অসহায়। নীরবে-নিভৃতে তারা রাজনীতির মাঠ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। অদূর ভবিষ্যতে এটা দেশ ও শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’
পথভ্রষ্ট শিক্ষকদের কঠোর সমালোচনা করে সাবেক এমপি এম এম শাহীন বলেন, ‘শিক্ষকেরা সমাজের দর্পণ, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিশারি। কিন্তু একশ্রেণির শিক্ষক তাদের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে কলুষিত করছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়ে শিক্ষকেরা ছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়। এখনো সেই শিক্ষকদের কাউকে কাছে পেলে শ্রদ্ধায় আমরা মাথা নত করি। তাদের দোয়া/আশীর্বাদ নিই। কিন্তু বর্তমান সময়ের অনেক শিক্ষক টাকার কাছে বিক্রি হয়ে সেই শ্রদ্ধার জায়গাটুকু হারিয়ে ফেলেছেন। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুলাউড়ার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অনেক শিক্ষক যেভাবে নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীকে জয়ী করতে ভূমিকা রেখেছেন, সেটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও গর্হিত অপরাধ।’ এই ন্যায়নীতিহীন ও আদর্শবিবর্জিত শিক্ষকদের কাছ থেকে দেশের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা কী শিখবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন এম এম শাহীন।
সভায় আবেগাপ্লুত হয়ে ঠিকানার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি এম এম শাহীন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিলাসবহুল জীবন পরিত্যাগ করে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। আমি যখন ঠিকানা পত্রিকার সম্পাদকের মতো বিরাট সম্মানীয় পদ ছেড়ে দেশে রাজনীতি অভিমুখী হই, তখন অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, দেশের এমপি-মন্ত্রী হওয়ার চেয়ে ঠিকানার মতো বিশাল মিডিয়ার সম্পাদকের মর্যাদা অনেক বেশি। তাই আমার উচিত দেশের রাজনীতিতে পা না দেওয়া। কিন্তু আমি স্বদেশবাসী ও প্রবাসীদের বৃহৎ পরিসরে সেবা দেওয়ার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের রাজনীতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করি। আর সেটা করতে গিয়ে দীর্ঘ ৩০টা বছর নিজেকে সম্পূর্ণ বিলিয়ে দেই।
ঠিকানার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি শাহীন বলেন, এসব কারণে এই বস্তাপচা রাজনীতির সঙ্গে আজ থেকে আমার আর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ভবিষ্যতে ঠিকানার হাল ধরার পাশাপাশি স্বদেশ-প্রবাসের যেকোনো দুর্যোগময় মুহূর্তে সম্পূর্ণ দলনিরপেক্ষ একজন ব্যক্তি হিসেবে পাশে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে যেসব নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণী-পেশার সমর্থক তার পাশে থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সাবেক এই এমপি। পাশাপাশি তাদের পরিবার-পরিজনসহ কুলাউড়ার সর্বশ্রেণির মানুষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
দ্বাদশ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় কুলাউড়া পৌরসভা ও ১৩ ইউনিয়ন থেকে যেসব নেতাকর্মী-সমর্থক তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেন, তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য উক্ত সভার আয়োজন করা হয়।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here