
রপ্তানি করা পণ্যের মূল্য পরিশোধ করার জন্য ব্যাংক এশিয়ার উত্তরা শাখার ইস্যু করা ৭৬টি বিল অফ লেডিং ও অন্যান্য শিপিং ডকুমেন্ট স্থানীয় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অর্ক এন্টারপ্রাইজ এবং এক্সিলেন্স ইমপেক্স সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল লোকাল অফিসে জমা দেয়। এরমধ্যে একাধিকবার ব্যাংক এশিয়া উত্তরা শাখার মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসে রপ্তানি বিলের বিপরীতে দ্রুত মূল্য পরিশোধ করতে তাগাদা দেয়া হয়। বিল না পেয়ে রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে স্থানীয় রপ্তানিকারক বিবেক সাহা এবং বিএস শিপিং লাইনস লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা রপ্তানি করা পণ্যের অবস্থা গোপন রেখে নানাভাবে হয়রানি করে। তাদের পারস্পরিক যোগসাজশে বিল অফ লেডিংগুলোর বিপরীতে রপ্তানি করা বিপুল পরিমাণ পাটের সুতা জালিয়াতির মাধ্যমে জাহাজ থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৫৫টি ডকুমেন্টের অনুকূলে পাঠানো পণ্যের বিপরীতে বাংলাদেশে কোনো মার্কিন ডলার আসেনি। এই পরিমাণ অর্থ বিবেক সাহা এবং বিএস শিপিং আত্মসাৎ করেছে।
অপরদিকে, বাকি ২১টি ডকুমেন্টের অনুকূলে পাঠানো পণ্যের বিপরীতে রপ্তানি মূল্যের কিছু অংশ সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসে বিবেক সাহার ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। পরবর্তীতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিবেক সাহা প্রায় ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৯৩৮ ডলার ওই অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেন। অবশিষ্ট ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯৩ ডলার তুরস্ক থেকে এখনো আসেনি। এসব টাকার কিছুই রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজ পায়নি।
এদিকে রপ্তানি করা পণ্যের মূল্যের বিপরীতে ব্যাংক এশিয়া উত্তরা শাখার ইএক্সপিগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইন এক্সপোর্ট মনিটরিং সিস্টেমে ওভারডিউ হিসাবে দেখাচ্ছে। ফলে রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজের রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রপ্তানি মূল্যের বিল পাওয়ার জন্য সোনালী ব্যাংককে নির্দেশ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একাধিকবার আবেদন করলেও কোনো সাড়া মেলেনি। আর এই অজুহাতে রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজের ১৯ কোটি টাকার এফডিআর আটকে রেখেছে ব্যাংক এশিয়া। অথচ তাদের কাছে রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কোনো ঋণ নেই।
এ ব্যাপারে অর্ক এন্টারপ্রাইজ এবং এক্সিলেন্স ইমপেক্সের স্বত্বাধিকারী বিবেক সাহার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার অফিসে খোজ নিয়ে জানা গেছে, এসব অর্থ আত্মসাতের ঘটনার পর থেকে তিনি দেশের বাইরে আছেন।
রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাসার খান বলেন, দেশের প্রচলিত নিয়ম মেনে বৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছি। এর আগেও স্থানীয় রপ্তানিকারকের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করেছি। কিন্তু এমন প্রতারণার শিকার হব কখনোই ভাবিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এ অর্থ উদ্ধারের উদ্যোগ নেয় তাহলে সচল থাকবে ইন্ডাস্ট্রি অন্যথায় বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।