ছোটবেলায় বিয়ের কথা শুনলেই কেঁদেকেটে অস্থির মীম। মা-বাবাকে ছেড়ে থাকতে হবে, এটা তো ভাবাই যায় না। সেই ভাবনায় এখনো আচ্ছন্ন হয়ে আছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবারই মীম আরও একটি জন্মদিন পার করলেন। দেখতে দেখতে মীম বড় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু বিয়ে নিয়ে কথা উঠলেই মেজাজটা যেন গরম হয়ে যায় তাঁর।
যেখানে বিয়ে করবেন না বলে পণ করেছেন মীম, সেখানে তো আর প্রেম করার প্রশ্নই আসে না।
‘তাও যা করতাম, সেটা তো পারিনি মায়ের জন্যই। স্কুলে মা নিজে দিয়ে ও নিয়ে আসতেন। এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই তো আবার লাক্স-চ্যানেল আই ফটোসুন্দরীতে জড়িয়ে গেলাম। এইচএসসিতে তো কড়া প্রহরা। ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুত্বও হলো না, কাউকে দেখতেও পেলাম না। এখন আর প্রেম করার ইচ্ছেও নেই।’ বলছিলেন মীম।
এখন কি কেউ মীমকে পছন্দ করে না?
মীম হাসেন। ‘হয়তো করে, তবে তা আমি জানি না। এমনিতে কেউই আমাকে বলেনি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি। আবার দু-একজনকে দেখেছি যে এক-আধটু বলার চেষ্টা করেছে আকারে-ইঙ্গিতে, আমি তাদের নিরুৎসাহিত করেছি। আসলে এখন আর আমি প্রেম বা বিয়ে নিয়ে ভাবতে চাই না, আমার ভাবনায় এখন শুধু অভিনয় আর পড়াশোনা।’ বললেন তিনি।
মীম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করছেন। আগামী ছয় বছরে মাস্টার্স শেষ করে বেরোবেন। পাশাপাশি অভিনয়টা নিয়মিত করবেন। মীম কতগুলো নাটকে অভিনয় করছেন? এমন প্রশ্ন শুনে বললেন, ‘গেল ঈদেই নয়টি নাটক প্রচারিত হলো টিভিতে। বুঝতেই পারছেন আমার ব্যস্ততা। আরও কিছু কাজ করতে পারিনি, কারণ পূজার সময়টা ছিলাম না। ফলে সংখ্যাটা এবার বেশি হয়নি।’
মীম অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে লাইট হাউজ এবং সনাতন বাবু ও তাঁর স্বপ্নের প্রজাপতি নাটক দুটি মীমকে ভীষণ আনন্দ দিয়েছে। ‘শুধু আনন্দই নয়, আমাদের আত্মবিশ্বাসটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। লাইট হাউজ নাটকে আমি জাহিদ হাসানের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। এই নাটকে আমার গেটআপটা ছিল অন্য রকম। এখানে জাহিদ হাসান নির্বাচনে দাঁড়ায় আর ফেল করে। এভাবেই সে আমার সব গয়না বিক্রি করে দেয়। এ নিয়ে সারাক্ষণ জাহিদ হাসানের সঙ্গে আমার ঝগড়া লেগে থাকে। এরপর আমি আমার জমি বন্ধক রেখে টাকা এনে জাহিদ হাসানের হাতে তুলে দিই নির্বাচন করার জন্য। পুরো নাটকের গল্পটাই ছিল আমার জন্য পরীক্ষামূলক। এবং ভালোভাবেই উতরে গেছি বলে মনে হয়।’
আবার সনাতন বাবু ও তাঁর স্বপ্নের প্রজাপতি নাটকের গল্পে দেখানো হয়েছে, ‘৭৬ বছরের এক বৃদ্ধের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করছি। আসলে এখানে ব্যাপারটা এমন থাকে যে ১৯৭১ সালে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু আমার মৃত্যু হয়। তার পর থেকে আমার আত্মাটা আমার স্বামীর সঙ্গেই থাকে। অসাধারণ একটি চরিত্র ছিল এটি এবারের ঈদে আমার জন্য!’ বললেন তিনি।
মীম চার বছর ধরে অভিনয় করছেন। বললেন, এরই মধ্যে ১০০-এর বেশি নাটকে কাজ করেছেন। তবে এত নাটকের ভিড়েও দুটি নাটক এখনো অম্লান হয়ে আছে। একটি হচ্ছে শেষের কবিতা পরের কবিতা এবং বনলতা সেন।
‘এই দুটো নাটকের কথা এ কারণেই বলছি যে মানুষ আমাকে অভিনয়শিল্পী হিসেবে জেনেছে নাটক দুটো দেখে। এই নাটক দুটো দেখেই অন্য নির্মাতারা মনে করেছেন, আমাকে দিয়ে কাজ করানো সম্ভব। এর পরই আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে মহামায়ার মতো নাটক।’ বললেন তিনি।
মীমের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যেটুকু সময় তিনি অভিনয় করলেন, তাতে তাঁর প্রাপ্তি কিছু মিলেছে কি?
‘অবশ্যই। প্রথমে আমার আছে জল ছবিতে অভিনয় করে আমি পেয়েছি মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। অনেক অনেক সম্মানের একটি পুরস্কারপ্রাপ্তিতে আসলে ভালো কাজের প্রতি আমার উৎসাহ বেড়ে যায় অনেক বেশি। আরেকটি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগটিও আমি অনেক বড় পাওয়া হিসেবে দেখছি, সেটি হলো আমার প্রাণের প্রিয়া। এখনো যখন ঢাকার বাইরে যাই, তখন ছেলেরা আমার এই ছবির গানের লাইন ধরে বলে, “কী জাদু করেছো তুমি বলো না…।” একজন অভিনয়শিল্পীর জীবনে এর চেয়ে আর বড় পাওয়া কী-ই বা থাকতে পারে?’
বড় পর্দায় কাজ করার স্বপ্ন নিয়েই মীম যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু তিনি এখন ব্যস্ত রয়েছেন ছোট পর্দায়। কেন?
‘এই কেনর উত্তর আসলে এককথায় দেওয়া সম্ভব যেমন নয়, তেমনি আবার অনেক কিছুই বলা সম্ভব হয় না। ভালো ছবিতে কাজ করার স্বপ্ন থাকে সবারই। সেই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। কাজ করেছি। আবার যদি সে রকম কাজ পাই, তবে করব। কিন্তু ছোট পর্দায় কাজ নিয়মিতই করতে চাই। পড়াশোনা শেষ করার পর হয়তো চাকরিবাকরি করতে পারি, তবে অভিনয়টা আমি ছাড়ছি না। কারণ, এখন আমার ধ্যানজ্ঞান— সবকিছুতেই অভিনয়।’
ইউনাটেটড নিউজ ২৪ ডট কম/ইউএন নিউজ