বুনো হাতির তান্ডবে ভারত সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় বেষ্টিত বকশীগঞ্জ ও  পার্শ্ববর্তী শ্রীবরদী উপজেলার ২৫টি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ আতঙ্কে দিন অতিবাহিত করছেন। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সীমান্তের গ্রামীণ জীবন। প্রতিবছর বন্যহাতির তান্ডবে হতাহতের ঘটনা ছাড়াও ক্ষতিগ্রস- হচ্ছে হাজার হাজার একর জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল। লন্ডভন্ড হচ্ছে ঘরবাড়ী। তছনছ হচ্ছে বন বাগানের বিপুল গাছপালা। অব্যাহত হাতির হামলায় জনমানুষের জীবন এখন চরম হুমকির মুখে।

গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতে মেঘালয় রাজ্যের সীমান- ঘেঁষে অবসি’ত বকশীগঞ্জ ও শ্রীবর্দী উপজেলার  মোট ২৫টি গ্রাম যথাক্রমে সাতানিপাড়া, গারোপাড়া, বালুঝরি, টিলাপাড়া, লাউচাপড়া, ডুমুরতলা, দিগলকোনা,হাতিবেড়কোনা,শোকনাথপাড়া, কনেকান্দি,চন্দ্রপাড়া, কর্ণঝোড়া,বাবলাকোনা,রাজারপাহাড়, ঝোলগাঁও, বালিজুড়ি, কোচপাড়া, রাঙ্গাজল, কাড়ামারা হারিয়েকোনা পাঁচমেঘাদল,গারোপাড়ায় বাঙালী ও হিন্দু গারো কোচ হাজংসহ বিভিন্ন গোত্র মিলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। উল্লেখিত এলাকায় বাংলাদেশে ও ভারতের ভূখন্ডে রয়েছে বিশাল বনভূমি। বাংলাদেশের বনাঞ্চল অপেক্ষাকৃত সমতল।

ভারতের গহীন বনাঞ্চল রয়েছে অগণিত বুনো হাতি। হাতির দল বেধেঁ সমতল ভূমিতে চলাফেরা ও আহার করতে সহজ মনে করে থাকে। তাই সময় অসময়ে বুনো হাতির পাল সীমান- পাড়ি দিয়ে ওইসব সমতল বনাঞ্চলের আবাসিক ও কৃষি প্রধান এলাকায় চলে আসে। পাহাড়ে বসবাসরত বাড়িঘর ফসলাদি জমি ও বিভিন্ন বাগানে প্রবেশ করে ধ্বংসলীলা চালায়। আবার ফিরেও যায় হাতির পাল। গত ১৫ বছর ধরে এসব বুনো হাতি তান্ডবলীলা চালিয়ে সীমান-বর্তী উল্লেখিত পাহাড়ি গ্রামগুলোতে কয়েক’শ ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। হাজার হাজার একর জমির ধান শাক সবজি ফসল খেয়ে এবং বাগানের গাছপালা দুমড়ে মুচড়ে সাবাড় করে চলেছে। বুনো হাতির আক্রমনে বালিজুরি গ্রামের হামির উদ্দিন বাবুল মিয়া, খ্রিষ্টানপাড়া গ্রামের ষ্টারসন, ঝুলগাও গ্রামের মজিবর ,সিরাজ, হাতিবর গ্রামরে বৃন্দাবন দাস, মাখনেরচর গ্রামের হাসান হাবিব বাঘারচর গ্রামের আবু তালেবসহ অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণ হারিয়েছে।

কয়েকশত মানুষ আহত হয়েছে। এদের মধ্যে কমপক্ষে ১৫ জন পঙ্গুত্ব বরন করে কষ্টসাধ্য জীবন যাপন করছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে কয়েক’শ পরিবার। ঝুলগাঁও গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, শাহজাহান ফিলিপ মারাকসহ অনেক গ্রামবাসীরা ইউনাইটেড নিউজ টয়েন্টিফোরকে জানান, বুনো হাতি ঢাক ঢোল পটকা ও আগুনকে ভয় করে। তাই এলাকাবাসী মশাল ও বন থেকে কুড়িয়ে আনা আবর্জনা জ্বালিয়ে হৈ হুলোড় করে বাঁশ দিয়ে পটকা বানিয়ে ঢাক ঢোল পিঠিয়ে হাতি তাড়ানো চেষ্টা করেন। কিন’ অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ওইসব কৌশল সফল করতে পারছে না পাহাড়িরা।

ফলে বুনো হাতির পাল বিনা প্রতিরোধে গ্রামে প্রবেশ করে জান মালের ক্ষতিসাধন করে চলেছে। সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, সীমান-বর্তী পাহাড়ি এলাকার মানুষ পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে এবং পাহাড়ের পাদদেশে চাষাবাদ করে কোনরকম জীবিকা নির্বাহ করে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, অস্বাস’্য, বঞ্চনা তাদের নিত্যসঙ্গী। এরওপর প্রায় বন্যহাতির আক্রমণে দিশেহারা করে দিয়েছে তাদের। হাতি আতঙ্কে অনেক জমি পতিত থাকে প্রতি বছর।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আবাদ করলেও সে ফসল তারা ঘরে তুলতে পারছে না। ফলে পাহাড়ি জনপদের মানুষগুলো হাতির সাথে যুদ্ধ করে করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বন্যহাতির সমস্যা স’ায়ী সমাধানের জন্য সরকারের হস-ক্ষেপ কামনা করছেন সীমান্তবাসী।

ছাইদুর রহমান, জামালপুর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here