বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলামুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মাসুম, মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি :: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা সদরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনে সরকারি নীতিমালা লংঘন করে রাজনৈতিক প্রভাবে বহিরাগত ব্যক্তিকে সভাপতি করার নির্দেশর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

বিজ্ঞ আদালত বাদীপক্ষের প্রার্থনামোতাবেক কেন অস্থায়ী নিশেধাজ্ঞা প্রদান করা হইবেনা আগামী ১০ দিনের মধ্যে তার কারণ দর্শানোর জন্য বিবাদীদের প্রতি নোটিশ জারি করেছেন। আদালতের এ নোটিশ রোববার দুপুরে হস্তগত হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন মামলার ১নং বিবাদী উপজেলা শিক্ষা অফিসার।

মোরেলগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে দায়েরকৃত এ মামলার বাদী হচ্ছেন নিয়মতান্ত্রিকভাবে গঠিত ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত সভাপতি মো. আবু সালেহ হাওলাদার। মামলার মূল বিবাদীরা হলেন যথাক্রমে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আনিসুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মো. শাহ-ই আলম বাচ্চু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হোসনেয়ারা বেগম হাসি, যুবলীগ নেতা আসাদুজ্জামান বিপু ও মোকাবেলা বিবাদী করা হয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ।

মামলাসূত্রে জানাগেছে, মোরেলগঞ্জ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ১০৭ নং বারইখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ ২০১৬ সালে শেষ হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১১ সদস্য বিশিষ্ট ম্যানেজিং কমিটির  গঠন কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয়ের  সুপারিশক্রমে স্থানীয় বাসিন্দা ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বিএড কলেজের প্রভাষক বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ হিসেবে পরিচিত মো. আবু সালেহ হাওলাদার (এম.এ. বি.এড. এম.এড) কে ওই কমিটির বিদ্যোৎশাহী পুরুষ সদস্য হিসেবে মনোনীত করেন।

বিধান অনুযায়ী প্রধান শিক্ষিকা কমিটির নির্বাচিত ও মনোনিত সদস্যদের সমন্বয়ে গত ১৪/২/১৭ তারিখে এক সভা আহবান করে কমিটির সভাপতি ও সহসভাপতি পদের নির্বাচন সম্পন্ন করেন। ওই সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে শিক্ষাবীদ মো. আবু সালেহ হাওলাদারকে নবগঠিত কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সভাপতি ও সহসভাপতি পদের নির্বাচন সম্পন্ন করে বিধি মোতাবেক ১১ সদস্য বিশিষ্ট পুর্নাঙ্গ ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে তা অনুমোদনের জন্য উপজেলা শিক্ষা কমিটি বরাবরে প্রেরণ করেন প্রধান শিক্ষিকা ।

উপজেলা শিক্ষা কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আনিসুর রহমান গত ১০/৪/১৭ তারিখ এক স্বারকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ও মামলার ৪ নং বিবাদীকে অবগত করান যে, ২৯/৩/১৭ তারিখে শিক্ষা কমিটির সভার সিন্ধান্ত মোতাবেক ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করে ১১ জন সদস্যের মধ্যে ১০জন সদস্যকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং আসাদুজ্জামান বিপুকে সভাপতি হিসেবে প্রতিস্থাপন করে পূর্নাঙ্গ কমিটি দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হয় ।

মামলায় আরো বলা হয়েছে, উপজেলা শিক্ষা কমিটি’র সচিব উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষা কমিটি’র সভাপতি  উপজেলা চেয়ারম্যান স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে সভাপতি পদে বাদী আবু সালেহ হাওলাদারকে অনুমোদন না দিয়ে ওই কমিটির নির্বাচীত বা মনোনিত নয় এমন একজন বহিরাগতকে সভাপতি পদে প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দেন। যদিও সরকারি বিধি অনুযায়ী ওই আদেশ অন্যায় বেআইনী এবং বিধি বহির্ভূত।

কারণ উপজেলা শিক্ষা কমিটি’কে শুধুমাত্র গঠিত ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন করা না করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্যগণের নাম প্রতিস্থাপন পরিবর্তন, পরিবর্ধন সংকোচন বা সংযোজনের কোন এখতিয়ার বা ক্ষমতা শিক্ষা কমিটির নেই। মামলার ১/২ নং বিবাদীর চাপের মুখে ৪নং বিবাদী প্রধান শিক্ষিকা উক্ত বেআইনী আদেশ কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহন করায় বাদী বিষয়টি জানতে পেরে গত ১৮ এপ্রিল ওই আদেশের বিরুদ্ধে উপজেলা শিক্ষা অফিসে আপত্তি দাখিল করতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যানের দোহাই দিয়ে আপত্তি গ্রহনে অস্বীকার করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার। ৪নং বিবাদী প্রধান শিক্ষিকাও ১/২ নং বিবাদীর দপ্তরের সিন্ধান্ত এড়িয়ে কোন সিন্ধান্ত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ অবস্থায় উক্ত বেআইনী আদেশ কার্যকর হলে বিধিমতে সভাপতি পদে নির্বাচিত বাদী বেআইনীভাবে পদচ্যুত হয়ে অপুরনীয় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বিধায় ২০ এপ্রিল মোরেলগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে তিনি মামলাটি দায়ের করেন (মামলা নং-৮০/১৭)। বিজ্ঞ আদালত কেন অস্থায়ী নিশেধাজ্ঞা প্রদান করা হইবেনা আগামী ১০ দিনের মধ্যে তার কারণ দর্শানোর জন্য বিবাদীদের প্রতি নোটিশ জারি করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here