প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ ধীরে ধীরে বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এক সময় এখানকার সবুজ বন-বনানী পশু-পাখির হাঁক-ডাকে থাকতো মুখরিত। পাখিদের গুঞ্জনে ঘুম ভাঙতো এখানকার মানুষের। আজ সেদিনগুলো হারিয়ে গিয়েছে। বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার জীববৈচিত্র্য। এজন্য নির্বিচারে বনজ সম্পদ উজাড়, অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটা এবং জুম চাষের নামে পাহাড়ে অগ্নিসংযোগকে দায়ী করেছেন পরিবেশবিদরা। রাঙামাটি পার্বত্য জেলার পাহাড়গুলো প্রতিনিয়ত বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে। বাসস্থান হারিয়ে হিংস্র হয়ে উঠছে বন্যপ্রাণীগুলো। এই জেলায় ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বন উজাড় ও অবৈজ্ঞানিক পন্থায় পাহাড়ে জুম চাষের কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। চাষাবাদের জমি ও বাড়িঘর তৈরির জন্য ক্রমাগতভাবে এসব বন ধ্বংস হচ্ছে। স্থানীয় দরিদ্র পাহাড়ি জনগোষ্ঠী জীবিকা নির্বাহের জন্য বাধ্য হয়ে পাহাড়ের কাঠ, বাঁশ নির্বিচারে কাটছে। ফলে পাহাড়গুলোর সবুজ অবয়ব ফ্যাকাসে হতে চলেছে। অনেক প্রজাতির পশু-পাখি হারিয়ে যাচ্ছে চিরতরে। এই পার্বত্য বনাঞ্চলগুলো একসময় ছিল হাতি, হরিণ, ছোট বাঘ, ভল্লুক, উল্লুক, বানর, হনুমান, গয়াল, বনবিড়াল, শিয়াল, বনমোরগ, ধনেশ, শকুন, ঘুঘু, শালিক, চড়াই, ময়না, টিয়া, বুলবুলি, ভৃঙ্গরাজ, দোয়েল, চিল, বাবুই, হলুদ পাখি, মাছরাঙ্গা, টুনটুনি, খঞ্জনা, বকসহ নানা ধরনের পশু-পাখির অভয়ারণ্য। কিন্তু এখন অনেক পশু-পাখির অস্তিত্বই আর নেই। বর্তমানে যেভাবে বন উজাড় হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এসব বন আর বন্য পশুপাখী শুধু রূপকথা, উপকথা আর ইতিহাসে ঠাঁই নেবে। এখনো রাঙামাটি জেলার বরকল, জুরাছড়ি ও লংগদু উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় বানর, অজগর সাপ, বন-রুই, হরিণের দেখা মিললেও এর সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। হাতির নিরাপদ যাতায়াতে জনবসতি স্থাপন ও পাহাড়ে জুম চাষের মাধ্যমে গাছপালা ধ্বংস করায় হাতি ওই এলাকায় প্রতিনিয়তই নেমে পড়ছে লোকালয়ে। সেখানে চালাচ্ছে তান্ডব লীলা। প্রশাসনিকভাবে জনসাধারনকে সচেতন না করার কারনে এখানে প্রতি বছরই হরিণ শিকারের ঘটনা ঘটে। ফলে জেলার সাথে সীমান্তবর্তী পার্শ্ববর্তী দেশের গভীর অরণ্যে পাড়ি জমিয়েছে বানরসহ অন্যান্য বন্য পশু-পাখির দল।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/আলমগীর মানিক/রাঙ্গামাটি