ডেস্ক রিপোর্ট::  প্রথম ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স ও পরে সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কর্মী হিসাবে বিমার টাকা মেরে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। টানা ১৯ বছরের প্রতারণা ও জালিয়াতি শেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে আটকে মামলার আসামি হয়েছেন এই দুই প্রতিষ্ঠানে কাজ করা মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী ও তার স্ত্রী মিসেস নাজনীন চৌধুরী।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দুদকের গাজীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. সেলিম মিয়া বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা দায়ের করেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ৫৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী ও তার স্ত্রী মিসেস নাজনীন চৌধুরীর সম্পদের তথ্য চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করা হয়। এরপর তারা ২০২৩ সালের ৫ মার্চ সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মোট ৪০ লাখ ৫১ হাজার ১৬০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩৭ লাখ ৩৪ হাজার ২৮৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ অবৈধ সম্পদের তথ্য পান অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। সেই কারণে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে, অনুসন্ধানকালে মো, শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর স্ত্রী নাজনীন চৌধুরীর নামে ৭১.৭৫ শতাংশ জমি, ১৫৪০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং চারতলার বিলাসবহুল বাড়িসহ চার কোটি ৭৬ লাখ সাত হাজার ১৬৯ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। মূলত শহিদুল ইসলাম চৌধুরী তার সম্পদের উৎস আড়াল করার উদ্দেশ্যে স্ত্রীর নামে এই বিপুল সম্পদ গড়েছেন বলে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।

তার স্ত্রী নাজনীন চৌধুরী নিজ নামের সম্পদের তথ্য গোপন করার উদ্দেশ্যে তার বাবার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় হেবা দলিল করিয়ে নিলেও দুদকের অনুসন্ধানে তা ভুয়া প্রমাণিত হয়। এতে করে নাজনীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে তিন কোটি ৫৪ লাখ ১৭ হাজার ১৬৯ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ চার কোটি ৭৬ লাখ সাত হাজার ১৬৯ অবৈধ সম্পদের অর্জনের অপরাধে অপর মামলা দায়ের করা হয়।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে গাজীপুরে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সে চাকরিতে যোগ দেন শহীদুল। তিন বছর বাদে ২০০০ সালে চলে যান সানলাইফ ইনস্যুরেন্সে। এখানেই থিতু হন দীর্ঘ সময়। ২০১৭ সালে তিনি যখন ১৯ বছরের চাকরিজীবনের ইতি টানছিলেন, তখন তাকে ঘিরে এলাকায় চলছিল বহু মানুষের অভিযোগ। বিমার টাকা সংগ্রহ করে অফিসে জমা না দেওয়া, পরিপক্ব বিমার পুরো অর্থ গ্রাহককে না বুঝিয়ে দেওয়াসহ অনেক অভিযোগ নিয়ে গ্রামছাড়া হন। এরপরে বিভিন্ন রাজনৈতিক আশ্রয়ে বিভিন্ন অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি।

 

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here